প্রতিবেশী কানাডা ও মেক্সিকোর প্রতি সম্ভবত এর আগে আর কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট এত কঠিন হননি। চীনের পণ্যে যেখানে ১০ শতাংশ শুল্ক, সেখানে এ দেশ দুটিকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে ২৫ শতাংশ। এ অবস্থায় চীন, মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যে শুল্ক আরোপ নতুন করে বিশ্বের বাণিজ্য যুদ্ধের শঙ্কাকে উস্কে দিয়েছে। এরই মধ্যে পাল্টা পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছে কানাডা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে।

ট্রাম্পের শুল্ক স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। দ্য গার্ডিয়ান অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প প্রশাসন মনে করছে, শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসছে। কিন্তু অনেক বিশ্লেষক দৃঢ়ভাবে এর বিরোধিতা করছেন। তারা বলছেন, এতে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে। ফলে মার্কিন শ্রমজীবীরা চাপে পড়বেন; ভোক্তাদের বেশি অর্থে পণ্য কিনতে হতে পারে। 

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক জোসেফ স্টিগলিজ বলেন, স্পষ্টভাবে সব অর্থনীতিবিদ মনে করেন– এ ধরনের শুল্ক আরোপের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র, এমনকি পুরো বিশ্বের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। অন্য দেশগুলো যে পাল্টা পদক্ষেপ নেবে না, এমনটা ভাবা ঠিক নয়। 

একই সুরে কথা বলেছেন পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিকসের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্কুস নোল্যান্ড। তিনি বলেন, এ ধরনের শুল্ক আরোপ মার্কিন অর্থনীতির হতাশাজনক প্রবৃদ্ধির কারণ হতে পারে; সেসঙ্গে বাড়বে মূল্যস্ফীতিও। আর ভুক্তভোগী দেশগুলো যদি পাল্টা পদক্ষেপ নেয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। একই ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ ফেলো ম্যারি লাভলি বলেন, শুল্ক আরোপ থেকে ইতিবাচক কিছু পাওয়া কষ্টকর। কারণ এটা ভোক্তাদের নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে।

কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে বলেছেন, ট্রাম্পের শুল্ক অতিরিক্ত কিছু অপ্রত্যাশিত প্রভাব নিয়ে আসবে। বিশেষ করে মার্কিন রপ্তানিকারকরা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাবেন। কারণ তারা বিদেশি বাজারে শুল্ক-বাধার মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। 

সিএনবিসি জানায়, আমদানির পরিমাণ বিবেচনায় চীন, মেক্সিকো ও কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ তিন বাণিজ্য অংশীদার। এ তিন দেশ ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যথাক্রমে ৫৩৬, ৪৫৫ ও ৪৩৭ বিলিয়ন ডলার পণ্য রপ্তানি করে। 

শনিবার দ্য কনভারজেশনের প্রতিবেদন জানায়, কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর শুল্ক আরোপ বৃহৎ বাণিজ্য যুদ্ধের শঙ্কাকে উস্কে দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কানাডা ও মেক্সিকোর বাণিজ্য বেশ চমৎকার। বিশেষ করে অটোমোবাইল, জ্বালানি, কৃষি ও মার্কিন ভোক্তাদের জন্য পণ্য সরবরাহ করে থাকে এ দুই দেশ। শুল্ক আরোপ এসব খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। 

এদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপের বিরুদ্ধে জোরালো ও যুক্তিসংগত পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। 

শুক্রবার কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে ট্রুডো বলেন, ‘আমার বলতে দ্বিধা নেই, আসছে দিন ও সপ্তাহগুলোতে আমাদের দেশকে কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতে হবে। আমি জানি, কানাডার নাগরিকরা হয়তো উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত। কিন্তু আমি তাদের জানাতে চাই, ফেডারেল সরকার ও সরকারি সব সিদ্ধান্ত প্রকৃতপক্ষে তাদের কথা ভেবেই নেওয়া হয়।’ 

এ তিন দেশ ছাড়াও এরই মধ্যে ইউরোপের দেশগুলোর ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। বার্তা সংস্থা আনাদলু জানায়, শুক্রবার ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর ‘নিশ্চিতভাবে’ শুল্ক আরোপ করবেন। ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘ইইউ আমাদের খুব বাজেভাবে দেখে।’  

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র শ ল ক আর প পদক ষ প র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

বৈষম্য কেন? আদিবাসী নারী শ্রমিকরা পাই না সমান মজুরি

‘‘সাম্যের গান গাই-
আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই।
বিশ্বের যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’’

কাজী নজরুল ইসলাম ‘নারী’ কবিতায় নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলেছেন। কিন্তু, এ বৈষম্য সমাজের সর্বস্তরে এখনো রয়ে গেছে। দিনাজপুরের হাকিমপুরে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারী শ্রমিকেরা। পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেও সমান মজুরি পাচ্ছেন না তারা।

হাকিমপুর উপজেলার বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাড়া ঘুরে জানা যায়, বছরে আমন এবং ইরি মৌসুমে ধানের চারা রোপণ, ক্ষেত নিড়ানিসহ ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ করেন নারী শ্রমিকেরা। পুরুষের পাশাপাশি সমান তালে এসব কাজ করেন তারা। এ কাজে পুরুষ শ্রমিকেরা ৫০০ টাকা দৈনিক মজুরি পেলেও নারী শ্রমিকেরা পান ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। শুধু ধানের মৌসুমেই নয়, অন্যান্য ফসলের ক্ষেতে কাজ করলেও তারা পুরুষের সমান মজুরি পান না। এই বৈষম্য দূর হলে আরেকটু স্বচ্ছল জীবনযাপন করা যেত বলে তারা মনে করেন।

হাকিমপুর পৌর এলাকা চন্ডিপুর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাড়ার নারী শ্রমিক লক্ষ্মী হাসদা ও শান্তি সরেন বলেন, ‘‘আমরা বছরে দুই সিজন ধানের চারা রোপণসহ কাটা-মাড়াই করি। সকাল ৮ থেকে বিকেল ৫ পর্যন্ত কাজ করি। কিন্তু মজুরি কম পাই। পুরুষরা ৫০০ টাকা পেলে আমরা পাই সাড়ে ৩০০ টাকা। এটা কেমন নিয়ম?’’

অপর নারী শ্রমিক সুরুজ মনি হেম্ব্রন বলেন, ‘‘এখন তো হামরা তেমন কাম পাই না। আলু ও সরিষার মাঠে এখন মুসলমান বেটি ছোলরা কাম করে। আগে আমরাই করতাম, এখন অনেক কাম কমে গেছে। এরপর আবার পুরুষ মানুষের চেয়ে হামাক হাজিরাও কম দেয়। হারা (আমি) চলবো কি করে?’’

একই প্রশ্ন করেন হিলির তালতলার রানী হেম্ব্রন ও বিউটি হেম্ব্রন। শ্যামলী হাড্ডি বলেন, ‘‘এই বৈষম্যের কারণে আমরা স্বাবলম্বী হতে পারছি না। বৈষম্য দূর হলে আরেকটু ভালো করে চলতে পারতাম।’’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাকিমপুর উপজেলার ১ নাম্বার খট্রা-মাধবপাড়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ছদরুল শামীম স্বপন বলেন, ‘‘আমরা জানি, নারী-পুরুষ সমান অধিকারী। কিন্তু, সমাজে নারী শ্রমিকেরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। তারা সঠিক মজুরি পায় না। আমি শ্রমিক ফেডারেশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলব- আপনারা এই বৈষম্য দূর করুন। নারীর ন্যায্য মজুরির ব্যবস্থা করুন।’’

খট্রা-মাধবপাড়া ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি শাহানুর আলম শাহিন বলেন, ‘‘আমাদের এই অঞ্চলে অনেক আদিবাসী নারী শ্রমিক আছেন, যারা বৈষম্যের শিকার। আমি গৃহস্থ এবং কৃষকদের বলতে চাই, আপনারা বৈষম্য না করে নারী-পুরুষ শ্রমিকদের সমান মজুরি দেবেন।’’

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ