পাঁচ বছরের পর শিশুর রাতে বিছানা ভেজানো কি কোনো অসুখের লক্ষণ
Published: 7th, February 2025 GMT
শিশুর বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো প্রস্রাব–পায়খানার বেগ হলে অভিভাবকদের বোঝাতে পারা বা বলতে পারা, প্রয়োজনমতো মলমূত্র ধরে রাখতে পারা। দিনের বেলা প্রস্রাব ধরে রাখার সক্ষমতা শিশুরা একটু আগে শেখে, আর রাতের বেলা প্রস্রাব ধরে রাখাটা সাধারণত তিন থেকে চার বছরের মাঝামাঝি শিখে যায়। সাধারণত মেয়েশিশুরা ছেলেশিশুদের চেয়ে একটু আগে শেখে।
কিন্তু দেখা যায়, অনেক শিশু পাঁচ বছরের ওপরে বয়স হয়ে গেলেও ঘুমের মধ্যে প্রস্রাব ধরে রাখতে পারে না। দিনে বা রাতে যেকোনো সময়ই এটা হতে পারে। তবে রাতের বেলা ঘুমের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। একে ‘নকটারনাল এনিউরেসিস’ বলা হয়। সাধারণত ছেলেশিশুদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যের মধ্যে এ অভ্যাস ছিল বা রয়েছে। সাধারণভাবে একে তেমন জটিল রোগ হিসেবে ধরা হয় না। তবে রাতে বিছানা ভেজানোর বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে।
যদি শিশু পাঁচ বছর বয়স পার করে পরপর তিন মাস প্রতি সপ্তাহে অন্তত দুবার রাতে ঘুমের মধ্যে প্রস্রাব করে, তাহলে নকটারনাল এনিউরেসিস বলা হয়। একে মোটাদাগে দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। কোনো কোনো শিশু আছে, যারা কখনোই রাতে প্রস্রাব ধরে রাখার ক্ষমতা অর্জন করেনি, এ ক্ষেত্রে বলা হয়, এরা প্রাইমারি নকটারনাল এনিউরেসিসে ভুগছে।
আবার একদল শিশু আছে, যারা হয়তো ছয় মাস অথবা তার বেশি সময় ধরে রাতে বিছানা ভেজায় না; তারপর আবার বিছানা ভেজানো শুরু করে। এরা সেকেন্ডারি নকটারনাল এনিউরেসিসে ভুগছে।
মূত্রনালির সংক্রমণ, শারীরিক অস্বাভাবিকতা, ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা, স্নায়বিক ত্রুটি, মানসিক চাপ, জেনেটিক ত্রুটি, কোষ্ঠকাঠিন্য, বিভিন্ন ওষুধের প্রভাব, শিশুর বিকাশ বিলম্বিত হওয়ার কারণে নকটারনাল এনিউরেসিস হতে পারে।
এ সমস্যা নিয়ে অভিভাবক যারপরনাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও বিব্রত থাকেন। আবার শিশুদেরও আত্মসম্মানে বেশ আঘাত করে। এর থেকে মুক্তির জন্য শিশুর বেশ কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করার পাশাপাশি ওষুধের মাধ্যমেও চিকিৎসা রয়েছে। তবে সবার আগে দেখতে হবে, শিশুর মূত্রনালির সংক্রমণ, ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা, মানসিক সমস্যা অথবা কোনো ওষুধের প্রভাবে এমনটা হচ্ছে কি না।
প্রথমেই অভিভাবককে আশ্বস্ত করতে হবে। সম্ভব হলে তাঁরা চার্ট বা ডায়েরিতে রাতে শিশুর বিছানা ভেজানোর হিসাব রাখতে পারেন। যে রাতে শিশু বিছানা ভেজায় না, সেগুলোর জন্য শিশুকে ছোট ছোট পুরস্কার দিয়ে উৎসাহিত করা যেতে পারে।
শিশুর শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পানির পরিমাণের বেশির ভাগটা দিনের বেলায় দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। সন্ধ্যার পর থেকে পানি কম খাওয়াতে হবে। শিশুকে অতিরিক্ত পানীয়জাতীয় জিনিস, যেমন কোল্ড ড্রিংকস, কফি, চা, চিনি ইত্যাদি কম খাওয়াতে হবে। ঘুমাতে যাওয়ার কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে থেকে পানি খাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। শিশুকে বিছানায় নেওয়ার আগে ওয়াশরুম ব্যবহার করতে উৎসাহিত করতে হবে। শিশুকে ঘুমের মধ্যে তিন থেকে চার ঘণ্টার মাঝখানে তুলে প্রস্রাব করাতে হবে, এ জন্য অ্যালার্ম দিয়ে রাখা যেতে পারে।
শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে তার সমাধান করতে হবে, কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে। শিশুকে নিয়মিত ওয়াশরুম ব্যবহারের ব্যাপারে অভ্যস্ত করতে হবে।
এত সব চেষ্টার পরও যদি রাতে বিছানা ভেজানোর অভ্যাস না কমে, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়ানোর প্রয়োজন হতে পারে।
ডা.
ফারাহ দোলা, বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’