বিচারক এজলাসে ওঠেননি, সাইবার ট্রাইব্যুনালে কোনো মামলার শুনানি হয়নি
Published: 9th, February 2025 GMT
ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে আজ রোববার মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। এজলাসে ওঠেননি সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নূরে আলম। আইনজীবী সমিতি বলছে, সংক্ষুব্ধ আইনজীবীরা ওই আদালতে শুনানি করতে যাননি।
সাইবার ট্রাইব্যুনালের দুই কর্মচারী প্রথম আলোকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলার এক আসামির জামিন আবেদন নাকচ করেন আদালত। জামিন আবেদন নাকচ হওয়ার পর আইনজীবীরা সংক্ষুব্ধ হন। আজ সকাল ১০টার দিকে ঢাকা আইনজীবী সমিতির কয়েকজন সদস্য আদালতের কর্মচারীদের জানিয়ে দেন, বিচারক যদি এজলাসে ওঠেন, যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়, তার দায় আইনজীবীরা নেবেন না।
এ বিষয়ে সাইবার ট্রাইব্যুনালের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) মিরাজ উদ্দিন সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জামিন আবেদন নাকচ হওয়ার পর আইনজীবীর সঙ্গে বিচারকের বাতচিৎ হয়। আজ সকালে ঢাকা বারের বেশ কয়েকজন আইনজীবী আদালতে এসে কর্মচারীদের বলে যান, বিচারক যেন এজলাসে না ওঠেন। আইনজীবীদের ওই কথা বিচারককে জানানো হয়। ফলে মামলার কোনো শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি।’
অবশ্য আইনজীবী শামসুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, জামিন আবেদন নাকচ করার বিষয় নিয়ে আদালতের সঙ্গে তাঁর কোনো বাতচিৎ হয়নি। জামিন দেওয়া না–দেওয়া আদালতের এখতিয়ার। জামিনের বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্বের ঘটনা ঘটেনি; বরং অনেক আইনজীবীর অভিযোগ, তিনি আইনজীবীদের সঙ্গে বিচারকসুলভ আচরণ করেননি। সাধারণ আইনজীবীরা ওনার আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলম মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তাঁরা বলেন, আগে থেকে সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারকের ব্যবহারে অনেক সাধারণ আইনজীবী অসন্তুষ্ট। বৃহস্পতিবার জামিন আবেদন নাকচের পর সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর সঙ্গে বিচারকসুলভ আচরণ করেননি বলেও আইনজীবীরা সমিতির কাছে অভিযোগ করেছেন। এ জন্য সাধারণ আইনজীবীরা ওই আদালতে আজ শুনানি করতে যাননি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এনায়েত করিম ও গোলাম মোস্তফা পাঁচ দিন রিমান্ডে
রাজধানীর রমনা থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম ও এস এম গোলাম মোস্তফা আজাদকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক আজ বুধবার এ আদেশ দেন।
প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী।
পিপি ওমর ফারুক ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত এনায়েত করিম চৌধুরী ও এস এম গোলাম মোস্তফাকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ। আসামিপক্ষ থেকে জামিনের আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত মাসুদ ও মোস্তফাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে এনায়েত করিম ওরফে মাসুদ করিমকে গত সোমবার দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। বাস্তবে তিনি র-এর (ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা) এজেন্ট। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মিশন নিয়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। বর্তমান সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর দুটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। সেটির ফরেনসিক পরীক্ষা করা হলে তাঁর ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আরও অনেক নতুন তথ্য জানা যাবে। এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিমসহ আর কারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত, সেটি জানার জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।
অপরদিকে এনায়েত করিম চৌধুরীর পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, তিনি ৬ সেপ্টেম্বর দেশে এসেছেন, তাঁর আমেরিকায় ফিরে যাওয়ার কথা ১৪ সেপ্টেম্বর। তিনি বাংলাদেশে এসে গুলশানে অবস্থান করছিলেন।
এনায়েত করিম চৌধুরীর আইনজীবী ফারহান এমডি আরাফ বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে তাঁর মক্কেল কোনোভাবেই জড়িত নন। তিনি একজন মার্কিন নাগরিক। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তিনি কোনোভাবে যুক্ত নন।
এর আগে গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরীকে (৫৫) সন্দেহভাজন হিসেবে আটকের পর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার সকালে রাজধানীর মিন্টোরোড থেকে এনায়েত করিম চৌধুরীকে আটক করা হয়। তাঁর কাছ থেকে জব্দ করা পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, তিনি মার্কিন নাগরিক।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, এনায়েত করিম নিজেকে মাসুদ করিম নামে পরিচয় দেন। তিনি নিজেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রধান বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এই পরিচয়ে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখান। ২০১৮ সালের ভোটের আগেও তিনি একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে দেশের বাইরে বৈঠক করেন।
পুলিশ বলছে, গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরী প্রাডো গাড়িতে করে মিন্টোরোড এলাকায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। গাড়ি থামিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করার বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে তাঁকে আটক করে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পাশাপাশি সোমবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন।
সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম বলেছেন, বর্তমান সরকার পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার গঠনে কাজ করতে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। তাঁর দাবি, তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার খুব নাজুক অবস্থায় আছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গেও এই সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করতে বাংলাদেশে এসেছেন। সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন।