মুন্সিগঞ্জ সংলগ্ন চাঁদপুরের মোহনপুর এলাকায় মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলন নিয়ে দ্বন্দ্বে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ও গুলিবিনিময়ের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও একজন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন কয়েকজন। বৃহস্পতিবার রাতে মুন্সীগঞ্জ ও মোহনপুর সীমানাধীন চর আব্দুল্লাহপুর এলাকার মেঘনা নদীতে এ ঘটনা ঘটে। 

নিহতরা হলেন-চাঁদপুর মতলব থানার দশানি গ্রামের রিফাত (২৯) ও মতলব ভাষানচর গ্রামের রাসেল (৩০)। গুলিবিদ্ধ আইয়ুব আলীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। 

স্থানীয়রা জানায়, মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জ সদরের কালীরচর গ্রামে কানা জহির ও কিবরিয়া মিজি গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সদরের কালিরচর এলাকার কিবরিয়া মিজি ও তার লোকজন মুন্সীগঞ্জ-মোহনপুর সীমানাধীন চর বাংলাবাজার এলাকায় চাঁদপুর নৌ পুলিশের সহযোগিতায় ২৫ থেকে ২৬টি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। অপরদিকে কালিরচর গ্রামের বাসিন্দা কানা জহির গ্রুপও একইভাবে বালু উত্তোলনের চেষ্টা করলে বিরোধ দেখা দেয়। এরই জেরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার কানা জহির ও তার লোকজন প্রতিপক্ষ কিবরিয়া মিজির অবৈধ বালু মহালের পাশে ড্রেজার বসিয়ে বালু তুলতে গেলে কিবরিয়া মিজির বালু সিন্ডিকেটের সশস্ত্র সদস্য জনি, জসিম দেওয়ান মিছির বেপারী ও মোহনপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা তাদের ধাওয়া দেয় এবং গুলিবর্ষণ করে। এতে ট্রলার ও স্পিডবোটে থাকা রিফাত, রাসেল ও স্পিডবোট চালক আইয়ুব আলী গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাদেরকে উদ্ধার করে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে রিফাত ও রাসেলের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত আইয়ুব আলীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। 

এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মাসুদ হোসেন জানিয়েছেন, রাত ৮ টার দিকে তিনজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। এদের মধ্যে দুইজন হাসপাতালে আনার আগেই মারা গেছে। আরেকজন গুলিবিদ্ধ আহত ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি এম সাইফুল আলম বলেন, রিফাত এবং রাসেল নামে দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বালু উত্তোলন নিয়ে দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে এ ঘটনা ঘটছে। এ ঘটনায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

মুন্সীগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিল্লাল হোসেন বলেন, গোলাাগুলিতে ২ জন নিহত হয়েছে। তবে ঘটনাটি চাঁদপুরের মোহনপুর এলাকার মেঘনা নদীতে। তাই আমরা বেশি কিছু বলতে পারবো না।

তবে চাঁদপুর নৌ-পুলিশের পুলিশ সুপার মুশফিকুর রহমান বলেন, ঘটনাটি আমার এলাকার মেঘনাবক্ষে ঘটেনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ঘর ষ ম ঘন র এল ক র এ ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

‘জামাই-শ্বশুরের’ দোকানে চা–পান করতে আসেন দূরের লোকজনও

কবির হোসেন (৩৬) ও তাঁর শ্বশুর সোলেমান মোল্লা (৫৫) মিলে বছর পাঁচেক আগে ছোট্ট একটি চায়ের দোকান দেন। জামাতা-শ্বশুরের যৌথ অর্থায়ন ও ব্যবস্থাপনায় চলছে চায়ের দোকানটি। দুজনে মিলে প্রতিদিন গড়ে বিক্রি করেন প্রায় ৩০০ কাপ দুধ-চা। প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার টাকার চা বিক্রি হয় দোকানটিতে।

নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রতিদিন এখানে ‘খাঁটি দুধের চা’ পান করতে আসেন। গাভীর দুধ দিয়ে জামাতা-শ্বশুরের হাতের পরম যত্নে বানানো সুস্বাদু ওই দুধ-চা স্থানীয় লোকজনের কাছে বেশ সমাদৃত। দূর থেকেও অনেকে আসেন চা–পান করতে। স্থানীয়ভাবে এটি ‘জামাই-শ্বশুরের’ চায়ের দোকান হিসেবে পরিচিত। দোকান থেকে উপার্জিত আয় দিয়েই চলছে তাঁদের সংসার।

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদরের কলেজগেট এলাকায় চায়ের ওই দোকানের অবস্থান। জামাতা কবির হোসেনের বাড়ি উপজেলার পৈলপাড়া গ্রামে। কবিরের শ্বশুর সোলেমান মোল্লার বাড়ি উপজেলার নবকলস গ্রামে।

সম্প্রতি এক সকালে ওই চায়ের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ভিড়। ছোট্ট পরিসরে সাজানো টুল-টেবিলে বসে চা–পান করতে করতে আড্ডা দিচ্ছেন তাঁরা। রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা ও তর্ক চলছে সেখানে। ক্রেতাদের চা পরিবেশনায় ব্যস্ত শ্বশুর-জামাতা।

কাজের ফাঁকে কথা হয় তাঁদের সঙ্গে। কবির হোসেন বলেন, তাঁর একমাত্র শ্যালক মানসিক প্রতিবন্ধী। তাঁর শ্বশুরের আর কোনো ছেলে না থাকায় তাঁকেই (কবির) ছেলে মনে করেন তিনি। তাঁর বাবা মারা গেছেন অনেক আগে। এ জন্য শ্বশুরকেই বাবার আসনে বসিয়েছেন। পাঁচ বছর আগে দুজনে মিলে ভাড়া করা এই চায়ের দোকানটি দিয়েছেন। নিজে সাতটি গাভী পালনপালন করেন। ওই গাভীর দুধ দিয়ে চা তৈরি করে বিক্রি করেন তাঁরা। তিনি ও তাঁর শ্বশুর পালা করে দোকানে বসেন এবং চা বিক্রি করেন। উপজেলা সদর ও আশপাশের এলাকা ছাড়াও চাঁদপুর জেলা শহর ও মতলব উত্তর উপজেলা থেকেও লোকজন এই দোকানে আসেন চা–পান করতে।

ক্রেতাদের হাতে দুধ-চা তুলে দিচ্ছেন কবির হোসেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মেঘনায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আগামীকাল
  • ‘জামাই-শ্বশুরের’ দোকানে চা–পান করতে আসেন দূরের লোকজনও