বহুল আলোচিত এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম (এস আলম) ও তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে থাকা ৩৬৮ কোটি ২৫ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ টাকা দামের ৫৮ একরের বেশি জমি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।

দুদকের পক্ষে উপ-পরিচালক আবু সাইদ এসব জমি ক্রোক করার জন্য আদালতে আবেদন করেন।

ক্রোক করা জমিগুলো হলো— চট্টগ্রামের ১৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় দশমিক ১৬৩৭ একর জমি, যার দাম ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। একই ওয়ার্ডে আরেকটি জমি, যার পরিমাণ দশমিক ১৩৫০ একর, দাম ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। চট্টগ্রামের ১ নম্বর পাথরঘাটা ইউনিয়নে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলমের নামে থাকা ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি, বাজারমূল্য ৩ কোটি ৫৪ লাখ ৭৯ হাজার ৫০০ টাকা। ওই ইউনিয়নেই দশমিক ৯০ একর জমি, যার দাম ৩৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকা এবং ১ দশমিক ২০ একর জমি, দাম ৬০ লাখ টাকা। পটিয়া উপজেলায় এস আলম কোল্ড স্টিল লিমিটেডের দশমিক শূন্য ৬ একর জমি, যার দাম ৩০ হাজার টাকা। পটিয়ার শিকলবাহা ইউনিয়নের এক কানি দুই কড়া জমি, যার দাম ২১ লাখ টাকা। একই এলাকায় দশমিক ২৮ একর জমি, যার দাম ১৪ লাখ টাকা; দশমিক ৪১৫০ একর জমি, যার দাম ২১ লাখ টাকা; দশমিক ২৬ একর জমি, যার দাম ১৩ লাখ টাকা; দশমিক ৩২ একর জমি, যার দাম ১৬ লাখ টাকা; দশমিক ৮০ একর জমি, যার দাম ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা; দশমিক ১৪ একর জমি, যার দাম ৮০ হাজার টাকা; শূন্য দশমিক ৬ একর জমি, যার দাম ৩০ হাজার টাকা; দশমিক ১৮৫০ একর জমি, যার দাম ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা; দশমিক শূন্য ৬ একর জমি, যার দাম ৩ লাখ; দশমিক ১৫ একর জমি, যার দাম ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা; দশমিক ৫৭৫০ একর জমি, যার দাম ২৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা; দশমিক ১২ একর জমি, যার দাম ৬০ হাজার টাকা এবং দশমিক শূন্য ৫ একর জমি, যার দাম ১২ হাজার টাকা। নারায়াণগঞ্জে স্যাভোলা অয়েল লিমিটেডের ১ দশমিক ৩৮৫০ একর জমি ও ২ হাজার বর্গফুটের সেমি পাকা বাড়ি, যার দাম ১২ কোটি ১৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা; ২ একর জমি, যার দাম ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা; দশমিক ৩৬৩৬ একর জমি, যার দাম ১ কোটি ২১ লাখ ১৯ হাজার টাকা; দশমিক ৩৪৬৯ একর জমি, যার দাম ১ কোটি ১৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা; ১ দশমিক ৮২৪৩ একর জমি, যার দাম ৬ কোটি ৮ লাখ ৯ হাজার টাকা; ৩ দশমিক ৮২৬৪ একর জমি, যার দাম ১২ কোটি ৭৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকা এবং ২ দশমিক ১৮৮৯ একর জমি, যার দাম ৭ কোটি ২৯ লাখ ৬৩ হাজার। ডেলটা অয়েল রিফাইনারি লিমিটেডের ১ দশমিক ২১৫০ একর জমি এবং ১৫০০ বর্গফুটের পাকা বাড়ি, যার দাম ৭ কোটি ২৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। দশমিক ১৭ একর জমি ও ৫০০ বর্গফুটের সেমি পাকা বাড়ি, যার দাম ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। দশমিক ৩৬৫০ একর জমি, যার দাম ৭৩ লাখ টাকা৷ ১ দশমিক ৬৩৫০ একর জমি, যার দাম ৬ কোটি ২৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সানম্যান টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের অবসরপ্রাপ্ত মেজর আব্দুল মান্নানের নামে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানার কেশবপুরে এক দশমিক ৮৯ একর জমি, যার দাম ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। ১ দশমিক ৪৬ একর জমি, যার দাম ২ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। এস আলম কোল্ড রোলড স্টিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান গনির নামে থাকা চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার শিকলবাহা এলাকার ৯ দশমিক ৪৩ একর জমি, যার দাম ১৫৩ কোটি ৬৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ৯ দশমিক ৪৩ একর জমি, যার দাম ৮২ কোটি ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। সাইফুল আলমের নিজ নামে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার শিকলবাহা এলাকায় ২৩ দলিলের ৪ দশমিক ৭০৭ একর জমি, যার দাম ৫ লাখ টাকা। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ছেলের কাছ থেকে কেনা গুলশানের-২ এর ১০ কাঠা বা ১৬ দশমিক ৫০ শতক জমি, যার দাম ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ইনহেরেন্ট ট্রেডিং অ্যান্ড ইমপ্লেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনসারুল ইসলামের নামে থাকা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের তেজতুরি বাজারের ৯০ দশমিক ৮৮ শতাংশ ও ৩ হাজার বর্গফুটের ১ তলা দালান, যার দাম ৫৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। ব্লাইন্ড লিমিটেডের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের আহসানুল আলমের নামে থাকা ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় ১ বিঘা বা ৩৩ শতাংশ জমি। 

ক্রোক করা মোট জমির পরিমাণ ৫৮ দশমিক ১৬৪৬ একর। এসব জমির মোট দাম ৩৬৮ কোটি ২৫ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ টাকা। 

দুদকের আবেদনে বলা হয়েছে, সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, সাইপ্রাস ও অন্যান্য দেশে ১ বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধাকালে অনেক সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব সম্পদ ক্রোক না করা হলে অন্যত্র স্থানান্তরের আশঙ্কা আছে।

ঢাকা/মামুন/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল খ ৫০ হ জ র ট ক ১ দশম ক এস আলম এল ক য় ২৯ ল খ আলম র

এছাড়াও পড়ুন:

মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের

এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।

চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।

টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর। 

গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।

দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।

সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত। 

শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।

মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।  

সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ