বদলি বাণিজ্যে ড্যাব নেতারা সাড়ে ৩ হাজার চেয়ার বদল
Published: 1st, February 2025 GMT
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ছয় মাস পেরোলেও শৃঙ্খলা ফেরেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। নিয়মিত কাজের বাইরে বিভিন্ন পর্যায়ে বদলি-পদায়ন এখনও চলছে। ৫ আগস্টের পর প্রতিদিন স্বাস্থ্যের বিভিন্ন পদে আসছে নতুন মুখ। গত ছয় মাসে বদলি ও পদায়ন পেয়েছে ঝড়ের গতি। এ সময়ে ৩ হাজার মেডিকেল অফিসার ও ৫০০ কর্মচারীর চেয়ার রদবদল করা হয়েছে। এত স্বল্প সময়ে অতীতে এমন বদলি হয়নি অধিদপ্তরে। বদলি হওয়া অনেক চিকিৎসক জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কর্মস্থলে যোগ দেননি। নতুন করে উপজেলা পর্যায় থেকে আওয়ামী লীগপন্থি চিকিৎসকদের ঢাকায় আনা হচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ডে উপজেলা পর্যায়ে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা।
এই অস্বাভাবিক বদলিকে কেন্দ্র করে ড্যাব নেতা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর একটি চক্র অর্থ লেনদেন করেছে। রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার করা এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটির অনুসন্ধানে অধিদপ্তরের চার কর্মকর্তা ও পাঁচ কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতা মিলেছে।
নীতিনির্ধারক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মানুষের সেবা নিশ্চিত, কাজে গতি ফেরাতে এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত স্বাস্থ্য খাত গড়ে তুলতে এই বদলি। এখন হাসপাতালে শৃঙ্খলা ফেরাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তবে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে মেডিকেল অফিসারের মধ্যে বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মেডিকেল অফিসার ডা.
এ ছাড়া কর্মচারীদের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পার-২-এর সেকশন অফিসার সোহেল রানা, হাফিজুর রহমান, রেজাউল ইসলাম, জিয়াউল হক ও আমিনুল হকের বদলি বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা মিলেছে। এসব বদলিতে ২ থেকে ৫ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই পাঁচজনের কেউই বদলি বাণিজ্যের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
এ বিষয়ে মেডিকেল অফিসার ডা. ফারুক হোসেন সমকালকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বদলির সঙ্গে আমি সংশ্লিষ্ট ছিলাম। বঞ্চিতদের সুযোগ দিতে বদলিগুলো করা হয়েছে। যে কারণে তালিকায় আমার নাম আসতে পারে। আর্থিক সুবিধা নেওয়ার বিষয়টি মিথ্যা।
ডা. মাহবুব আরেফিন রেজানুর রঞ্জু বলেন, বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের বদলির জন্য সুপারিশ করেছি। আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি সত্য নয়, এটি অপপ্রচার।
অভিযোগের বিষয়ে ডা. মনোয়ার সাদাত বলেন, আমরা স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সব বদলি করেছি। এখানে আর্থিক লেনদেনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি। মেডিকেল অফিসার ডা. মেহেদি হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া মেলেনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতাকর্মীর দখলে ছিল স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্বপূর্ণ পদ। সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর অধ্যক্ষ, সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, সিভিল সার্জন, জেলা বা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালকের পদে ছিলেন মূলত স্বাচিপের নেতা, সদস্য ও অনুসারীরা। এসব পদ থেকে তাদের সরানো হয়েছে। এ নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতপন্থি চিকিৎসকদের দ্বন্দ্ব এখনও চলমান। বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল বা ইনস্টিটিউটের গুরুত্বপূর্ণ পদ নিয়ে বিরোধ চলছে।
কর্মস্থলে অনুপস্থিত আওয়ামী লীগপন্থিরা
আওয়ামী লীগপন্থি অধিকাংশ চিকিৎসক এখনও কর্মস্থলে যোগদান করেননি। কয়েকজন চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। আবার কাউকে ওএসডি করা হয়েছে। কারও কর্মস্থলে যোগ দিতে বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হয়েছে বা হচ্ছে। যেমন, রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট থেকে একজন সহকারী অধ্যাপককে রংপুর মেডিকেল কলেজে বদলি করা হয়। রংপুর মেডিকেলের কিছু চিকিৎসক প্রকাশ্য ঘোষণা দেন, ঢাকা থেকে বদলি হওয়া চিকিৎসককে কাজে যোগ দিতে দেবেন না। পরে তাঁকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে বদলি করা হয়। সেখানেও তাঁকে যোগদানে বাধা দেওয়া হচ্ছে। একই ঘটনা ঘটেছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন অধ্যাপকের ক্ষেত্রে। ওই অধ্যাপককে বদলি করা হয় যশোরে। যশোর থেকে একদল চিকিৎসক ঘোষণা দিয়ে এর বিরোধিতা করেন। আওয়ামী লীগপন্থি অনেক চিকিৎসক আবার ঢাকায় আনা হচ্ছে টাকার মাধ্যমে। এমনই এক চিকিৎসক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহীদ। তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে (মিটফোর্ড হাসপাতাল) কাজ করতেন। বিভিন্ন সময় বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের মারধর করেছেন তিনি। জুলাই বিপ্লবের পর তাঁকে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়। পাঁচ মাস পর তাঁকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়েছে। এখানেও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে মোহাম্মদ শাহীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কর্মস্থলে যোগ দিতে বিশেষ বার্তা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বদলি করা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদায়িত কর্মস্থলে যোগদানের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এমনকি বিনা ব্যর্থতায় ছাড়পত্র গ্রহণ ও যোগদান সম্পন্নের প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এ বি এম আবু হানিফ। পাশাপাশি পরিস্থিতি উত্তরণে ৯টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর পর কিছু চিকিৎসক কর্মস্থলে যোগ দিলেও এখনও একটি বড় অংশ কর্মস্থলে যোগ দেননি।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে সারাদেশের সরকারি হাসপাতালে সুচিকিৎসা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা রয়েছে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম সমকালকে বলেন, বদলি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত যেসব ব্যক্তির নাম এসেছে, তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রণালয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বদল ম ড ক ল কল জ চ ক ৎসক আর থ ক পর য য় আওয় ম ব এনপ র বদল সরক র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
স্বপ্নে হলো দেখা
কারও স্বপ্নে আপনি প্রবেশ করেছেন বা অন্য কেউ আপনার স্বপ্নে এসেছেন, তাও তখন, যখন আপনি স্বপ্নে নিজের ইচ্ছায় পরিচালিত হচ্ছেন– এমনটা কি কখনও ভেবেছেন? বিজ্ঞানীদের দাবি– একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে এমনটিই করেছেন তারা, যেখানে দু’জন মানুষের মধ্যে স্বপ্নের ভেতরে যোগাযোগ সম্ভব হয়েছে। এমনটি সত্যি হয়ে থাকলে এটিই হবে প্রথমবারের মতো ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখার সময় একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের প্রমাণ– যা এখনও বিজ্ঞানের কাছে এক রহস্য।
ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক নিউরোটেক কোম্পানি রেমস্পেস, যারা মূলত লুসিড ড্রিমিং (স্বপ্নের মধ্যে সচেতন থাকা) ও ঘুমের বিকাশ নিয়ে কাজ করে। তারা জানিয়েছে, ইতোমধ্যে দু’বার দু’জন ব্যক্তিকে লুসিড ড্রিমে প্রবেশ করিয়ে একটি সাধারণ বার্তা আদান-প্রদান করাতে পেরেছে।
কল্পকাহিনির মতো এক স্বপ্নপরীক্ষা
রেমস্পেসের গবেষকরা দাবি করেন, তারা এমন এক প্রযুক্তি তৈরি করেছেন; যার মাধ্যমে দু’জন ব্যক্তি লুসিড ড্রিম অবস্থায় একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন। স্বপ্ন এখনও মানবতার জন্য এক বিশাল রহস্য। ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্কে বিভিন্ন উজ্জ্বল ভাবনা, দৃশ্য, অনুভূতি ও কল্পনা গঠিত হয়। আমরা প্রায় সবাই স্বপ্ন দেখি, যদিও ঘুম ভাঙার পর তা মনে থাকে না। বিজ্ঞানীরা বলেন, স্বপ্নের মাধ্যমে মস্তিষ্ক আমাদের অনুভূতি ও চিন্তা প্রক্রিয়া করে, স্মৃতি দর্শন করে এবং বাস্তব জীবনে এর প্রস্তুতি নেয়।
স্বপ্নের মাধ্যমে যোগাযোগ
রেমস্পেসের দাবি, গত ২৪ সেপ্টেম্বর, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা নিজ নিজ বাড়িতে ঘুমাচ্ছিলেন, তখন রেমস্পেসের তৈরি বিশেষ যন্ত্র ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে দূর থেকে তাদের মস্তিষ্কের তরঙ্গ, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা, হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস রেকর্ড করে। যখন তাদের সার্ভার শনাক্ত করে যে, একজন অংশগ্রহণকারী লুসিড ড্রিমে প্রবেশ করেছে, তখন তারা একটি র্যানডম শব্দ তৈরি করে সেটি কানে দেওয়া ইয়ারবাডের মাধ্যমে তাকে শুনিয়ে দেয়। কোম্পানি শব্দটি প্রকাশ করেনি– এটি শুধু ওই ব্যক্তি জানতেন এবং স্বপ্নে পুনরায় উচ্চারণ করেন বলে দাবি করা হয়েছে। এরপর সেই প্রতিক্রিয়া সার্ভারে সংরক্ষণ করা হয়। আট মিনিট পরে, দ্বিতীয় অংশগ্রহণকারী লুসিড ড্রিমে প্রবেশ করলে, সার্ভার থেকে তাঁকে সেই রেকর্ডকৃত বার্তা পাঠানো হয়, যা তিনি ঘুম থেকে উঠে বলেন এভাবেই স্বপ্নে প্রথমবারের মতো একটি ‘যোগাযোগ’ সম্পন্ন হয়। রেমস্পেস জানায়, ‘আমরা একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক অর্জন করেছি, এতে লুসিড ড্রিমের মাধ্যমে মানবযোগাযোগ ও সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।’
লুসিড ড্রিম কী?
লুসিড ড্রিম তখন হয়, যখন কোনো ব্যক্তি স্বপ্ন দেখার সময় সচেতন থাকেন যে, তিনি স্বপ্ন দেখছেন। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক জানায়, এটি সাধারণত ঘুমের ‘র্যাপিড আই মুভমেন্ট’ ধাপে ঘটে, যেখানে সবচেয়ে প্রাণবন্ত স্বপ্ন দেখা যায়। এ অবস্থায় মানুষ নিজের ইচ্ছেমতো স্বপ্নে কাজ করতে পারেন, পরিকল্পিতভাবে কিছু করতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল চৌধুরী বলেন, ‘যে কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো– যে তথ্যগুলো পাওয়া যাচ্ছে, তা কতটা নির্ভরযোগ্য। অর্থাৎ, এই গবেষণা অন্য কেউ অন্য কোনো জায়গায় করলে একই ফল দেবে কিনা। ঘুমের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়টা নিশ্চিত হতে আরও গবেষণার দরকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, মোটা দাগে ঘুমের দুইটা ভাগ আছে– এক. ননরেম ঘুম, যখন আমাদের চোখের মণি নড়ে না; দুই. রেম ঘুম, এ পর্বে আমাদের চোখের মণি নড়াচড়া করে। এ সময়ে মানুষ স্বপ্ন দেখে। এই স্বপ্নও দুই রকমের। লুসিড ড্রিম; যে স্বপ্নগুলো একদম বাস্তবের মতো জলজ্যান্ত। এমন এক স্বপ্ন যা দেখার পর ঘুম থেকে উঠে মনে হবে আসলেই এমনটি ঘটেছে, এটি বাস্তব। আরেকটি স্বপ্ন হলো নন লুসিড ড্রিম। এ স্বপ্নগুলো অবাস্তব। ঘুম ভাঙার পর বেশির ভাগ সময়েই আমরা স্বপ্নের কথা মনে করতে পারি না। লুসিড ড্রিমের ক্ষেত্রে আমরা তা মনে রাখতে পারি।’
প্রথম পরীক্ষার সাফল্যের পর, রেমস্পেসের সিইও মাইকেল রাদুগা (৪০) দাবি করেন, গত ৮ অক্টোবর আরও দু’জনের সঙ্গে একই ধরনের যোগাযোগ সম্ভব হয়। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আগে স্বপ্নে যোগাযোগ ছিল বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি, আগামী দিনে এটা এতটাই স্বাভাবিক হয়ে যাবে যে, আমাদের জীবনে এটি ছাড়া কল্পনাই করা যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, র্যাপিড আই মুভমেন্ট বা আরইএম ঘুম এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়, লুসিড ড্রিম আগামী দিনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পর বড় শিল্প হতে যাচ্ছে।’
যদিও রেমস্পেস এখনও জানায়নি তাদের প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে, তবে তারা সম্প্রতি ফেসবুকে জানিয়েছে, ‘লুসিড ড্রিমে যোগাযোগ’ নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রস্তুত হয়েছে এবং তা একটি বৈজ্ঞানিক জার্নালে পর্যালোচনার জন্য জমা দেওয়া হয়েছে– প্রকাশ হতে সময় লাগবে দুই থেকে ছয় মাস। তবে এখনও এই প্রযুক্তির কোনো বাহ্যিক বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনা হয়নি এবং অন্য কেউ এ পরীক্ষা পুনরাবৃত্তি করতে পারেননি।
রাদুগা যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম আমেরিকান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনকে বলেছেন, তাঁর প্রত্যাশা– এ ধরনের প্রযুক্তি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে মোবাইল ফোনের মতো সাধারণ হয়ে যাবে। ‘মানুষ নিজেদের জীবন এসব ছাড়া কল্পনা করতে পারবে না, কারণ এটি তাদের জীবনকে আরও উজ্জ্বল, আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলবে। এটি মানুষের জীবনমান এমনভাবে বাড়িয়ে দেবে যে, তারা এটি ছাড়া নিজেদের কল্পনাই করতে পারবে না। আমাদের শুধু এগুলো উন্নত করতে হবে– এটি শুধু সময়ের ব্যাপার।’
২০০৭ সালে রাশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় রেমস্পেস এবং ছয় মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হয়, এখন লুসিড ড্রিমিংয়ে অভিজ্ঞ বা আগ্রহী নতুন অংশগ্রহণকারীদের খুঁজছে।
স্বপ্ন-যোগাযোগের ভবিষ্যৎ
ঘুমের মধ্যে মানুষের যোগাযোগ একসময়ে নিছক কল্পবিজ্ঞান মনে হতো। এখন বিজ্ঞান এটিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। কল্পনা করুন– হাতের ফোনে মেসেজ না পাঠিয়ে, সরাসরি কারও স্বপ্নে ঢুকে তাঁর সঙ্গে ঘুমের মধ্যে সময় কাটানো, কথা বলা যাচ্ছে।
এই ভাবনা যেন স্বপ্নের মতো। ইতোমধ্যে কিছু কোম্পানি মানুষের চেতনা একটি বিকল্প পরিবেশে স্থানান্তরের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। একবার তা সফল হলে, সম্ভাবনার কোনো শেষ থাকবে না– মানবসভ্যতার বিবর্তন নতুন ধাপে প্রবেশ করবে।
লুসিড ড্রিমের মাধ্যমে নানারকম প্রয়োগ সম্ভব– শরীরগত সমস্যা সমাধান থেকে শুরু করে দক্ষতা অর্জন পর্যন্ত। আগের এক গবেষণায় রেমস্পেস দেখিয়েছে, মুখের পেশিতে সূক্ষ্ম সাড়া থেকে স্বপ্নে উচ্চারিত শব্দ শনাক্ত করা সম্ভব। এখান থেকেই ‘রেমিও’ নামে এক স্বপ্ন-ভাষার জন্ম, যা সেন্সরের মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়।
লুসিড ড্রিমে যে র্যানডম শব্দ শোনানো হয় অংশগ্রহণকারীদের, সেখানে ‘রেমিও’ স্বপ্ন-ভাষা ব্যবহার করা হয়। রেমস্পেস জানায়, এই সাফল্য এসেছে পাঁচ বছরের গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়নের পর। গবেষকরা প্রথম পরীক্ষার পর থেকে প্রতিটি পর্যায়ে প্রযুক্তি আরও উন্নত করেছেন। এবার তাদের লক্ষ্য আরও বড়– লুসিড ড্রিমে রিয়েল-টাইম যোগাযোগ। যদিও এটি অনেক জটিল, গবেষকদের আশা, আগামী কয়েক মাসেই তারা সফল হবেন।
শেষ কথা
যেখানে স্বপ্নে যোগাযোগ এতদিন ছিল সায়েন্স ফিকশন সিনেমা বা উপন্যাসের বিষয়; এই পরীক্ষা সেটিকে বাস্তবের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। যদি অন্যান্য বিজ্ঞানী ও প্রতিষ্ঠান একে যাচাই করে, তবে এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ধরনই বদলে দিতে পারে– যেখানে ঘুমের মাঝেও আমরা অন্যের সঙ্গে কথা বলতে পারব। এখনই অতি উত্তেজিত না হয়ে সতর্ক আশাবাদী হওয়াই ভালো– প্রযুক্তিটির সাফল্য এখনও গবেষণাগারে পর্যালোচনার অপেক্ষায়; তাতেও একে পুরোপুরি বাস্তব করতে দশককাল লেগে যেতে পারে। v