শেখ পরিবারের নাম ভেঙে দিলেন যবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা
Published: 6th, February 2025 GMT
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) বিভিন্ন ভবন ও স্থাপনা থেকে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পরিবারের নাম এবং স্মৃতিফলক ভেঙে দিয়েছেন যবিপ্রবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা ছাত্রী হলের নামফলক, প্রধান ফটকে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, শেখ রাসেল জিমনেশিয়ামের নাম ফলক ভেঙে দেন তারা।
এর আগে, বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিক ভবনের নাম রঙ দিয়ে মুছে দেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সামিউল আজিম বলেন, “ফাসিস্টের সব স্মৃতি এভাবেই সবসময় ভেঙে দেওয়া হয়। এ ধ্বংসস্তুপ যেন সেখানেই রাখা হয়, যাতে পরবর্তীতে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, সে যেন বুঝতে পারে ফ্যাসিবাদের শেষ পরিণতি কি হয়।”
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর জেলার মুখ্য সংগঠক আল মামুন লিখন বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধেকের বেশি ভবন স্বৈরাচার শেখ পরিবারের নামে ছিল। জুলাই বিপ্লবের পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ নামগুলো পরিবর্তনের জন্য কোন পদক্ষেপ নেয়নি। তাই আমরা শিক্ষার্থীরা শৃঙ্খলার সঙ্গে শেখ পরিবারের নামে থাকা ভবনগুলোর নামফলক উঠিয়ে ফেলেছি।”
তিনি বলেন, “প্রশাসনের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, এ ভবনগুলোর নাম খুব দ্রুতই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং জুলাই আন্দোলনের নায়কদের নামানুসারে রাখা হোক।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর জেলার যুগ্ম-আহ্বায়ক এস এম দোলেনুর করিম বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আমরা দেখেছি সিস্টেমের দোহাই দিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যে পরিবর্তনগুলো হওয়ার দরকার ছিল, তা এখনও হয়নি। যেখানে ছাত্র-জনতার চাহিদা, সেখানে এ রকম কাজগুলো দীর্ঘদিন পর্যন্ত ঝুলিয়ে না রেখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল।”
তিনি বলেন, “এ কাজগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনেক আগেই করার দরকার ছিল। যেহেতু তারা পারেনি, তাই আমরাই শৃঙ্খলার সঙ্গে প্রতিটা ভবনের নাম ফলক উঠিয়ে দিলাম। এটা ভবিষ্যতে কোন সরকার যেন একনায়ক শাসন ও শোষণ না করতে পারে, তারই একটা হুঁশিয়ারি বার্তা।”
ঢাকা/ইমদাদুল/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব র র ন ম
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষক রায়হান অভিযুক্ত হলেও নাম নেই অস্ত্র ব্যবসায়ীর
সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শ্রেণিকক্ষে গত বছরের ৪ মার্চ শিক্ষার্থীকে গুলির একটি মামলায় গত ৩১ জানুয়ারি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে ডিবি। এতে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীকে গুলি করা কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের প্রাক্তন শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে অভিযোগপত্রে নাম নেই যার কাছ থেকে ডা. রায়হান অস্ত্র সংগ্রহ করেছিলেন সেই এস এস আল হোসাইন ওরফে সোহাগের। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার নওদাপাড়ার সোহাগের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র-বিস্ফোরক ও নাশকতার একাধিক মামলা আছে।
গত বছরের ৪ মার্চ ব্যাগভর্তি অস্ত্র-গুলি নিয়ে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ভয় দেখান শিক্ষক রায়হান। তার দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ করায় তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে লক্ষ্য করে শিক্ষক রায়হান গুলি করেন। শিক্ষার্থী তমাল বাম উরুতে গুলিবিদ্ধ হলেও বর্তমানে সুস্থ। ওই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ব্যাগভর্তি অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন শিক্ষক রায়হান। তাঁর ব্যাগে লাইসেন্সবিহীন দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি জাপানি সামুরাই, ১০টি বার্মিজ ছুরি ও ৭৮ রাউন্ড তাজা গুলি পাওয়া যায়। ডা. রায়হানের বিরুদ্ধে সে সময় আহত শিক্ষার্থী তমালের বাবা বগুড়ার আবদুল্লাহ আল আমিন হত্যাচেষ্টা ও ডিবি পুলিশ বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হন রায়হান। যদিও পরবর্তী সময়ে জামিন নিয়ে রায়হান এখন পলাতক। ঘটনার পর থেকে উধাও অস্ত্র ব্যবসায়ী সোহাগও।
পুলিশ সূত্র জানায়, ডা. রায়হান সিরাজগঞ্জ আদালতে স্বীকারোক্তি ও জবানবন্দি দেন। তিনি জানান, সোহাগের কাছ থেকেই সব অস্ত্র কিনেছেন। এরপর অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে সোহাগ ও রায়হানের বিরুদ্ধে মামলা করেন সিরাজগঞ্জ ডিবি পুলিশের সাবেক এসআই ওয়াদুত আলী। অভিযোগ উঠেছে, অভিযোগপত্র থেকে সোহাগের নাম বাদ দিয়েছেন ডিবির বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নাজমুল ইসলাম ও ইউনিট ওসি ইকরামুল হোসাইন। ডিবির তদন্ত ও দাখিলকৃত অভিযোগপত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তাঁর বাবা।
সিরাজগঞ্জ ডিবির এসআই নাজমুল হক নতুন তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করলেও তিনি এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তাঁর ইউনিটপ্রধান বর্তমান ওসি ইকরামুল হোসাইন আজ ২৯ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার কাছে থেকে পুলিশ পদক নিতে ঢাকায় রয়েছেন। তিনি ফোনে দাবি করেন, ডা. রায়হান আদালতে ১৬৪ ধারায় বিচারকের সামনে সোহাগের নাম বললেও তাঁর বাবা বা গ্রামের নাম জানাতে পারেননি। মামলার বাদী এজাহারে যে সোহাগের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করেন, তিনি এতে জড়িত নন। বিএনপি করার কারণে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়রানি করতেই আগের সরকারের সময় সাবেক এসপি ও ওসি সোহাগকে জড়িয়েছেন। শিক্ষক রায়হান যে সময় অস্ত্রগুলো কিনেছিলেন, তার আগে থেকেই সোহাগ ঢাকা ও ভারতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ইমিগ্রেশন ও হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
এ বিষয়ে সাবেক এসপি আরিফুল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া না গেলেও মামলার বাদী ডিবির সাবেক এসআই ওয়াদুত আলী বলেন, শিক্ষক রায়হানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে সোহাগের কথোপকথন ও লেনদেনের বিষয় নিশ্চিত হওয়া যায়। তাই এজাহারে সোহাগের নাম ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হয়।
সমকালের অনুসন্ধানেও সাবেক এসআই ওয়াদুত আলীর এজাহার অনুযায়ী সোহাগের ফোন নম্বরের কল ডিটেইল এবং এনআইডি নম্বর সংগ্রহ করা হয়। সেখানে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সোহাগেরই তথ্য ও ছবি পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে অজ্ঞাত স্থান থেকে শিক্ষক রায়হান শরীফ গতকাল ফোনে বলেন, ‘আমি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। ডিবির চার্জশিটের বিষয়টি জানি না।’
মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইব্রাহিম হোসেন বলেন, চার্জশিট থেকে সোহাগকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি আত্মঘাতী ও তদন্তের নীতিমালার বাইরে।
জানা গেছে, ভেড়ামারার স্বেচ্ছসেবক দলের সদস্য সচিব কথিত অস্ত্র ব্যবসায়ী সোহাগ। গতকাল তিনি ফোনে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র, খুন ও নাশকতা মামলাগুলো রাজনৈতিক। আমি অস্ত্র ব্যবসায়ী নই। রাজনৈতিক এক নেতার বিরুদ্ধে মামলা করায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।
রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা স্বাধীন হলেও পুলিশ সুপার, সার্কেল অফিসার ও সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ওসি সুপারভাইজরি অথারিটি। বিষয়টি খতিয়ে দেখব।