নাটোরের সিংড়ায় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা তুলে নিতে বাধ্য করার জন্য বাদী ও সাক্ষীদের ৯৭ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এসব জমিতে থাকা একাধিক সেচযন্ত্রও বিকল করে দেওয়া হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ডাহিয়া ইউনিয়নের বেড়াবাড়ি গ্রামে। ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা হলেন ওই গ্রামের বাসিন্দা হামিদা বেগম, বিপ্লব সরদার, আনোয়ার হোসেন, আবদুল আলীম, দীপালি বেগম ও খুকু মণি।

ভুক্তভোগী লোকজন ও সিংড়ার থানা সূত্রে জানা যায়, বেড়াবাড়ি গ্রামের মসজিদের অর্থসম্পদের হিসাব নিয়ে বিরোধের জেরে ২০১৬ সালের ৯ জুন সকালে খুন হন রহিদুল ইসলামের ছেলে রেজাউল ইসলাম। এ ঘটনায় রহিদুল বাদী হয়ে প্রতিপক্ষ আমজাদ মোল্লা, জাহাঙ্গীর মোল্লা, সাইফুল ইসলাম, সেন্টু মোল্লাসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তদন্ত শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। বর্তমানে মামলাটি সাক্ষী পর্যায়ে রয়েছে।

মামলার বাদী রহিদুল ইসলাম মারা যাওয়ায় তাঁর স্ত্রী হামিদা বেগম এখন মামলাটি পরিচালনা করছেন। তিনি জানান, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রতিপক্ষ তাঁকে ও তাঁর সাক্ষীদের মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে শুরু করে। কিন্তু তাঁরা (বাদী) তাতে রাজি হননি। এ অবস্থায় তাঁদের মামলা তুলতে বাধ্য করার জন্য মাঠে চাষাবাদ করতে বাধা দেন। পানি নেমে যাওয়ার পর তাঁরা ৯৭ বিঘা জমিতে ধান রোপণের প্রস্তুতি নেন। কিন্তু প্রতিপক্ষ জমিতে গিয়ে জমির সেচযন্ত্র নষ্ট করে দিয়ে পানি ওঠানো বন্ধ করে দেয়। এতে ৯৭ বিঘা জমিতে তাঁরা ধান রোপণ করতে পারেননি। আশপাশের জমিতে ধান রোপণ শেষ হলেও তাঁদের জমি অনাবাদি পড়ে আছে। জমি প্রস্তুত না হওয়ায় বীজতলার চারা বড় হয়ে যাচ্ছে, পানির অভাবে চারা হলুদ হতে শুরু করেছে।
হামিদা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের জমি চলনবিলের মধ্যে; বছরে শুধু একবার ধানের চাষ হয়। এই ধান দিয়ে সারা বছরের খাবারের ব্যবস্থা হয়, সংসারের যাবতীয় খরচ মেটানো হয়। এবার তো আসামিরা আমাদের ধান লাগাতে দিচ্ছে না। এখন আমরা ছেলেমেয়ে নিয়ে কীভাবে বাঁচব?’

গতকাল শনিবার সকালে বেড়াবাড়ি গ্রামের উত্তর মাঠে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে ধান রোপণ করা হয়েছে। এর মাঝে প্রায় ৬০ বিঘা জমি অনাবাদি পড়ে আছে। এ ছাড়া আরও দুটি স্থানে ৩৭ বিঘা জমি অনাবাদি রয়েছে। জমিতে থাকা সেচযন্ত্রে বিদ্যুৎ–সংযোগ থাকলেও যন্ত্রপাতি বিকল অবস্থায় পড়ে আছে। সাংবাদিক আসার খবর শুনে স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুর রশিদ সেখানে আসেন। তিনি বলেন, এবার মাঠের ৯৭ বিঘা জমি অনাবাদি রয়েছে। বছরের একমাত্র ফসল উৎপাদন না হওয়ায় এসব জমির মালিকদের প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি হবে। এসব জমি কেন অনাবাদি রয়েছে, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গ্রামের দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধের জের ধরে চাষাবাদ বন্ধ আছে বলে শুনেছি।’

জমিতে দাঁড়িয়ে কথা হয় এসব জমির মালিক বিপ্লব সরদার, আনোয়ার হোসেন ও আবদুল আলীম এবং তাঁদের বোন দীপালি বেগম ও খুকু মণির সঙ্গে। খুকু মণি বলেন, ‘জমির মালিকানা নিয়ে কোনো বিরোধ নেই। শুধু রেজাউলের মার্ডার কেস জোর করে তুলি নেওয়ার জন্য সাইফুল-সেন্টুরা (আসামি) আমাদের জমিতে ধান লাগাতে দিচ্ছে না। শ্যালো মেশিনের (সেচযন্ত্র) পাইপের মধ্যে ইট, মাটি, বাঁশ ঢুকায়ে মেশিন বন্ধ করি রাখছে। আমরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দিছি, কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি।’

জমির মালিকানা নিয়ে কোনো বিরোধ নেই। শুধু রেজাউলের মার্ডার কেস জোর করে তুলি নেওয়ার জন্য সাইফুল-সেন্টুরা (আসামি) আমাদের জমিতে ধান লাগাতে দিচ্ছে না। শ্যালো মেশিনের (সেচযন্ত্র) পাইপের মধ্যে ইট, মাটি, বাঁশ ঢুকায়ে মেশিন বন্ধ করি রাখছে।খুকু মণি, ভুক্তভোগী নারী

অভিযুক্ত সাইফুল প্রামাণিক (নাটোর শহর কৃষক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক) মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাদের (বাদী) অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। হত্যা মামলাটি আমরা হাইকোর্টে রিভিশন করে রেখেছি। এ অবস্থায় মামলা তোলা সম্ভব নয়। তাই মামলা না তোলার জন্য জমি চাষ করতে না দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’

সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসমাউল হক জানান, তিনি এ ধরনের অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম জানান, জমিতে চাষাবাদ করতে না পারার একটি অভিযোগ তাঁর দপ্তরে এসেছে। তিনি বিষয়টি কৃষি কর্মকর্তাকে দেখার জন্য বলেছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল ইসল ম আম দ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

করিডর দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসতে হবে নির্বাচিত সংসদ থেকে: তারেক রহমান

করিডর দেওয়া না–দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জনগণের কাছ থেকে আসতে হবে বলে মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত আসতে হবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জাতীয় সংসদের মাধ্যমে।

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে মহান মে দিবসে আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে ‘করিডর’ নিয়ে কথা বলেন তারেক রহমান। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারের রাখাইনে সহায়তা পাঠানোর জন্য ‘মানবিক করিডর’ স্থাপন নিয়ে চলমান আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণ মনে করে, করিডর দেওয়া না–দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে হবে জনগণের কাছ থেকে। সিদ্ধান্ত আসতে হবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জাতীয় সংসদের মাধ্যমে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক বিশ্বের দেশে দেশে এটাই নিয়ম, এটাই রীতি।’

জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আয়োজিত এই সমাবেশে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, অভ্যন্তরীণ যুদ্ধে লিপ্ত মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর জন্য বাংলাদেশকে করিডর হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার নাকি নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্বের সঙ্গে জড়িত এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিন্তু জনগণকে জানায়নি। এমনকি জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও কোনো আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করেনি।

দেশের জনগণকে না জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে কি না কিংবা নেওয়া উচিত কি না, এই মুহূর্তে সেই বিতর্ক তুলতে চান না উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বিএনপির বক্তব্য স্পষ্ট—বিদেশিদের স্বার্থ নয়, অন্তর্বর্তী সরকারকে সবার আগে দেশের জনগণের স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে।

ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানের পর এ বছর রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে সহনীয় থাকায় অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানান তারেক রহমান। তবে তিনি বলেন, রমজান শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার চাল ও তেলের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। চাল–তেলের দাম বেড়েছে কিন্তু মানুষের আয় বাড়েনি। তাহলে জনগণ এখন তাদের এমন ভোগান্তির কথা কার কাছে, কোথায় কীভাবে বলবে?

নয়াপল্টনে মহান মে দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের উদ্যোগে সমাবেশে নেতা-কর্মীদের একাংশ। ঢাকা, ১ মে

সম্পর্কিত নিবন্ধ