বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সম্মেলন শেষে দুটি আলাদা কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পর এই সম্মেলন ঘিরে ষড়যন্ত্র হওয়ার কথা বলেছেন সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। আজ রোববার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, উদীচীর জাতীয় সম্মেলন ঘিরে একটি ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আগে থেকেই তাঁদের শঙ্কা ছিল। যার প্রতিফলন ঘটে সম্মেলনের বিষয়নির্বাচনী কমিটি গঠনের সময়। কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী ও কেন্দ্রীয় সংসদ সভায় এমন একটি বিষয়নির্বাচনী কমিটি গঠন করা হয়, যেখানে উদীচীর কর্মীদের যথাযথ প্রতিফলন হয়নি বলে তাঁর বিশ্বাস। এর পরের ঘটনাপ্রবাহ নিয়েও নিজের অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন তিনি।

উদীচীর তিন দিনের সম্মেলনের শেষ দিন গতকাল শনিবার রাজধানীর শিশু একাডেমি মিলনায়তনে কাউন্সিল অধিবেশন হয়। সেখানে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন নিয়ে গোলযোগ হয়। পরে আলাদা করে দুটি কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। উভয় পক্ষ অধ্যাপক বদিউর রহমানকে সভাপতি ঘোষণা করে। সাধারণ সম্পাদক পদে এক পক্ষে জামসেদ আনোয়ার তপন এবং আরেক পক্ষে বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দের নাম ঘোষণা করা হয়।

আজ এক বিবৃতিতে বদিউর রহমান বলেন, কাউন্সিলে বিষয়নির্বাচনী কমিটি নতুন কেন্দ্রীয় সংসদের প্রস্তাব উত্থাপন করে। এরপর অধিবেশনের সভাপতি (বিষয়নির্বাচনী কমিটির সভাপতি ও সংগঠনের সহসভাপতি হাবিবুল আলম) নতুন নামের প্রস্তাব এবং কেউ নাম প্রত্যাহার করতে চান কি না, তা জানতে চান। এ সময় প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদের জন্য নতুন অনেকগুলো নাম প্রস্তাব করা হয়। সব নাম যাচাই-বাছাই শেষে কেউ নাম প্রত্যাহার করতে চান কি না, তা জানানোর আহ্বান জানান সভাপতি। তখন অনেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন। এমনকি বিষয়নির্বাচনী কমিটির প্রস্তাবিত প্যানেল থেকেও অনেকে নাম প্রত্যাহার করেন। ফলে বিষয়নির্বাচনী কমিটির প্যানেলটি পূর্ণতা হারায়। তা সত্ত্বেও সভাপতি বিষয়নির্বাচনী কমিটির খণ্ডিত প্যানেল পাস করানোর চেষ্টা চালান। এ অবস্থায় কাউন্সিল হাউস ক্রমেই উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং একপর্যায়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকে।

এমন পরিস্থিতিতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সবাইকে শান্ত করার উদ্যোগ নেন বলে জানান বদিউর রহমান। তাঁর অভিযোগ, হাবিবুল আলমের কাছে মাইক্রোফোন দেওয়ার অনুরোধ জানালে তিনি (হাবিবুল) খারাপ ব্যবহার করেন এবং তাঁকে মাইক দেননি। একবার কথা বলা শুরু করতে পারলেও সঙ্গে সঙ্গে হাবিবুল মাইক নিয়ে নেন বলেও তাঁর অভিযোগ। একপর্যায়ে সম্মেলনের দুজন স্বেচ্ছাসেবক নিরাপত্তাঝুঁকির কথা বলে তাঁকে ভেতরে নিয়ে যান এবং কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে বাইরে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, ‘গেটের কাছে গেলে জামসেদ আনোয়ার তপন এসে আমার পাশে দাঁড়ান এবং বলেন, চলুন উদীচী অফিসে যাই।’ পরে একজন হৃষ্টপুষ্ট কর্মী রিকশায় তাঁকে প্রায় জড়িয়ে ধরে বসে উদীচী কার্যালয়ে নিয়ে আসেন বলে জানান বদিউর রহমান।

উদীচীর কার্যালয়ের ভেতরে একটি চেয়ারে বসার কয়েক মিনিটের মধ্যেই জামসেদ আনোয়ার তপন এসে তাঁর বাঁ পাশে বসেন বলে জানান বদিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘এ সময় সামনে বসা ছিলেন হাবিবুল আলমসহ কয়েকজন। একপর্যায়ে হাবিবুল আলম আমাকে বলেন, “আমরা আপনাকে মাথায় তুলে রাখব।” বিষয়টি শুনে আমার হাসি পেয়েছে। এরপর আরিফ নুর, রহমান মুফিজা এসে জামসেদ আনোয়ার তপনকে বলতে থাকেন, “আমাদের নতুন কমিটির প্রথম সভা এখানেই করতে হবে।” জামসেদ আনোয়ার তপনের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় আমি নিজের অবস্থান বুঝে ফেলি এবং সভা না করার কথা বলি। বিষয়টি সামাল দেওয়ার জন্য তখন আমি নিজের অসুস্থতার কথা বলতে থাকি এবং হাবিবুল আলম ও জামসেদ আনোয়ার তপনকে কাছে টেনে আমার শারীরিক অবস্থার কথা বলে আমার কোনো রকম দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় সংগঠনকে নিতে হবে বলে জানাই। আমি এ-ও বলি যে আমার মনে হয় এখনই হাসপাতালে যাওয়া উচিত, অ্যাম্বুলেন্স ডাকো। পরক্ষণেই বলি, আমি আগে বাসায় যাই, সেখানে প্রেশার ও সুগার মেপে প্রয়োজনে বাসা থেকেই হাসপাতালে যাব। তখন হাবিবুল আলম দয়াপরবশ হয়ে তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িতে আমাকে বাসায় পৌঁছে দেন। বাসার পৌঁছে আমি মোবাইল বন্ধ করে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।’

ভোরে ঘুম ভাঙলে নিজের দায়বদ্ধতা ও কর্তব্যবোধ থেকে সারা দেশের উদীচীর কর্মীদের বিষয়গুলো জানানোর তাগিদ অনুভব করে এই বিবৃতি দিয়েছেন বলে জানান অধ্যাপক বদিউর রহমান।

এদিকে আজ এক সংবাদ সম্মেলনে বদিউর রহমানকে সভাপতি ও জামসেদ আনোয়ার তপনকে সাধারণ সম্পাদক করে ঘোষণা করা উদীচীর নতুন কমিটিকে বৈধ বলে দাবি করেছে সংগঠনটির একটি পক্ষ। বিকেলে তোপখানা রোডে সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি করেন উদীচীর সহসভাপতি হাবিবুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন।

সংবাদ সম্মেলনে জামসেদ আনোয়ার তপন দাবি করেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নেতৃত্ব নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রতিনিধিরা কাউন্সিলে একটি বিষয়নির্বাচনী কমিটি গঠন করেন। সেই বিষয়নির্বাচনী কমিটি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির একটি খসড়া প্রস্তাব প্রতিনিধিদের সামনে উত্থাপন করে এবং তার ওপর নানা মত-দ্বিমত উঠে আসে। এরপর গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হাউসের চূড়ান্ত মত জানতে চাওয়া হয়। হাউসে উপস্থিত প্রতিনিধিদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের বা সমর্থনের ভিত্তিতে অনুমোদন পায় কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি। এবার অধ্যাপক বদিউর রহমানকে সভাপতি ও জামসেদ আনোয়ার তপনকে সাধারণ সম্পাদক করে বিষয়নির্বাচনী কমিটি ৯১ সদস্যের যে খসড়া প্রস্তাব প্রতিনিধিদের সামনে উত্থাপন করেছিল, সেটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে অনুমোদন পায়। এরপর সংগঠনের রীতি অনুযায়ী বিষয়নির্বাচনী কমিটির সভাপতি অধিবেশনে উপস্থিত সবাইকে নিয়ে কমিটির নেতৃবৃন্দকে শপথবাক্য পাঠ করান। সেই শপথবাক্য পাঠ করে কেন্দ্রীয় সংসদের নেতৃত্ব হিসেবে তাঁরা দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।

জামসেদ আনোয়ার আরও বলেন, নবনির্বাচিত এই কমিটির সদস্যরা যখন উদীচী কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন, তখন জানতে পারেন সম্মেলনকক্ষের বাইরে, প্রায় জনশূন্য মাঠে, হাউসে হেরে যাওয়া উদীচীর একটি ক্ষুদ্র অংশ (অমিত রঞ্জন দের অংশ) পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেছে। মাহমুদ সেলিম তাঁদের শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন।

বিষয়টিকে স্পষ্টত সাংগঠনিক বিধি লঙ্ঘন এবং গণতান্ত্রিক রীতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন বলেও দাবি করেন জামসেদ আনোয়ার। তিনি বলেন, এটা রীতিমতো অপরাধ। এই কমিটির কোনো বৈধতা নেই। এই সংবাদ সম্মেলনে উদীচীর সভাপতি বদিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন না।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আরেক কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেছেন, উদীচীর সভাপতি বদিউর রহমান যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটাকে তিনি সমর্থন করেন। অমিত রঞ্জন বলেন, উদীচীর কাউন্সিলে প্রতিনিধিরা সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। সংগঠনের গঠনতন্ত্র সেটাই বলে। সেই প্রতিনিধিদের মতামত না নিয়ে একটি কমিটি ঘোষণা করে এবং তার পক্ষে স্লোগান দিয়ে, রাস্তায় বেরিয়ে মিছিল করে চলে গেলে সেটা বৈধ কমিটি হয়ে যায় না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ন দ র য় কম ট হ ব ব ল আলম কম ট র স র রহম ন অবস থ স গঠন গঠন র

এছাড়াও পড়ুন:

অদৃশ্য শক্তি ও ফ্যাসিষ্টরা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত খোরশেদ

আজ শনিবার সকালে দেশের প্রধান হোসিয়ারী শিল্পের মার্কেট নগরীর নয়ামাটি এলাকায় ব্যাবসায়ী ও সাধারন মানুষের মাঝে গণসংযোগ করে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীকে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেয়ার আহবান ও ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ করেন নারায়নগঞ্জ মহানগর যুবদলের সদ্য সাবেক সভাপতি ও মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, চারবারের সাবেক কাউন্সিলর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন প্রাপ্ত প্রার্থী  মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। 

গণসংযোগ কালে খোরশেদ ব্যাবসায়ী ও জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, ব্যাবসা বান্ধব স্থিতিশীল রাষ্টের জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে  নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই।কিন্ত দেশী বিদেশী অদৃশ্য শক্তি ও পরাজিত ফ্যাসিষ্টরা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে।

যথা সময়ে নির্বাচন না হলে,দেশে একটি রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হলে দেশে স্থিতিশীল স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে না,আইনশৃংখলা ও অর্থনীতির উন্নতি হবে না,মুদ্রাস্ফীতি না কমাতে পারলে জনগনের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।

তাই নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র রুখতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান খোরশেদ।তিনি আরো বলেন,কোন কোন উপদেষ্টা মিষ্টি কথার আড়ালে দেশী বিদেশী কুচক্রী মহলের এজেন্ট হয়ে কাজ করছেন,যা আমাদের কাম্য নয়।

এসময় খোরশেদ আরো বলেন,আওয়ামী দু:শাষনের মাধ্যমে দেশের প্রত্যেকটি সেক্টর ধংস করে ফেলেছে।তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের জন্য আমাদের সবাই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

গণসংযোগ কালে খোরশেদ এর সাথে অসংখ্য নেতাকর্মী ও হোসিয়ারী ব্যাবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন: দুলু
  • অদৃশ্য শক্তি ও ফ্যাসিষ্টরা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত খোরশেদ