শিশুর বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো প্রস্রাব–পায়খানার বেগ হলে অভিভাবকদের বোঝাতে পারা বা বলতে পারা, প্রয়োজনমতো মলমূত্র ধরে রাখতে পারা। দিনের বেলা প্রস্রাব ধরে রাখার সক্ষমতা শিশুরা একটু আগে শেখে, আর রাতের বেলা প্রস্রাব ধরে রাখাটা সাধারণত তিন থেকে চার বছরের মাঝামাঝি শিখে যায়। সাধারণত মেয়েশিশুরা ছেলেশিশুদের চেয়ে একটু আগে শেখে।

কিন্তু দেখা যায়, অনেক শিশু পাঁচ বছরের ওপরে বয়স হয়ে গেলেও ঘুমের মধ্যে প্রস্রাব ধরে রাখতে পারে না। দিনে বা রাতে যেকোনো সময়ই এটা হতে পারে। তবে রাতের বেলা ঘুমের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। একে ‘নকটারনাল এনিউরেসিস’ বলা হয়। সাধারণত ছেলেশিশুদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যের মধ্যে এ অভ্যাস ছিল বা রয়েছে। সাধারণভাবে একে তেমন জটিল রোগ হিসেবে ধরা হয় না। তবে রাতে বিছানা ভেজানোর বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে।

যদি শিশু পাঁচ বছর বয়স পার করে পরপর তিন মাস প্রতি সপ্তাহে অন্তত দুবার রাতে ঘুমের মধ্যে প্রস্রাব করে, তাহলে নকটারনাল এনিউরেসিস বলা হয়। একে মোটাদাগে দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। কোনো কোনো শিশু আছে, যারা কখনোই রাতে প্রস্রাব ধরে রাখার ক্ষমতা অর্জন করেনি, এ ক্ষেত্রে বলা হয়, এরা প্রাইমারি নকটারনাল এনিউরেসিসে ভুগছে।

আবার একদল শিশু আছে, যারা হয়তো ছয় মাস অথবা তার বেশি সময় ধরে রাতে বিছানা ভেজায় না; তারপর আবার বিছানা ভেজানো শুরু করে। এরা সেকেন্ডারি নকটারনাল এনিউরেসিসে ভুগছে।

মূত্রনালির সংক্রমণ, শারীরিক অস্বাভাবিকতা, ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা, স্নায়বিক ত্রুটি, মানসিক চাপ, জেনেটিক ত্রুটি, কোষ্ঠকাঠিন্য, বিভিন্ন ওষুধের প্রভাব, শিশুর বিকাশ বিলম্বিত হওয়ার কারণে নকটারনাল এনিউরেসিস হতে পারে।

এ সমস্যা নিয়ে অভিভাবক যারপরনাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও বিব্রত থাকেন। আবার শিশুদেরও আত্মসম্মানে বেশ আঘাত করে। এর থেকে মুক্তির জন্য শিশুর বেশ কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করার পাশাপাশি ওষুধের মাধ্যমেও চিকিৎসা রয়েছে। তবে সবার আগে দেখতে হবে, শিশুর মূত্রনালির সংক্রমণ, ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা, মানসিক সমস্যা অথবা কোনো ওষুধের প্রভাবে এমনটা হচ্ছে কি না।

প্রথমেই অভিভাবককে আশ্বস্ত করতে হবে। সম্ভব হলে তাঁরা চার্ট বা ডায়েরিতে রাতে শিশুর বিছানা ভেজানোর হিসাব রাখতে পারেন। যে রাতে শিশু বিছানা ভেজায় না, সেগুলোর জন্য শিশুকে ছোট ছোট পুরস্কার দিয়ে উৎসাহিত করা যেতে পারে।

শিশুর শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পানির পরিমাণের বেশির ভাগটা দিনের বেলায় দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। সন্ধ্যার পর থেকে পানি কম খাওয়াতে হবে। শিশুকে অতিরিক্ত পানীয়জাতীয় জিনিস, যেমন কোল্ড ড্রিংকস, কফি, চা, চিনি ইত্যাদি কম খাওয়াতে হবে। ঘুমাতে যাওয়ার কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে থেকে পানি খাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। শিশুকে বিছানায় নেওয়ার আগে ওয়াশরুম ব্যবহার করতে উৎসাহিত করতে হবে। শিশুকে ঘুমের মধ্যে তিন থেকে চার ঘণ্টার মাঝখানে তুলে প্রস্রাব করাতে হবে, এ জন্য অ্যালার্ম দিয়ে রাখা যেতে পারে।

শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে তার সমাধান করতে হবে, কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে। শিশুকে নিয়মিত ওয়াশরুম ব্যবহারের ব্যাপারে অভ্যস্ত করতে হবে।

এত সব চেষ্টার পরও যদি রাতে বিছানা ভেজানোর অভ্যাস না কমে, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়ানোর প্রয়োজন হতে পারে।

ডা.

ফারাহ দোলা, বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

আরও পড়ুনজরায়ু ক্যানসার প্রতিরোধে টিকা বেশ কার্যকর২৫ অক্টোবর ২০২৩

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

লামিনে ‘মেসি’ ইয়ামাল

১৭ বছর বয়সী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো: ১৯ ম্যাচ, ৫ গোল, ৪ গোলে সহায়তা।

১৭ বছর বয়সী লিওনেল মেসি: ৯ ম্যাচ, ১ গোল, গোলে সহায়তা নেই।

১৭ বছর বয়সী লামিনে ইয়ামাল: ১০০ ম্যাচ, ২২ গোল, ৩৩ গোলে সহায়তা।

মেসি–রোনালদোর সঙ্গে তুলনা নয়, লামিনে ইয়ামালের শুরুটা বোঝাতে এই পরিসংখ্যান হাজির করেছে টিএনটি স্পোর্টস। ধূমকেতুর মতো শুরু হলেও ধূমকেতুর মতোই মিলিয়ে যাওয়ার পাত্র তিনি নন।

বার্সেলোনার এস্তাদি অলিম্পিক লুইস কোম্পানিসে  গত রাতের ম্যাচটি স্মরণ করতে পারেন। ৬ গোলের থ্রিলার, যেখানে বার্সেলোনা–ইন্টার মিলান সেমিফাইনাল প্রথম লেগের ‘ক্লাসিক’ লড়াই ৩–৩ গোলে অমীমাংসীত। দুই দলের হয়েই ‘সুপার হিরো’ ছিলেন বেশ কজন। ইন্টারের যেমন ডেনজেল ডামফ্রিস ও মার্কাস থুরাম, বার্সার তেমনি রাফিনিয়া, ফেরান তোরেসরা। কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে ঠিকই রবির কিরণের মতো আলো দিয়েছেন এক কিশোর—লামিনে ইয়ামাল নাসরাউয়ি এবানা। সংক্ষেপে লামিনে ইয়ামাল।

আরও পড়ুন৬ গোলের থ্রিলারে বার্সেলোনা–ইন্টার সেয়ানে সেয়ানে টক্কর৮ ঘণ্টা আগে

২৪ মিনিটে ইয়ামালের করা গোলটির প্রসঙ্গে পরে আসা যাবে। যেভাবে খেলেছেন তাতে গোলটি না করলেও লোকে কাল রাতে তাঁর পারফরম্যান্স মনে রাখতেন। পরিসংখ্যান বলছে ১০২টি টাচ, একটি গোল, ২টি গোল হওয়ার মতো পাস, ৬টি শট (পোস্টে মেরেছেন দুবার) এবং ১০টির মধ্যে ৬টি সফল ড্রিবলিং।

কিন্তু পরিসংখ্যানে এ তথ্য নেই—মাঠে ডান প্রান্তকে ইয়ামাল ফাইনালে ওঠার হাইওয়ে বানিয়ে যতবার কাট–ইন করে ইন্টারের বক্সে ঢুকেছেন, সেটা আসলে ইতালিয়ান ক্লাবটির রক্ষণের জন্য দুঃস্বপ্নের। প্রতিবারই মৌমাছির মতো ছেঁকে ধরা হয়েছে ইয়ামালকে। কিন্তু আটকানো কি সম্ভব হয়েছে? রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওগুলো ভাসছে। সেসব আসলে ইয়ামালের পায়ের কারুকাজে ইন্টারের রক্ষণকে স্রেফ খোলামকুচির মতো উড়িয়ে দেওয়ার ভিডিও।

ইয়ামাল কত ভয়ংকর সেটা এই এক ছবিতেই পরিস্কার। সবাই ছেঁকে ধরেও তাঁকে আটকাতে পারেননি

সম্পর্কিত নিবন্ধ