ফতুল্লায় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে গুলি করে হত্যা
Published: 8th, February 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন হোসাইনকে (৪০) গুলি করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শুক্রবার ভোরে উপজেলার পূর্ব লালপুর রেললাইন এলাকায় তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
মামুন হোসাইন ওই এলাকার প্রয়াত সমন আলীর ছেলে। লালপুর এলাকায় রড, সিমেন্ট ও বালুর ব্যবসা রয়েছে তাঁর। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, তাঁকে ভোরে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
মামুনের বড় ভাই আমজাদ হোসেন বলেন, ‘গভীর রাত পর্যন্ত বাসার অদূরে নিজের প্রতিষ্ঠানে ছিল মামুন। পরে সেখান থেকে ফিরে বাসায় ঘুমাচ্ছিল। বিভিন্ন এলাকা থেকে ভোরে গাড়িতে তার দোকানের মালপত্র আসে। সেজন্য কর্মচারীরা প্রায়ই তাকে সে সময় ডেকে নিয়ে যায়। শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে কয়েকজন তাকে ঘুম থেকে ডেকে নিয়ে যায়। কারা ডেকে নিয়ে গেছে, সেটা জানতে পারিনি। মামুনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে আজাদ নামে এক ছেলে ঘুমায়। গুলির শব্দ শুনে সে বেরিয়ে দেখে, মামুনের নিথর দেহ পড়ে আছে। এরপর সে আমাদের খবর দেয়। দ্রুত উদ্ধার করে ৩০০ শয্যার নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।’
আমজাদ আরও বলেন, ‘কে বা কারা আমার ভাইকে কেন হত্যা করেছে, কিছুই বুঝতে পারছি না। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার কয়েকজন জানান, লালপুর এলাকার প্রভাবশালী আক্তারের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ ৫ আগস্টের পর বিএনপিতে যোগ দেয়। এই গ্রুপের সঙ্গে প্রভাব বিস্তার নিয়ে মামুনের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন রবিন বলেন, এলাকার আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ সম্প্রতি বিএনপিতে যোগদানের চেষ্টা করছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন আক্তার, সোহাগ, রতনসহ বেশ কয়েকজন। মামুন এর বিরোধিতা করেন। এ নিয়ে আক্তার, সোহাগ ও রতনদের একটি গ্রুপ তাঁকে হুমকি দিয়ে আসছিল। এর জেরে হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে।
ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটু বলেন, বিএনপিতে সম্প্রতি সক্রিয় হওয়া একটি গ্রুপের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে শুনেছি। এটি সত্যি কিনা, সে খোঁজ নিতে পারিনি। বিষয়টি অনুসন্ধান করে সত্যতা পেলে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফতুল্লা থানার ওসি শরীফুল ইসলাম বলেন, মামুনের ডান চোখে একটি গুলি লেগে মাথার পেছন দিয়ে বের হয়ে গেছে। নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। হত্যার কারণ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কিছু জানা যায়নি। ঘটনাস্থলের পাশের একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে হুডি-জ্যাকেট পরা দু’জনকে দেখা গেছে।
পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। অভ্যন্তরীণ বিরোধ, পূর্বশত্রুতা, ব্যবসায়িক বিরোধসহ সব বিষয় সামনে রেখে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ এল ক র ব এনপ ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
ফতুল্লায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধ পাকিংয়ে তীব্র যানজট, জনদুর্ভোগ চরমে
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যানজট। এ যানজটের কারণে মাত্র ৫ মিনিটের রাস্তা পেরুতে সময় লেগে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। ফলে প্রতিনিয়ত চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জবাসীকে।
নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগ কিংবা সিটি কর্পোরেশন এ যানজট থেকে জেলাবাসীকে পরিত্রাণ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে দিন যতই বড়ছে ততই বাড়ছে নারায়ণগঞ্জবাসীর দুর্ভোগ।
নারায়ণগঞ্জে এমন কোন সড়ক নাই সেই সড়কে যানজট নাই। মূল সড়ক থেকে শুরু করে অলি-গলি সব জায়গায়ই যানজট আর যানজট। তবে এ যানজটের পেছনে মূল সড়কের যানজটকেই দায়ি করছেন অনেকে।
তারা বলছেন, মূল সড়ক যদি যানজট মুক্ত থাকতো তাহলে এর আশেপাশের সড়কগুলো যানজটের সুষ্টি হতো না। মূল সড়কে তীব্র যানজটের কারণেই এর প্রভাব পড়ছে অন্য সড়কগুলোতেও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে শহরের চাইতে চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণে করেছে। এ সড়ক দিয়ে চলাচলের কথা শুনলেই মানুষ আতকে উঠে। কারণ, যানজটের মাত্র পনেরো মিনিটের রাস্তা পাড় হতে সময় লাগে ঘন্টার পর ঘন্টা।
এ রাস্তায় এ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ীকেও যানজটে আটতে থাকতে দেখা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। একবার যানজটে আটকা পড়লেই দিন শেষ। কখন বাড়ী কিংবা অফিসে যাবেন তার কোন ঠিক নেই।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, এ যানজটের প্রধান কারণ হচ্ছে পঞ্চবটি-মুক্তারপুর ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ। ফ্লাইওভারের কর্মযজ্ঞের ফলে যানবাহনগুলোকে একটু ধীর গতিতে যেতে হয়। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়।
তবে এ যানজটের আরও একটি বড় কারণ চোঁখে পড়ে, আর তা হলো পঞ্চবটি এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচে এবং চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কের দু’পাশে ট্রাক ও কভার্ডভ্যানগুলো অবৈধভাবে পাকিং করে রাখা।
এসব যানবাহনগুলো সড়কের দু’পাশে পার্কিং করে রাখার কারণে মূল সড়ক অনেকটাই সরো হয়ে যায়। ফলে এ সড়ক দিয়ে অন্যসব যানবাহনগুলো ঠিকমত চলাচল করতে পারে না। ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
অথচ, পঞ্চবটির খুব কাছেই রয়েছে ট্রাক ও কভার্ডভ্যান স্ট্যান্ড। যানবাহনের চালকরা ওই স্ট্যান্ডে গাড়ী না রেখে সড়কের পাশে অবৈধভাবে বাঁকাত্যাঁড়া গাড়ীগুলো রাখছেন। এর ফলে যে, ওই সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এবং যানজটের কবলে পড়ে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে, এ বিষয়ে যেন তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই।
তাদের ভাব-নমুনা দেখা মনে হয় যে, তারাই যেন এ সড়কটির মূল মালিক। না পুলিশে তাদের কিছু বলে, না তারা জনগণের কোন কথা শোনে। তারা তাদের ইচ্ছেমত গাড়ীগুলো রেখে যানজটের সৃষ্টি করছেন।
চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে চলাচল করা ভুক্তভোগী পথচারিরা বলছেন, এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করাটা বর্তমানে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এত ভয়াবহ যানজট আমরা কখনোই চোঁখে দেখিনি। পঞ্চবটি ফ্লাইওভারের নিচে যেভাবে ট্রাক-কভার্ডভ্যানগুলো রাখা হয় পুরো সড়কটা তারা কিনে নিয়েছে। পুলিশও কিছু বলে না।
এছাড়া চাষাঢ়া থকে পঞ্চবটি পর্যন্ত পুরো সড়কে দু’পাশেই তারা গাড়ীগুলো রাখছেন। রাস্তাটি পাশে এমনিতেই জায়গা কম, আবার যদি তারা এভাবে গাড়ী রাখেন তাহলে যানজটের সৃষ্টিতো হবেই। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহল বলেন, আসলে নিতাইগঞ্জ এলাকা থেকে ট্রাক স্ট্যান্ডটি সরিয়ে নেয়ার জন্য সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আইভী একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। তিনি শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে পঞ্চবটি এলাকাতে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে একটি ট্রাক স্ট্যান্ড গড়ে তোলেন এবং সেখানে এ স্ট্যান্ডকে স্থানান্তর করেন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি।
এখন তারা কিছু গাড়ী ওই স্ট্যান্ডে রাখে বাকি গাড়ীগুলো সড়ক দখল করে এলোপাথারিভাবে রাখে। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলেও যেন কারো কোন কিছু বলার নেই। কারণ, এ সমস্যা নিয়ে বহুবার ডিসি-এসপির সাথে বসা হয়েছে, আলোচনা হয়েছে কিন্তু সুরাহা হয় নাই।
তবে, ৫ আগস্টে দেশে একটি বড় পরিবর্তনের পর আশা করছিলাম এবার হয়তো এর একটা সুরাহা হবে। কিন্তু না। সড়ক দখল করে রাখা ট্রাক-কভার্ডভ্যানগুলো বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে মানুষকে বাধ্য হয়েই যানজটের মত দুর্ভোগ দুর্দশাময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পথ চলতে হচ্ছে।
তারা বলেন, আসলে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য সেদিন ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এতবড় একটা পরিবর্তন নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু দেশের মানুষ যদি সেই শান্তি শৃঙ্খলা ভোগই করতে না পারে, তাহলে এত প্রাণ দিয়ে কি লাভ হলো?
আমরা জানিন না, প্রশাসন আসলে কাদেরকে খুশি করাতে চাচ্ছেন? মুষ্টিম কিছু চালকদের জন্য হাজার হাজার মানুষের এ কষ্ট কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি করবো, তারা যেন খুব শীঘ্রই এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়। নারায়ণগঞ্জবাসীকে যেন কিছুটা স্বস্তি দেয়।
এ বিষয়ে টিআই করিম বলেন, ৫ আগস্টের পর নারায়ণগঞ্জে যানজটের যে ভয়াবহতা সৃষ্টি হয়েছিলো বর্তমানে তা কমে আসছে। আশাকরছি, আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে। পঞ্চবটি সড়কে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এজন্য এ রুটে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
এমতাবস্তায় যদি কোন চালক রাস্তা দখল করে অবৈধভাবে গাড়ী পার্কিং করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো।