রঙিন ফুলকপিতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চান দিনাজপুরের কৃষক দম্পতি
Published: 5th, February 2025 GMT
‘কাইল সকালে বাজারত আইসেন। খালি পাঁচ মিনিট দাঁড়ায় থাকিবেন। কাস্টমারের (ক্রেতার) মুখে মালের দাম শুনিয়া মাথাটা ঘুরি যাবে। পাইকার দাম কহেছে তিন টাকা পিস, দুই টাকা পিস। মনমেজাজ ভালো নাই ভাই। সকালে মাল নিয়া বাজারত গেইলে মাথাটা হ্যাং হই যাছে। ভাগ্য ভালো, চার হাজার পিস রঙিন ফুলকপির চারা লাগাইছিলাম। এখন দেখি, সেটা দিয়ে যদি লোকসান কিছুটা কমানো যায়।’
কথাগুলো বলছিলেন দিনাজপুর সদর উপজেলার পারদিঘন গ্রামের ছামিদুল ইসলাম (৪৫)। বাড়ির অদূরে গর্ভেশ্বরী নদীর বাঁধের পাড়ে দুই বিঘা জমিতে সাদা, গোলাপি, সবুজ, হলুদ—চার প্রকারের ফুলকপি এবং ব্রকলি, চায়নিজ ক্যাবেজ, রেড ক্যাবেজ, সাধারণ বাঁধাকপিসহ মোট ১৪ হাজার চারা লাগিয়েছেন। একই সময়ে বাজারজাত করার উপযোগী হয়েছে ছামিদুলের উৎপাদিত সবজি। প্রায় প্রতিদিন সকালে দিনাজপুরের বাহাদুর বাজারে সবজি বিক্রি করতে আসেন তিনি। কিন্তু বাজারে পণ্যের আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় ছামিদুলের কণ্ঠে এখন আফসোসের সুর।
ছামিদুল জানান, দুই বিঘা জমি এক বছরের জন্য বর্গা নিয়েছেন ৬০ হাজার টাকায়। জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলু, রসুন, টমেটো লাগিয়েছেন। এর মধ্যে ৪ হাজার রঙিন ফুলকপি-বাঁধাকপির চারা স্থানীয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (মহিলা বহুমুখী উন্নয়ন সংস্থা) থেকে বিনা মূল্যে পেয়েছেন। অবশিষ্ট চারাগুলো প্রতিটি কিনতে হয়েছে ১ টাকা ৮০ পয়সা দরে। এরপর জমি প্রস্তুত, সার, কীটনাশক, শ্রমিক বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। ছামিদুল বলেন, ‘প্রতি পিস কপি যদি ১০ টাকাও দাম পেতাম, অন্তত আসলটা উঠে আসত। কিন্তু বাজারে এখন প্রতি পিস বিক্রি করছি ৫-৬ টাকায়। তবে রঙিন ফুলকপিটার দাম ১০-১২ টাকা পেয়েছি। সেটা দিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।’
সোমবার দুপুরে পারদিঘন গ্রামে ছামিদুল-মারুফা দম্পতির খেত ঘুরে দেখা যায়, বিক্রির জন্য কপি তুলছেন ছামিদুলের স্ত্রী মারুফা আক্তার (৩৯)। ছেলে-মেয়ের দেখাশোনা, ঘর গৃহস্থালির কাজকর্মের পাশাপাশি স্বামীর সঙ্গে দিনের অধিকাংশ সময় খেতে কাজ করেন মারুফা। উৎপাদিত পণ্যের ভালো দাম না পেলেও মুখে হাসি নিয়ে মারুফা বলেন, ‘গেলবার একেকটি রঙিন ফুলকপি ৫০ টাকা পর্যন্ত দাম পাইছি। এইবার শুরু থেকেই সবজির দাম কম। লোকসান হবে। তবে রঙিন ফুলকপি আর টমেটোর যত্ন নিচ্ছি। সেগুলো দিয়ে যদি ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায়।’
মঙ্গলবার সকালে শহরের বাহাদুর বাজার ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার ওপরে উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য আনছেন কৃষকেরা। আলাপকালে সদর উপজেলার কৃষাণবাজার এলাকার কৃষক আনিছুর রহমান বলেন, ‘৬০টি ফুলকপি আর ৪০টি বাঁধাকপি আনছি। ফুলকপির দাম পেলাম প্রতিটি ৫ টাকা আর বাঁধাকপি দাম পাইছি ৬ টাকা। ৩০০ মিটার দূরত্বেই খুচরা বাজারে প্রতিটি ফুলকপি (দেশি) বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫ টাকা, রঙিন ফুলকপি প্রতিটি ৩৫-৪০ টাকা এবং বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা দরে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় এবার বাঁধাকপির চাষ হয়েছে ২ হাজার ৯৯ হেক্টর জমিতে এবং ফুলকপির চাষ হয়েছে ২ হাজার ৩৫৬ হেক্টর জমিতে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।
জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’
জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’