খুলনার ছয়টি আসনে জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা
Published: 9th, February 2025 GMT
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী খুলনায় দল গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছে। খুলনা মহানগর ও জেলার বিভিন্ন ইউনিটে কমিটি গঠন করার পাশাপাশি আবারও চালু করা হয়েছে দলীয় কার্যালয়। সেই সঙ্গে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য খুলনার ছয়টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে দলটি।
আজ রোববার নগরের আল ফারুক সোসাইটিতে এক সমাবেশে খুলনার তিনটি আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক। এর আগে আরও তিনটি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়।
সমাবেশে আব্দুল খালেক বলেন, ‘বহু রক্তের বিনিময়ে আজকে আমরা নিশ্বাস ফেলে কথা বলার বাংলাদেশ পেয়েছি। এখন আবার বাংলাদেশকে নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে যে গণবিপ্লব, নতুন স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতাকে বিপর্যস্ত করার জন্য নতুন কোনো চক্রান্ত করা হলে তা প্রতিহত করা হবে।’
দলীয় সূত্রে জানা যায়, খুলনা-১ আসনে (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) বটিয়াঘাটা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির শেখ আবু ইউসুফ, খুলনা-২ আসনে (সদর-সোনাডাঙ্গা ১৬-৩১ নম্বর ওয়ার্ড) কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন এবং খুলনা-৩ আসনে (খালিশপুর-দৌলতপুর-খানজাহান আলী ১-১৫ নম্বর ওয়ার্ড আড়ংঘাটা ও যোগীপোল ইউনিয়ন) কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য মহানগর আমির মাহফুজুর রহমানকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। খুলনা-২ ও খুলনা-৩ আসনে এর আগে জামায়াত কখনো প্রার্থী দেয়নি।
এর আগে খুলনা-৪ আসনে (রূপসা-দিঘলিয়া-তেরখাদা) খুলনা জেলা নায়েবে আমির মাওলানা কবিরুল ইসলাম, খুলনা-৫ আসনে (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও আসনটির সাবেক সংসদ সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং খুলনা-৬ আসনে (কয়রা-পাইকগাছা) কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদের নাম ঘোষণা করা হয়। এ নিয়ে জামায়াতে ইসলামী খুলনা ছয়টি আসনের সব কটিতে প্রার্থী ঘোষণা করল। এ ছাড়া সাতক্ষীরার চারটি ও বাগেরহাটের চারটি আসনেও জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী ঘোষণা করেছে।
প্রার্থী ঘোষণা করার বিষয়ে খুলনা মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা কোনো নির্বাচনী প্রস্তুতির বিষয় নয়। আমাদের দলের পদ্ধতিগুলো একটু আলাদা, অন্যদের সঙ্গে মেলে না। প্রথমত, এখানে কেউ নিজে প্রার্থী হন না, নির্বাচনী কাজও করেন না। কোনো আসনে ভবিষ্যতে নির্বাচনে প্রার্থী কে হবেন, সেই নির্বাচন ৫ বছর পর হতে পারে, ১০ বছর পরে হতে পারে, কোনো নির্বাচনে যদি ওই আসনে আমাদের দল থেকে অংশ নেন, তাহলে কে প্রার্থী হবেন—সেটা কেন্দ্র বাছাই করে। আমাদের যেসব জনশক্তি আছে, দায়িত্বশীলরা আছেন এবং জনগণেরও কিছু ক্যাটাগরি আছে। এর ওপরে একটা মতামত নিয়ে আলাপ–আলোচনার পর উচ্চপর্যায়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার পর এটা ঘোষণা দেওয়া হয়।’
শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন আরও বলেন, এটা কোনো নির্বাচনের কার্যক্রম এগিয়ে রাখার কোনো বিষয় না। আসনগুলোতে প্রার্থী ঘোষণা হয়ে থাকছে। এসব আসনে জামায়াত থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া হলে ঘোষিত প্রার্থীরাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও খুলনা জেলা আমির এমরান হুসাইন, নায়েবে আমির কবিরুল ইসলাম, মহানগর নায়েবে আমির নজিবুর রহমান, জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, মহানগর সেক্রেটারি শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, মহানগর সহকারী সেক্রেটারি শেখ জাহাঙ্গীর আলম, আজিজুল ইসলাম ফারাজী, আ ন ম আব্দুল কুদ্দুস, আবু বকর সিদ্দিক, মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসেন, সেক্রেটারি রাকিব হাসান প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল ইসল ম সদস য ও ইসল ম র সহক র
এছাড়াও পড়ুন:
খাদি কাপড়ের জিআই স্বীকৃতিতে আনন্দে ভাসছেন কুমিল্লাবাসী
কুমিল্লার ঐতিহ্যের স্মারক খাদি কাপড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় আনন্দিত জেলার মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন, অবশেষে পেয়েছেন সেই সুখবর। গতকাল বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে স্বীকৃতির এই সনদ দেওয়া হয়।
কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় এলাকার রামঘাটলা থেকে শুরু করে রাজগঞ্জ পর্যন্ত অন্তত ৩০০ খাদি পোশাকের দোকান। কান্দিরপাড়ের খাদি বসুন্ধরা দোকানের স্বত্বাধিকারী জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, শৈল্পিক ছোঁয়ায় কুমিল্লার খাদি এখন দেশ-বিদেশে বেশ সমাদৃত। ঐতিহ্যের খাদিতে এখন লেগেছে আধুনিকতা ও নান্দনিকতার ছোঁয়া। শত বছরের বেশি পুরোনো খাদির আরও অনেক আগেই জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়া উচিত ছিল। অবশেষে স্বীকৃতি মিলেছে, এতেই আনন্দিত সবাই।
একই এলাকার খাদি জ্যোৎস্না স্টোরের মালিক তপন পাল বলেন, ‘কুমিল্লার প্রতিটি মানুষ খাদির এমন স্বীকৃতিতে আনন্দিত। শত বছর পার হলেও এখনো দেশ-বিদেশে খাদি কাপড়ের ব্যাপক চাহিদা।’
কুমিল্লার ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধীর ডাকে সমগ্র ভারতবর্ষে অসহযোগ আন্দোলনের সময় কুমিল্লায় খাদিশিল্প প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ওই সময় বিদেশি পণ্য বর্জন করার জন্য আওয়াজ ওঠে। সর্বত্র এক আওয়াজ ‘মোটা কাপড়-মোটা ভাত’। সে সময় ভারতবর্ষের মানুষ দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে খাদি পোশাক ব্যবহার শুরু করেছিলেন। খাদের (গর্তে) চরকায় বসে এ কাপড় তৈরি করা হয় বলে এর নামকরণ হয় ‘খাদি’। শুরুতে মহাত্মা গান্ধী নিজেও কুমিল্লায় এসে খাদের চরকায় বসে খাদি কাপড় তৈরিতে উৎসাহ দেন।
এই গবেষক আরও বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ভারত পৃষ্ঠপোষকতা প্রত্যাহার করে নিলে কুমিল্লার খাদিশিল্প সংকটে পড়ে। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হাল ধরেন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) প্রতিষ্ঠাতা আখতার হামিদ খান।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার বলেন, জেলা প্রশাসনের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় গত বছর কুমিল্লার রসমালাই জিআই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কুমিল্লার খাদি ও বিজয়পুরের মৃৎশিল্পের জিআই স্বীকৃতির জন্য তখন থেকেই কাজ শুরু হয়। কুমিল্লার ‘ব্র্যান্ড’ হিসেবে পরিচিত তিনটি পণ্যের মধ্যে দুটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। যে একটি বাকি আছে, সেটিও দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বীকৃতি পাবে বলে তিনি আশাবাদী।