চাঁদপুরের মোহনপুরের নাসিরারচর এলাকায় মেঘনা নদীতে প্রতিপক্ষের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজনের মৃত্যুর ঘটনার পাঁচ দিন পর হত্যা মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১২টার পর ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১২ থেকে ১৩ জনকে আসামি করে চাঁদপুরের মতলব উত্তর থানায় মামলাটি করা হয়।

মামলার বাদী গুলিতে নিহত মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার রাসেল ফকিরের মা আনরা বেগম। তবে বাদী জানেন না মামলা হয়েছে কি না অথবা কারা মামলার আসামি। তাঁর দাবি, তাঁকে কাগজে সই করতে বলা হয়েছে, তিনি শুধু সই করেছেন।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে কিবরিয়া বাহিনীর হামলায় কানা জহির বাহিনীর রাসেল ফকির ও রিফাত খান গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

স্থানীয় লোকজন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মতলবের নাসিরারচরে ১০-১৫টি ড্রেজারের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু কাটছিলেন কিবরিয়া। বালু কাটা নিয়ে কিবরিয়া ও কানা জহির বাহিনীর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর কানা জহির পক্ষের রাসেল ফকির, রিফাত, আইয়ুব আলীসহ কয়েকজন স্পিডবোটে করে সেখানে বালু লুট করতে যান। রাসেলদের স্পিডবোটকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় কিবরিয়া বাহিনীর লোকজন। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রাসেলসহ তিনজনকে উদ্ধার করে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাসেল ও রিফাত মারা যান।

মামলার বাদী আনরা বেগম বলেন, গতকাল রাতে কয়েকজন তাঁদের বাড়িতে যান। তিনি তাঁদের চেনেন না। একটি কাগজে সই নিয়েছেন তাঁরা। কাদের আসামি করা হয়েছে, এ বিষয়ে তিনি ও তাঁর স্বামী কিছুই জানেন না।

আনরা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, পড়ালেখা জানি না। কারে আসামি করছে, হেইডা কইতে পারি না।’ যাঁর বিরুদ্ধে আপনার অভিযোগ, তাঁর নামে মামলায় নেই, আপনি বিচার পাবেন কি না—এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, ‘গরিবরা আবার বিচার পায় নাকি।’

নিহত রাসেল ফকিরের মা আনরা বেগমের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.

রবিউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তো মামলা নিতে চাইনি। সীমানা জটিলতার কারণে দেরি হয়েছে। সীমানা নির্ধারণের পর আমরা মামলা নিয়েছি। বাদী লিখিত যে অভিযোগ দিয়েছে, সেভাবে আমরা মামলা নিয়েছি। বাদী আমার সামনে এজাহারে সই করেছেন। কে বা কারা মামলা সাজিয়েছে, কাদের আসামি করেছে, এ বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই। এটি বাদী জানেন।’

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মতলবের দুই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি-দখলদারির অভিযোগ, দল থেকে বহিষ্কার

চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার বিএনপির দুই নেতাকে দলের সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

চাঁদাবাজি, দখলদারি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা ধরনের অপকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগে ওই দুজনের বিরুদ্ধে এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

বহিষ্কৃত নেতারা হলেন মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌর বিএনপির সহসভাপতি আবদুল মান্নান লস্কর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া। এর মধ্যে মতলব উত্তরের আবদুল মান্নান লস্করকে চাঁদাবাজির মামলায় গত সোমবার রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আবদুল মান্নান লস্কর ও আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়াকে চাঁদাবাজি, দখলদারি ও মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগে দলের প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই একই অভিযোগে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইমাম হোসেন গাজীকেও দলের সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।  

এ ব্যাপারে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহম্মেদের (মানিক) মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে মতলব উত্তর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম বলেন, ওই দুই নেতাকে বহিষ্কারের বিষয়টি জেনেছেন। তবে এ ব্যাপারে  চিঠি এখনো পাননি। যেকোনো বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এটি অন্যান্য নেতার জন্যও একটি বার্তা ও শিক্ষা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঋণের কিস্তি পরিশোধ নিয়ে বিরোধ, চাচার মারধরে ভাতিজার মৃত্যুর অভিযোগ
  • মতলবের দুই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি-দখলদারির অভিযোগ, দল থেকে বহিষ্কার