ভারতের রাজধানী দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জিতলে দুই বছরের মধ্যে দিল্লিকে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ মুক্ত করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, রবিবার (২৬ জানুয়ারি) ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস থাকলেও, এদিন নির্বাচনী প্রচার বাদ দেয়নি বিজেপি। ভোটের প্রচারে অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল আম আদমি পার্টিকে (আপ) ‘অবৈধ আমদানিওয়ালি পার্টি’ (অবৈধ আয়ের দল) হিসেবে বর্ণনা করেছেন ৷

বিজেপির দাবি, অবৈধ বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গাদের ভোটের ভিত্তিতে এতোদিন নির্বাচনে জিতেছে আম আদমি পার্টি।

আরো পড়ুন:

নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছেন না রাশমিকা

মৌলভীবাজারে ‘ভারতীয়দের কোপে’ বাংলাদেশির ‍মৃত্যু

রবিবার দিল্লির নরেলা বিধানসভা আসনে নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বিজেপি নেতা অমিত শাহ অভিযোগ করেন, দিল্লিতে আম আদমি পার্টির ১০ বছরের শাসনকালে অরবিন্দ কেজরিওয়াল ভোট পাওয়ার জন্য মিথ্যা প্রচার এবং দুর্নীতিতে লিপ্ত হওয়া ছাড়া আর কিছুই করেননি।

জনগণকে আম আদমি পার্টিকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে তাদের ‘দুঃশাসন’ শেষ করার আহ্বান জানিয়ে অমিত শাহ বলেন, “বিজেপি তার সমস্ত নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে। দিল্লিকে বিশ্বের এক নম্বর রাজধানী করবে। আগামী মাসের নির্বাচনে যদি বিজেপি জয়ী হয়, তাহলে দিল্লিকে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী এবং রোহিঙ্গাদের হাত থেকে মুক্ত করবে।”

এর আগে গত শনিবার এক জনসভায় অমিত শাহ দাবি করেছিলেন, আম আদমি সরকার তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন জেলা প্রশাসনের সহায়তায় অবৈধ বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছে। আর রবিবার তিনি বলেন, কেজরিওয়াল কেবল ভোট পাওয়ার জন্য মিথ্যা কথা বলেছেন ৷ আপ মানে ‘অবৈধ আমদানিওয়ালি পার্টি’।

গত ১০ বছরে কেজরিওয়ালের আপ সরকারের অধীনে দিল্লির শাসনব্যবস্থা খারাপ হয়েছে বলে অভিযোগ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপির ডবল-ইঞ্জিন সরকারের কারণে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলো এগিয়েছে বলে দাবি করেন অমিত শাহ ৷

তিনি আরও জানান, পুরো ভারত মোদিকে ‘আশীর্বাদ’ করেছে এবং আস্থা রেখে টানা তৃতীয়বার তাকে দেশের প্রধানমন্ত্রী করেছে। কারণ হিসাবে শাহের ব্যাখ্যা, “মোদি যা বলেন তাই করেন।”

প্রসঙ্গত, ৭০ আসনের দিল্লি বিধানসভায় আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ হবে। আর আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি ফলাফল প্রকাশ করা হবে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অব ধ ব

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ