নিজের অপহরণের নাটক সাজিয়ে স্ত্রীর কাছে মুক্তিপণ দাবি
Published: 29th, January 2025 GMT
নিজের হাত-পা বাঁধা ছবি স্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করেছিলেন মোহাম্মদ ইদ্রিস (৩৫)। স্ত্রীকে জানিয়েছিলেন, তাকে অপহরণ করা হয়েছে, মুক্তিপণ হিসেবে ৩০ লাখ টাকা না দিলে অপহরণকারীরা হত্যা করবে।
ইদ্রিসের পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি পুলিশকে জানালে তদন্তে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য—এটি অপহরণ নয়, বরং ইদ্রিসের সাজানো নাটক। মূলত, ভাইদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে ঋণ পরিশোধ এবং মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রামের মোহরার বালুর টাল এলাকা থেকে ইদ্রিসকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তাকে কক্সবাজারের পেকুয়া থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
মোহাম্মদ ইদ্রিসের বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার টৈটং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি মৌলভীপাড়া গ্রামে।
পুলিশ জানিয়েছে, ২৪ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে পেকুয়ার টৈটং বাজার থেকে আত্মগোপনে চলে যান ইদ্রিস। এরপর স্ত্রীর কাছে ফোন দিয়ে জানান, তিনি অপহৃত হয়েছেন। মুক্তিপণ হিসেবে ৩০ লাখ টাকা দিতে হবে, না হলে তাকে হত্যা করা হবে।
ইদ্রিসের পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে ৩ লাখ টাকা জোগাড় করার সিদ্ধান্ত নেন এবং সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে বিষয়টি জানান।
পুলিশ প্রথমে ইদ্রিসের মোবাইল ফোনের সর্বশেষ অবস্থান শনাক্ত করে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। ইদ্রিসের সন্ধান না পেয়ে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তার সঙ্গে যোগাযোগ আছে এমন এক জনকে শনাক্ত করা হয়; তিনি নবী হোছেন—ইদ্রিসের স্ত্রীর ছোট বোনের স্বামী।
পুলিশ নবী হোছেনকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, ইদ্রিসের অপহরণ নাটকের বিষয়ে আগেই জানতেন নবী হোছেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ চট্টগ্রাম নগরের মোহরা বালুর টাল থেকে ইদ্রিসকে উদ্ধার করে।
গতকাল রাতে পেকুয়া থানায় ইদ্রিসের সঙ্গে সাংবাদিকদের কথা হয়। তিনি বলেন, “আমি বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকার মতো ঋণ নিয়েছিলাম। পাওনাদাররা চাপ দিচ্ছিলেন। তাই, ভাইদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে ঋণ পরিশোধের পরিকল্পনা করেছিলাম। বেশি টাকা পেলে মালয়েশিয়া চলে যাওয়ার ইচ্ছাও ছিল।”
তিনি আরো বলেন, “আমি দোকান থেকে রশি কিনে অন্য এক জনের সহায়তায় নিজের হাত-পা বেঁধে ছবি তুলেছিলাম এবং তা স্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু ঘটনাটি এত বড় হয়ে যাবে ভাবিনি। আমি অনুতপ্ত।”
ইদ্রিসের পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আট মাস আগে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরার পর ইদ্রিস কর্মহীন হয়ে পড়েন। পাওনাদারদের চাপ সামলাতে না পেরে তিনি আবার মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
ইদ্রিসের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সিরাজুল মোস্তফা।
ঢাকা/তারেকুর/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
গাইবান্ধায় বাবা-মাকে মারধর করে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে অপহরণ, অভিযুক্ত আটক
বাড়ির ভেতর ঢুকে বাবা-মাকে মারধরের পর এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামারদহ ইউনিয়নের বেপারীপাড়ায় ঘটনাটি ঘটে। বিকেল ৫টার দিকে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার ও মূল অভিযুক্ত আটক করে পুলিশ।
অভিযুক্ত সঞ্চয় (২০) উপজেলার ফাঁসিতলা এলাকার মোঘলটুলী গ্রামের রাফিউল ইসলাম রাফির ছেলে।
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, মঙ্গলবার দুপুরে গোবিন্দগঞ্জ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরেন ওই শিক্ষার্থী। কিছুক্ষণ পর সঞ্চয়সহ ১৫-২০ জন লাঠি নিয়ে বাড়িতে হামলা চালায়। তারা ঘরের দরজা-জানালাসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এবং মালামাল লুট করে। এসময় বাধা দিতে গেলে হামলাকারীরা ওই শিক্ষার্থীর বাবা-মাকে মারধর ও কুপিয়ে আহত করে। পরে তারা শিক্ষার্থীকে টেনেহিঁচড়ে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায়।
আরো পড়ুন:
ধামরাইয়ে চালক-হেলপারকে মারধর করে তেলবাহী ট্রাক ছিনতাই
সিরাজগঞ্জে সহপাঠীদের মারধরে আহত এসএসসি পরীক্ষার্থীর মৃত্যু
পুলিশ বিকেল ৫টার দিকে পার্শ্ববর্তী কামারদহ ফেলুপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে চাঁন মিয়ার বাড়ি থেকে অপহৃত শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে। এসময় অভিযুক্ত সঞ্চয়কে আটক ও তার কাছে থাকা মোটরসাইকেল জব্দ করে পুলিশ।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর ভাষ্য, দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে যাওয়া আসার পথে তাকে উত্ত্যক্ত করাসহ বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছিলেন সঞ্চয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সঞ্চয়ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।
ঘটনাটি নিশ্চিত করে গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি বুলবুল ইসলাম বলেন, “খবর পেয়ে পুলিশ উদ্ধার অভিযান চালায়। একটি বাড়ি থেকে শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করা হয়। অভিযুক্ত সঞ্চয়কে আটক করা হয়েছে। মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।”
ঢাকা/মাসুম/মাসুদ