বিদেশে মার্কিন সহায়তা স্থগিত-সংক্রান্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশেও পড়িতে শুরু করিয়াছে। ইতোমধ্যে এই দেশে মার্কিন অর্থায়নে চলমান বহু প্রকল্পের কাজ বন্ধ বা স্থগিত হইয়া গিয়াছে। সোমবার প্রকাশিত সমকালের এক সংবাদ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) রোহিঙ্গা সহায়তা ব্যতীত বাংলাদেশের অবশিষ্ট সকল কার্যক্রম আপাতত তিন মাসের জন্য গুটাইয়া লইয়াছে। কর্মসূচির ব্যাপ্তি ও বিপুল কর্মীসংখ্যার কারণে বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি ও অলাভজনক উন্নয়ন সংস্থারূপে পরিচিত ব্র্যাক বাংলাদেশে মার্কিন অর্থায়নের ছয়টি প্রকল্প স্থগিত করিয়াছে। সম্প্রতি আইসিডিডিআর,বি সহস্রাধিক কর্মী ছাঁটাই করিয়াছে, যেই সংস্থাটি স্বাস্থ্য খাতে বৃহৎ গবেষণা চালাইতেছে; সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত বহু হাসপাতাল পরিচালনা করিতেছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে এইচআইভি, ম্যালেরিয়া ও যক্ষ্মা রোগের জীবন রক্ষাকারী ঔষধের সরবরাহ বন্ধের ঘোষণা দিয়াছে। বন্ধ হইয়া গিয়াছে পুষ্টি-সংক্রান্ত দুইটি প্রকল্প। ফলে এইচআইভি-এইডস, যক্ষ্মা, ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, ম্যালেরিয়া, অপুষ্টিজনিত বিবিধ সংক্রামক ব্যাধির ঝুঁকি বৃদ্ধি পাইতে পারে। নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ পরিচালক বলিয়াছেন, বর্তমানে দেশে আনুমানিক দেড় লক্ষ শিশু খর্বাকৃতির হইয়া থাকে। মার্কিন সহায়তা বন্ধ হইলে সংখ্যাটি আরও বৃদ্ধি পাইতে পারে। একই কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হইতে পারে টিকাদান, কৃমি নিয়ন্ত্রণ ও ভিটামিন ‘এ’ ক্যাম্পেইনের ন্যায় জাতীয় কর্মসূচি।
বিগত কয়েক বৎসরে মার্কিন সহায়তাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে শীর্ষ ১০-এ ছিল বাংলাদেশ। অন্যদিকে মার্কিন সহায়তার অধিকাংশ আসে ইউএসএআইডির মাধ্যমে এবং প্রধানত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে দিয়া কৃষি,
স্বাস্থ্য, পুষ্টি, খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা, পরিবেশ, জ্বালানি ও মানবিক খাতে বিবিধ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। এই সকল প্রকল্প বন্ধ হইলে শুধু সংশ্লিষ্ট উপকারভোগীরাই বিপদে পড়িবেন না; কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও কর্মহারা হইবেন। ফলে বিবিধ সামাজিক, এমনকি রাজনৈতিক সমস্যাও সৃষ্টি হইতে পারে।
মার্কিন সহায়তা বন্ধের ঘোষণা এমন সময়ে আসিয়াছে যখন বাংলাদেশকে ইতোমধ্যে উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ বিবিধ চাপ মোকাবিলা করিতে হইতেছে। বিশেষত খাদ্য নিরাপত্তাসহ সামাজিক নিরাপত্তার বিভিন্ন খাতে ইউএসএআইডির কার্যক্রম বন্ধ হইবার কারণে বিপুলসংখ্যক নিম্নআয়ের মানষের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাইয়াছে। ইহাতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বিশাল জনগোষ্ঠী। যদিও বলা হইয়াছে, ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির সহিত সহায়তার আওতাধীন প্রকল্পগুলির সামঞ্জস্য পর্যালোচনার স্বার্থে আপাতত তিন মাসের জন্য এই স্থগিতাদেশ আরোপ করা হইয়াছে; ইতোমধ্যে ঘোষিত জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশসহ বিভিন্ন মানবিক খাত-সংশ্লিষ্ট ট্রাম্প প্রশাসনের বিবিধ নীতির পরিপ্রেক্ষিতে এই বিষয়ে ইতিবাচক কোনো ভাবনার অবকাশ কম বলিয়াই অনুমিত। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড.
একদিকে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাইতে হইবে যাহাতে পর্যালোচনাগুলি ইতিবাচক হয়। উহা যদ্রূপ ঢাকায় করিতে হইবে, তদ্রূপ ওয়াশিংটনেও। ট্রাম্প প্রশাসনকে বোঝাইতে হইবে, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সহযোগী দেশ। তদুপরি বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা স্থগিতের কারণে স্বাস্থ্য খাতে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ অবস্থা সৃষ্টি হইতেছে। অন্যদিকে চলমান প্রকল্পসমূহকে গুরুত্বের ভিত্তিতে অব্যাহত রাখিতে সরকারকে নিজস্ব অর্থায়নেরও সিদ্ধান্ত লইতে হইবে। আশার বিষয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলিয়াছেন, মার্কিন অর্থায়ন বন্ধ হইবার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার স্বাস্থ্য খাতে নূতন কর্মকৌশল নির্ধারণ কার্য চলমান। অন্যান্য জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট খাতেও একই উদ্যোগ গ্রহণ সময়ের দাবি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দেশের জন্য যা যা করা দরকার, সব করেছেন আহমদ ছফা
আহমদ ছফাকে বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই সহ্য করতে পারতেন না। কিন্তু তাঁর বেশির ভাগ কথা এখন সত্যে পরিণত হয়েছে। দেশের সঙ্গে তিনি প্রাণকে যুক্ত করেছিলেন। দেশকে ভালোবেসে যা যা করা দরকার, তার সবকিছু করেছেন।
শুক্রবার বিকেলে আহমদ ছফা স্মৃতি বক্তৃতায় সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান এসব কথা বলেন। এশীয় শিল্পী ও সংস্কৃতি সভা জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘আহমদ ছফা স্মৃতি বক্তৃতা-২০২৫’ আয়োজন করে। ‘আহমদ ছফার রাষ্ট্র বাসনা এবং জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পরিচয়’ শীর্ষক স্মৃতি বক্তৃতা দেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের পরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এশীয় শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সভার সভাপতি জহিরুল ইসলাম। আহমদ ছফা (১৯৪৩–২০০১) ছিলেন লেখক, প্রগতিশীল সাহিত্যকর্মী ও রাজনৈতিক চিন্তক।
অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আহমদ ছফা ছিলেন মূলত সাহিত্যিক। তবে তিনি সাহিত্যের গণ্ডি পেরিয়ে চিন্তাকে রাষ্ট্রভাবনা বিষয়ে প্রসারিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন অনেক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। তিনি এমন বিষয় নিয়ে চিন্তা করেছিলেন, তা অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না।’ ছফা বলেছিলেন, ‘বিপ্লবের একটি নতুন ভাষা থাকতে হবে। মানুষের রাষ্ট্রের বাসনা বুঝতে হবে। দেশটা আমার নিজের বলে মনে করলে তার সমস্যার সমাধানও আমার নিজের মতো করেই ভাবতে হবে।’
স্মৃতি বক্তৃতায় ফারুক ওয়াসিফ বলেন, আহমদ ছফা রাষ্ট্র নিয়ে গভীরভাবে ভেবেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে ধরনের দেশ সেই বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করার মতো কোনো তাত্ত্বিক রাজনৈতিক রূপরেখা নেই। কোনো রাজনৈতিক দলও নেই।
ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পূর্বপরিকল্পনা ছিল না। একাত্তর ছিল অপরিকল্পিত। একইভাবে জুলাই অভ্যুত্থানও হয়েছে অপ্রস্তুতভাবে। এখন জুলাইয়ের নেতারা প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হয়েছেন। বড় দলের যে সামর্থ্য আছে, সেই শক্তি–সামর্থ্য তাদের নেই। তারা মিত্রহীন হয়ে পড়েছে।’
আহমদ ছফার বন্ধু ব্যবসায়ী আবদুল হক বলেন, জনগণ রাষ্ট্রের পরিবর্তন চেয়েছিল। বাংলাদেশের নবীন প্রজন্ম সেই পরিবর্তন ঘটিয়েছে। সারা বিশ্ব দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবাদ করতে জানে। এখন একটি নতুন রাজনীতি দরকার।