বাস ভাড়া নিয়ে এক ছাত্রীকে হেনস্থার অভিযোগে বরিশাল নগরের রূপাতলী বাস টার্মিনাল অবরোধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীরা বাস টার্মিনালে চাঁদাবাজি বন্ধসহ ৮ দফা দাবী জানিয়েছেন। তবে সড়ক অবরোধের আগে ছাত্রী হেনস্থার প্রতিবাদ জানাতে গেলে বাস শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় হামলা পাল্টা হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। 

সড়ক অবরোধের কারণে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কসহ বিভাগের অভ্যন্তরীণ ৬টি রুটে সড়ক যোগাযোগ অচল হয়ে পড়েছে। আটকা পড়েছে শত শত যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত ৯টা) মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী পৌঁছেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দুপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছে। 

রূপাতলী বাস টার্মিনালের নিয়ন্ত্রক হলেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার। ৫ আগস্টের পর তিনি এ টার্মিনাল কেন্দ্রিক বাস মালিকদের সংগঠন বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি হন।  

শিক্ষার্থীদের দাবী, বিএম কলেজের এক ছাত্রী মঙ্গলবার ঝালকাঠি থেকে বাসে বরিশালে যাচ্ছিলেন। শিক্ষার্থী হিসাবে তিনি হাফ ভাড়া দেন। এ নিয়ে সুপারভাইজারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। 

ছাত্রী অভিযোগ করেন, তাকে হেনস্থা করেছে বাস শ্রমিকরা। তিনি ঘটনাটি বিএম কলেজে সহপাঠীদের জানান। বিকেলে বিএম কলেজের একদল শিক্ষার্থী এর প্রতিবাদ জানাতে রূপাতলী বাস টার্মিনালে যান। তখন দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা হয়। 

বাস শ্রমিকদের অভিযোগ, শিক্ষার্থীরা শ্রমিক ইউনিয়ন অফিস ও কয়েকটি বাস ভাঙচুর করেছে। 

শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ বলেন, সহপাঠী লাঞ্ছিত হওয়ায় প্রতিবাদ জানাতে তারা রূপাতলীতে যান। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছিলেন। টার্মিনালের কারো সঙ্গে কথা বলেননি। উল্টো শ্রমিকরা লাঠিসোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। এতে তিন শিক্ষার্থী আহত হন। 

বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি জিয়া উদ্দিন সিকদার বলেন, শিক্ষার্থীরা হামলা-ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ করে জনদূর্ভোগ সৃষ্টি করেছেন। তারা সেটা না করে মালিক সমিতিতে অভিযোগ দিলে সমিতি যথাযথ ব্যবস্থা নিত। 

শিক্ষার্থীদের ৮ দফা গুলো হচ্ছে- ছাত্রীকে হেনস্থাকারী বাস শ্রমিকদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচারের আওতায় আনা, হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া, বরিশাল বিভাগের সকল রুটে আইডি কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া কার্যকর, আর কোনো বাসে শিক্ষার্থী হেনস্তা হলে সংশ্লিষ্ট বাসের রুট পারমিট বাতিল ও কর্মচারীকে আইনের আওতায় আনা, দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস মালিক সমিতিতে নির্বাচিত কমিটি গঠন, আধুনিক বাস সেবা ও ডিজিটাল ট্রাফিক আইন বাস্তবায়ন, প্রশিক্ষিত চালক নিয়োগ এবং বাস টার্মিনালে সকল প্রকার চাঁদাবাজি বন্ধ করা। 

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থী ও বাস শ্রমিকদের মধ্যে কয়েক দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে রাখায় মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ। ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বর শ ল সড়ক অবর ধ সড়ক অবর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।

মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।

সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।

প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।

আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।

মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। 

মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট্টগ্রামে সাংবাদিক পরিচয়ে হোটেল কক্ষে তল্লাশি, সমালোচনা 
  • ভারতে কোনো বাংলাদেশি থাকলে উপযুক্ত চ্যানেলে পাঠাতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচনের জন‌্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি রয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • গাজীপুরে ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে কারখানার কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে মারধর, আটক ৪৩
  • তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
  • বিএনপি ও গণ অধিকারের মধ্যে উত্তেজনার জেরে পটুয়াখালীর ২ উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি
  • দীর্ঘ ছুটি শেষে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় ফিরছে মানুষ