নাটোরে হত্যা মামলা তুলে নিতে চাপ, ধান রোপণে বাধা দেওয়ার অভিযোগ
Published: 9th, February 2025 GMT
নাটোরের সিংড়ায় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা তুলে নিতে বাধ্য করার জন্য বাদী ও সাক্ষীদের ৯৭ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এসব জমিতে থাকা একাধিক সেচযন্ত্রও বিকল করে দেওয়া হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ডাহিয়া ইউনিয়নের বেড়াবাড়ি গ্রামে। ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা হলেন ওই গ্রামের বাসিন্দা হামিদা বেগম, বিপ্লব সরদার, আনোয়ার হোসেন, আবদুল আলীম, দীপালি বেগম ও খুকু মণি।
ভুক্তভোগী লোকজন ও সিংড়ার থানা সূত্রে জানা যায়, বেড়াবাড়ি গ্রামের মসজিদের অর্থসম্পদের হিসাব নিয়ে বিরোধের জেরে ২০১৬ সালের ৯ জুন সকালে খুন হন রহিদুল ইসলামের ছেলে রেজাউল ইসলাম। এ ঘটনায় রহিদুল বাদী হয়ে প্রতিপক্ষ আমজাদ মোল্লা, জাহাঙ্গীর মোল্লা, সাইফুল ইসলাম, সেন্টু মোল্লাসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তদন্ত শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। বর্তমানে মামলাটি সাক্ষী পর্যায়ে রয়েছে।
মামলার বাদী রহিদুল ইসলাম মারা যাওয়ায় তাঁর স্ত্রী হামিদা বেগম এখন মামলাটি পরিচালনা করছেন। তিনি জানান, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রতিপক্ষ তাঁকে ও তাঁর সাক্ষীদের মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে শুরু করে। কিন্তু তাঁরা (বাদী) তাতে রাজি হননি। এ অবস্থায় তাঁদের মামলা তুলতে বাধ্য করার জন্য মাঠে চাষাবাদ করতে বাধা দেন। পানি নেমে যাওয়ার পর তাঁরা ৯৭ বিঘা জমিতে ধান রোপণের প্রস্তুতি নেন। কিন্তু প্রতিপক্ষ জমিতে গিয়ে জমির সেচযন্ত্র নষ্ট করে দিয়ে পানি ওঠানো বন্ধ করে দেয়। এতে ৯৭ বিঘা জমিতে তাঁরা ধান রোপণ করতে পারেননি। আশপাশের জমিতে ধান রোপণ শেষ হলেও তাঁদের জমি অনাবাদি পড়ে আছে। জমি প্রস্তুত না হওয়ায় বীজতলার চারা বড় হয়ে যাচ্ছে, পানির অভাবে চারা হলুদ হতে শুরু করেছে।
হামিদা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের জমি চলনবিলের মধ্যে; বছরে শুধু একবার ধানের চাষ হয়। এই ধান দিয়ে সারা বছরের খাবারের ব্যবস্থা হয়, সংসারের যাবতীয় খরচ মেটানো হয়। এবার তো আসামিরা আমাদের ধান লাগাতে দিচ্ছে না। এখন আমরা ছেলেমেয়ে নিয়ে কীভাবে বাঁচব?’
গতকাল শনিবার সকালে বেড়াবাড়ি গ্রামের উত্তর মাঠে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে ধান রোপণ করা হয়েছে। এর মাঝে প্রায় ৬০ বিঘা জমি অনাবাদি পড়ে আছে। এ ছাড়া আরও দুটি স্থানে ৩৭ বিঘা জমি অনাবাদি রয়েছে। জমিতে থাকা সেচযন্ত্রে বিদ্যুৎ–সংযোগ থাকলেও যন্ত্রপাতি বিকল অবস্থায় পড়ে আছে। সাংবাদিক আসার খবর শুনে স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুর রশিদ সেখানে আসেন। তিনি বলেন, এবার মাঠের ৯৭ বিঘা জমি অনাবাদি রয়েছে। বছরের একমাত্র ফসল উৎপাদন না হওয়ায় এসব জমির মালিকদের প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি হবে। এসব জমি কেন অনাবাদি রয়েছে, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গ্রামের দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধের জের ধরে চাষাবাদ বন্ধ আছে বলে শুনেছি।’
জমিতে দাঁড়িয়ে কথা হয় এসব জমির মালিক বিপ্লব সরদার, আনোয়ার হোসেন ও আবদুল আলীম এবং তাঁদের বোন দীপালি বেগম ও খুকু মণির সঙ্গে। খুকু মণি বলেন, ‘জমির মালিকানা নিয়ে কোনো বিরোধ নেই। শুধু রেজাউলের মার্ডার কেস জোর করে তুলি নেওয়ার জন্য সাইফুল-সেন্টুরা (আসামি) আমাদের জমিতে ধান লাগাতে দিচ্ছে না। শ্যালো মেশিনের (সেচযন্ত্র) পাইপের মধ্যে ইট, মাটি, বাঁশ ঢুকায়ে মেশিন বন্ধ করি রাখছে। আমরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দিছি, কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি।’
জমির মালিকানা নিয়ে কোনো বিরোধ নেই। শুধু রেজাউলের মার্ডার কেস জোর করে তুলি নেওয়ার জন্য সাইফুল-সেন্টুরা (আসামি) আমাদের জমিতে ধান লাগাতে দিচ্ছে না। শ্যালো মেশিনের (সেচযন্ত্র) পাইপের মধ্যে ইট, মাটি, বাঁশ ঢুকায়ে মেশিন বন্ধ করি রাখছে।খুকু মণি, ভুক্তভোগী নারীঅভিযুক্ত সাইফুল প্রামাণিক (নাটোর শহর কৃষক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক) মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাদের (বাদী) অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। হত্যা মামলাটি আমরা হাইকোর্টে রিভিশন করে রেখেছি। এ অবস্থায় মামলা তোলা সম্ভব নয়। তাই মামলা না তোলার জন্য জমি চাষ করতে না দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’
সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসমাউল হক জানান, তিনি এ ধরনের অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম জানান, জমিতে চাষাবাদ করতে না পারার একটি অভিযোগ তাঁর দপ্তরে এসেছে। তিনি বিষয়টি কৃষি কর্মকর্তাকে দেখার জন্য বলেছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল ইসল ম আম দ র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
যে কারণে ইরানের তেল ও গ্যাস স্থাপনায় হামলা
ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তেল ও গ্যাস স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। মধ্যপ্রাচ্যের এ দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে কয়েক দশক ধরে বৈরিতা চলছে। তবে এবারই প্রথম ইসরায়েল ইরানে হামলা চালানোর পর দুই পক্ষ সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি হামলা তীব্র হতে থাকায় বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের বাজারে অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত শনিবার গভীর রাতে ইরানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েল একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি ডিপোতে হামলা চালিয়েছে। একই সঙ্গে রাজধানী তেহরানে একটি তেল শোধনাগারেও আগুন ধরে যায়। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছেন।
বিশ্বের অন্যতম বড় গ্যাসক্ষেত্র ‘সাউথ পার্স’-এ ইসরায়েলের হামলায় আগুন লাগার পর ইরান আংশিকভাবে এ ক্ষেত্রে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। ইরান কাতারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করে থাকে।
ইসরায়েল নজিরবিহীনভাবে ইরানের জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম আরও বাড়তে পারে। দুই দেশই একে অন্যের ভূখণ্ডে আরও বড় ধরনের হামলার হুমকি দিচ্ছে।
ইরান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস ও তৃতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল মজুতের অধিকারী– এই তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসনের (ইআইএ) দেওয়া। ফলে দেশটির জ্বালানি অবকাঠামো দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তু ছিল। তবে এতদিন ইসরায়েল ইরানের জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে হামলা এড়িয়ে চলছিল, বিশেষ করে তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের চাপ ছিল। কিন্তু এবার তা বদলে গেছে।
গত শনিবার রাতে তেহরানের উত্তর-পশ্চিমে শাররান জ্বালানি ডিপো ও শহরের দক্ষিণে শার-রে অঞ্চলে অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহৎ তেল শোধনাগারে বড় ধরনের আগুন লাগে। এ ছাড়া ইরানের দক্ষিণ বুশেহর প্রদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র সাউথ পার্স লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল।
হামলায় সাউথ পার্সের ‘ফেইজ ১৪’ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে আগুন লাগে। ফলে এখানে দৈনিক ১ দশমিক ২ কোটি ঘনমিটার গ্যাস উৎপাদনকারী একটি অফশোর প্ল্যাটফর্ম বন্ধ হয়ে গেছে।
ইসরায়েলের হামলার প্রথম দিনে তেল ও গ্যাস স্থাপনা বাদ পড়লেও বাজারে তেলের দাম প্রায় ৯ শতাংশ বেড়ে যায়। সোমবার বিশ্ববাজারে তেলের দামে আরও বড় উল্লম্ফন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্য ইনস্টিটিউটের গবেষক অ্যালান এয়ার বলেন, ইসরায়েল চায়, ইরানের ওপর হামলায় যুক্তরাষ্ট্রও জড়িয়ে পড়ুক। তাদের লক্ষ্য, ইরানের এই সরকারের পতন ঘটানো। ইরানের সামরিক প্রতিক্রিয়া ছাড়া উপায় নেই। কারণ, দেশের অভ্যন্তরে সম্মান রক্ষার বিষয় আছে। কিন্তু ইসরায়েলে বড় ধরনের ক্ষতি করার মতো ক্ষমতা ইরানের নেই। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানের বন্ধুর সংখ্যা কম। আর থাকলেও ইসরায়েল পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক মতামতকে পাত্তা দেয় না– বলেন তিনি।