‘অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন’ প্রতিবেদন প্রকাশ
Published: 31st, January 2025 GMT
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় চলতি সপ্তাহে ‘অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন ২০২৪’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশনের (এএ) সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়েছে।
এ প্রতিবেদনে ২০২৪ সালে অর্জিত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির বিবরণ আছে। পাশাপাশি বাংলাদেশে জলবায়ুজনিত দুর্যোগের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি থেকে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষিত রাখতে অর্থায়ন ও কাভারেজ ঘাটতি মোকাবিলার জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন দুর্যোগের প্রভাব কমাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। ২০২৪ সালের প্রধান অর্জনগুলোর মধ্যে আছে:
• বাংলাদেশ সরকার জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাঠামোর সঙ্গে অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন (এএ) আরো একীভূত করেছে, যার মধ্যে ২০১৯ সালে এটি দুর্যোগবিষয়ক স্থায়ী আদেশে (SOD) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
• ২০২৪ সালে ১৫টি অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন (এএ) কার্যকর করা হয়েছে, যা ২০টি জেলাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং চারটি প্রধান বিপর্যয়ের সময়—বর্ষার বন্যা, আকস্মিক বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং তাপপ্রবাহ—প্রায় ৪ লাখ ৩০ হাজার মানুষের কাছে পৌঁছেছে।
• বহুপক্ষীয় অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপ (AA TWG) গঠন করা হয়েছে, যা জাতীয় অগ্রাধিকারের সাথে আরো সুসংহত হয়েছে।
• অ্যান্টিসিপেটরি পরিকল্পনায় এল নিনো পূর্বাভাস ও অন্যান্য পূর্বাভাসমূলক মডেল যুক্ত করা হয়েছে, যা সময়োচিত ও লক্ষ্যভিত্তিক প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করেছে।
• অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন কার্যক্রমের জন্য মোট ১০.
এই প্রতিবেদন সম্পর্কে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান বলেছেন, “এই প্রতিবেদনটি অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশনের মূল শিক্ষা, প্রভাব এবং প্রসারের সুযোগ তুলে ধরেছে। ২০২৪ সালে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছি, যা অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশনের গুরুত্ব প্রমাণ করেছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের আগে নগদ সহায়তা দিয়ে আমরা উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর ক্ষয়-ক্ষতি কমিয়েছি, জীবিকা সুরক্ষিত রেখেছি এবং মানুষের জন্য জরুরি সম্পদ নিশ্চিত করেছি। একইভাবে, জুলাই মাসের বন্যা ও স্থানীয় দুর্যোগের সময় অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশনের সহায়তা বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রতিরোধে সহায়ক হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশনের কার্যক্রম আরো সম্প্রসারণ করে আরো দুর্যোগ মোকাবিলা করা, আগাম সতর্কতামূলক টুল উন্নতকরণ এবং কমিউনিটি লেভেলে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।”
এই অর্জন সত্ত্বেও প্রতিবেদনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাটতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন। ২০২৫ সালের জন্য একটি বড় অর্থায়ন ঘাটতি রয়ে গেছে—প্রয়োজনীয় ৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে এখনো অর্ধেকের বেশি অর্থের যোগান নিশ্চিত করা যায়নি। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্থায়নের প্রয়োজন বর্ষার বন্যার জন্য (২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার), ঘূর্ণিঝড়ের জন্য (১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) এবং আকস্মিক বন্যার জন্য (৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। এছাড়া, ২০২৪ সালে প্রয়োজনীয়তার মুখোমুখি ৫৪ শতাংশের বেশি পরিবার সহায়তা পায়নি, যেখানে আকস্মিক বন্যার ক্ষেত্রে ৮৮.২ শতাংশ কাভারেজ ঘাটতি ছিল। কাভারেজ সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা এখনো অত্যন্ত জরুরি।
প্রতিবেদনটি ২০২৫ সালে বাড়তে থাকা ঝুঁকির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশনের অব্যাহত প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। এটি কাভারেজের জন্য ২৩টি জেলা চিহ্নিত করেছে। ৪.১ মিলিয়নের বেশি পরিবার বড় ধরনের বিপদে পড়ার আশঙ্কায় আছে, যার মধ্যে ২.৭ মিলিয়ন পরিবার উল্লেখযোগ্য প্রভাবের শিকার হতে পারে। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য প্রতিবেদনটি ঝুঁকি পুলিং, অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন বীমা এবং বহু বছরের অর্থায়ন প্রতিশ্রুতি অনুসন্ধানের পরামর্শ দেয়, যাতে দীর্ঘমেয়াদী টেকসইতা নিশ্চিত করা যায়।
ঢাকা/হাসান/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন শ চ ত কর অ য কশন র ২০২৪ স ল জন য ত র জন য ত কর ছ
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৪ শতাংশ
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল বাবদ ৩২১ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-মার্চ) ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ২৫৭ কোটি ডলার। সেই হিসেবে এ বছর বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ। এমনকি চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে গত অর্থবছরের কাছাকাছি ঋণের সুদাসল পরিশোধ হয়ে গেছে।
বিদেশি ঋণ-অনুদান পরিস্থিতির ওপর গতকাল বুধবার প্রকাশিত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বিদেশি ঋণ বাবদ পরিশোধের মধ্যে আসলের পরিমাণ ২০১ কোটি ডলার। সুদ বাবদ ১২০ কোটি ডলার পরিশোধ হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ২৫৭ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে ৬৪ কোটি ডলার বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে।
ইআরডির একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আগ্রাসী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় পরিণাম চিন্তা না করে বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হারের তারতম্য বাড়াসহ নানা কারণে এখন বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে দেশে মোট প্রায় ৪৮১ কোটি ডলার সমপরিমাণ বিদেশি ঋণ-অনুদান এসেছে। এ সময়ে ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হয়েছে অর্থছাড়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের সমান। এদিকে গত জুলাই-মার্চ সময়ে ৩০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ, যা গতবারের একই সময়ে পাওয়া প্রতিশ্রুতির অর্ধেকের কম।
গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৭২৪ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল। জুলাই-মার্চ সময়ে সবচেয়ে বেশি ১২২ কোটি ডলার ছাড় করেছে এডিবি। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক ১০৭ কোটি ডলার ও জাপান ৮৯ কোটি ডলার দিয়েছে।