মধ্যবিত্তদের জন্য বাজেটে আয়কর ছাড়ের বড় ঘোষণা দিয়ে পার্লামেন্টে বাজেট পেশ করেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। আজ শনিবার সকালে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করে সংসদের উদ্দেশ্যে রওনা দেন নির্মলা সীতারামন। এরপর তিনি পার্লামেন্টে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন।

নরেন্দ্র মোদির তৃতীয় দফার প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রথম পূর্ণাঙ্গ এই বাজেট মধ্যবিত্ত বেতনভোগী করদাতাদের জন্য স্বস্তিদায়ক। এবারের বাজেটে সবচেয়ে বড় ঘোষণা হল আয়কর ছাড়। ১২ লাখ রুপি পর্যন্ত আয়ে কোনো আয়কর দিতে হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এর আগে এই কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা ছিল ৭ লাখ রুপি।

এর মাধ্যমে টানা আটবার কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করে নতুন রেকর্ড গড়েছেন ভারতের এই নারী অর্থমন্ত্রী। এর মধ্যে সাত বার পূর্ণাঙ্গ বাজেট এবং একবার অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করেছেন তিনি। 

আয়করের নতুন এই ব্যবস্থা আগামী অর্থবছর থেকে চালু হবে। উচ্চ আয়ের কর্মীরাও করছাড়ের আওতায় থাকবেন। বছরে ৫০ লাখ রুপি যাদের আয়, নতুন কাঠামোয় তারা ছাড় পাবেন ১ লাখ ১০ হাজার রুপি।

বাজেট পেশ করে দেশটির নাগরিকদের উদ্দেশ্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এই বাজেটের লক্ষ্য ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্তের ব্যয় ক্ষমতা বাড়ানো। এবারের বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বড় ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী। দেশের প্রতিটি জেলায় ক্যান্সার সেন্টার তৈরি, মেডিকেল কলেজগুলোতে ১০ হাজার আসন বৃদ্ধি, চিকিৎসকদের সংখ্যা বাড়ানো, এক কোটি কর্মীকে স্বাস্থ্য ও বীমার সুবিধার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত। ক্যান্সারসহ দুরারোগ্য ব্যাধির জন্য ব্যবহৃত ৩৬টি জীবনদায়ী ওষুধে কোনো কর লাগবে না। দেশের কৃষকদের উন্নয়ন ও আত্মনির্ভরতা বাড়াতেও একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জোর দেওয়া হয়েছে পর্যটন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়।

কেন্দ্রের এই ঘোষণায় কিছুটা উচ্ছসিত মধ্যবিত্ত সমাজ। এই বাজেটে দাম কমেছে মোবাইল ফোন, এলইডি টিভি, ইলেকট্রিক গাড়ি, দেশে তৈরি কাপড়, বরফজাত মাছ, চামড়ার জিনিস, মেডিকেল সরঞ্জামের। দাম বেড়েছে স্মার্ট মিটার, সোলার সেল, বিদেশি জুতা, বিদেশি আলো ও বিদেশি মোটরসাইকেলের।

বাজেটে কোন দেশের বরাদ্দ কত?

প্রতিবেশী দেশ ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এমন দেশগুলোকে অর্থনৈতিক অনুদান দেয় ভারত। এবারের বাজেটে দেখা যায়, ২০২৫ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এমন বিদেশি অনুদান বাবদ মোট ৫ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় অনেকটাই কমেছে। গত বছর বিদেশি অনুদান বাবদ বরাদ্দ ছিল ৫ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা। 

বাজেটে প্রতিবেশী মালদ্বীপে ভারতের সাহায্য গত বছরের বরাদ্দের তুলনায় ১২০ কোটি টাকা বেড়েছে। এই বছর সরকার মালদ্বীপকে ৬০০ কোটি রুপি অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গত বছরের মালদ্বীপের জন্য বাজেটে বরাদ্দকৃত ছিল ৪৭০ কোটি রুপি। গাণিতিক হিসাবে, এই এক বছরে মালদ্বীপের জন্য ভারতের বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ। 

শুধু মালদ্বীপ নয়, আফগানিস্তানের জন্যও বাজেট বরাদ্দ বাড়িয়েছে ভারত। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫০ কোটি রুপি থেকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে ১০০ কোটি রুপি। 

তবে বরাবরের মতই ভারতের বাজেটে বৈদেশিক সহায়তার সব থেকে বড় বরাদ্দ পেয়েছে প্রতিবেশি পাহাড়ি দেশ ভুটান। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে আর্থিক বরাদ্দ ১৫ শতাংশ কমালেও ভুটানকে ২ হাজার ১৫০ কোটির বরাদ্দ দিয়ে উন্নয়ন সহায়তার অংশীদার করেছে ভারত। 

এদিকে ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক বাংলাদেশের কূটনৈতিক শীতলতার প্রভাব পড়েনি বাজেট বরাদ্দে। শেষ আর্থিক বছরের মতোই ১২০ কোটি রুপিতে অপরিবর্তিত রয়েছে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহায়তার বরাদ্দ। বাংলাদেশের সঙ্গে নেপাল শ্রীলংকা, মালদ্বীপের আর্থিক বরাদ্দও অপরিবর্তিত রেখেছে ভারত। আর্থিক বরাদ্দ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে মরিস মরিশাস, সেশেলস ও গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত মিয়ানমারের। 

বাজেটে আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য বরাদ্দ ২০০ কোটি থেকে বাড়িয়ে ২২৫ কোটি করা হয়েছে। লাতিন আমেরিকার বরাদ্দ ৯০ কোটি থেকে কমে হয়েছে ৬০ কোটি। ইরানের চবাহার পোর্টের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরে রাখা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে যে অনুদান দেওয়া হয়, সেই বরাদ্দ ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬৪ কোটি টাকা করেছে কেন্দ্র।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব জ ট প শ কর র জন য ব গত বছর আর থ ক বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

সচিবালয়ে আবারও বিক্ষোভ কর্মচারীদের

‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে ঈদের ছুটি শেষে অফিস খোলার একদিন পর আজ সোমবার আবারও সচিবালয়ের ভেতর বিক্ষোভ করছেন সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আন্দোলনকারী কর্মচারীরা। বিক্ষোভ শেষে আজ সরকারের আরও তিন উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা রয়েছে।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, কর্মচারীরা মিছিল করে সচিবালয়ের বাদামতলায় জমায়েত হন। সেখানে তারা অধ্যাদেশটি বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নতুন ভবনের নিজে জড়ো হয়ে অধ্যাদেশটি বাতিলের দাবি জানান। তাঁদের স্লোগান ছিল ' অবৈধ কালো আইন মানি না' ইত্যাদি।

‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে বেশ কিছু দিন ধরে ধরে আন্দোলন করছেন সচিবালয়ে কর্মরত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। আন্দোলন চলার মধ্যেই অধ্যাদেশটি জারি করে সরকার। এর পর থেকে বিক্ষোভ, কর্মবিরতি ও স্মারকলিপি দেওয়ার মতো কর্মসূচি পালন করছেন আন্দোলনকারী কর্মচারীরা।

ঈদের ছুটি শুরু আগে কর্মচারীরা অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ,আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, খাদ্য ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, খাদ্য, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বরাবর স্মারকলিপি জমা দেন।

তারই ধারাবাহিকতায় আজ স্বরাষ্ট্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কথিত সংস্কার কাদের জন্য, কিসের জন্য: মাহমুদুর রহমান মান্না
  • ‘১০০ টাকার’ বাজেটের নতুনত্ব কোথায়
  • খুলনায় ‘সেরা সাঁতারুর খোঁজে বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতা শুরু
  • সচিবালয়ে আবারও বিক্ষোভ কর্মচারীদের
  • পাঁচ বছরে বাড়বে ৬৫ শতাংশ
  • ডিজিটাল খাতে বাজেটের প্রভাব কেমন
  • সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
  • ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ বিএসইসির
  • বেসরকারি খাত পিপিপিতে আকৃষ্ট নয়, বরাদ্দ ৫ হাজার কোটি টাকা
  • কমপ্লায়েন্সের অভাবে ধুঁকছে চামড়া খাতের রপ্তানি