বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বিভিন্ন হলের ফান্ড থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ইবি শাখার বিরুদ্ধে। তবে ভয়ে এতদিন মুখ খুলতে পারেননি কেউ। সম্প্রতি এমন অভিযোগ তুলেছেন, সেই সময়ে হলে দায়িত্ব পালনকারী প্রভোস্টরা। বিভিন্ন দিবস ও প্রোগ্রামের নামে সংগঠনটির নেতাদের চাপে পড়ে চাঁদা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হতো বলে জানা গেছে।

দীর্ঘদিন কমিটিবিহীন থাকার পর ২০২২ সালে জুলাই মাসে ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতকে সভাপতি ও নাসিম আহমেদ জয়কে সাধারণ সম্পাদক করে ২৪ সদস্যের কমিটি দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। কমিটি গঠনের মাস না যেতেই বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও দিবসের নামে হল ফান্ড থেকে চাঁদা নেওয়া শুরু করে। প্রভোস্ট কাউন্সিলের মিটিংয়ে ছাত্রলীগকে হল ফান্ড থেকে চাঁদা দিতে প্রভোস্টদের নির্দেশ দেওয়া হতো। এমনকি, বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে মিটিংয়ে রেখে এ নির্দেশনা দিতো প্রভোস্ট কাউন্সিল। ফলে সরাসরি বিরোধিতা করতে পারতেন না প্রভোস্টরা। এ ছাড়া কেউ বিরোধিতা করলে বিভিন্নভাবে হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হতো বলে অভিযোগ রয়েছে।

হলের বিভিন্ন বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের চাপে পড়ে প্রশাসনের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সাবেক প্রভোস্ট অধ্যাপক ড.

মঞ্জুরুল হক।

অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘‘দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্ন কাজে ছাত্রলীগের সাথে মতবিরোধ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন দলের খেলোয়াড়দের হুডি বানানোর দায়িত্ব ও অতিরিক্ত হুডি বানাতে চায় ছাত্রলীগ নেতারা। কিন্তু আমার মত না থাকায় তাদের সাথে দূরত্ব তৈরি হয়। এ ছাড়া তাদের বিভিন্ন চাওয়া পূরণ না করায় আমার ওপর ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে ডাইনিংয়ে খাবারে পাথর, কাঁচ পাওয়া যেতে শুরু হয়। এটা নিয়ে আন্দোলন করে তারা। সর্বশেষ এক কর্মকর্তার সমস্যাকে কেন্দ্র করে গত বছরের জানুয়ারিতে আন্দোলন করে আমার পদত্যাগ দাবি করে ছাত্রলীগ।’’

একাধিক প্রভোস্টের অভিযোগ, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের’ আমলে প্রভোস্ট কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা দায়িত্ব গ্রহণের পর ছাত্রলীগের চাঁদাবাজির পরিমাণ বেড়ে যায়। প্রভোস্ট কাউন্সিলের মিটিংয়ে ছাত্রলীগকে হল ফান্ড থেকে চাঁদা দিতে সরাসরি নির্দেশনা দিতেন তিনি। পরে অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে তিনিও একই কাজ করতেন।

লালন শাহ হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন বলেন, ‘‘ছাত্রলীগ বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে হল ফান্ড থেকে চাঁদা নিতো। এজন্য সাবেক প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতির মাধ্যমে আমাদের নির্দেশনা দেওয়া হতো। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর এমন কোনো অপকর্ম হয়নি। ছাত্রদের টাকা ছাত্রদের কল্যাণেই ব্যয় করা হচ্ছে।’’

প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক ড. এ বি এম জাকির হোসেন বলেন, ‘‘দিবস ও বিভিন্ন প্রোগ্রামের নামে ছাত্রলীগকে টাকা দিতে সাবেক প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতির মাধ্যমে নির্দেশনা দেওয়া হতো। তখন প্রভোস্ট থাকাকালে শেষের দিকে আমি টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিই। এ ছাড়া অনেক সময় প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টার মাধ্যমেও এসব কাজে প্রভোস্ট কাউন্সিলে উত্থাপনের চাপ দেওয়া হতো।’’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক প্রভোস্ট কাউন্সিল সভাপতি অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘‘আমার দায়িত্ব পালনকালে হল ফান্ড থেকে ছাত্রলীগকে চাঁদা দেওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অনেকে অভিযোগ করছেন। আর মিটিংয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত রেজুলেশনে প্রকাশ হয়। সেখানেও এমন কোনো বিষয় আছে কি না, দেখতে পারেন।’’

হল ফান্ড থেকে ছাত্রলীগকে চাঁদা দেওয়ার বিষয়ে অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, এটা মিথ্যা। তবে একবার বিশেষ আয়োজনে হলে খাবারের মেন্যু সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শের জন্য ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদক উপস্থিত ছিল। এর বাইরে প্রভোস্ট কাউন্সিলের মিটিংয়ে চাঁদা বা অন্য কোনো বিষয়ে এমন কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।’’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মাদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘‘ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ছাত্রলীগ হল থেকে বিভিন্ন ভাবে চাঁদা আদায় করতো, এমন অভিযোগ শুনেছি। সেই সময়ের পরিবেশ এই নতুন বাংলাদেশে যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সে বিষয়ে আমি প্রভোস্ট কাউন্সিলকে পরামর্শ দিয়েছি। তারা যেন ছাত্রদের অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা অবলম্বন করে। আর বর্তমানে ছাত্রলীগের ন্যায় অন্য কোনো রাজনৈতিক সংগঠন অপকর্মের পথ অবলম্বন করলে, বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।’’

তানিম/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হল ফ ন ড থ ক সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’

সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি‌ বরাবর অভিযোগ করেন।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ