চারপাশ খোলা, বাঁশ ও কাগজের ছাউনি দিয়ে একটি ঝুপড়ি দোকানে প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে আছেন ষাটোর্ধ্ব এক নারী। জীর্ণশীর্ণ কাপড় ও শরীর দেখে যে কেউ ভাবতে পারেন, তিনি বিশ্রাম নিচ্ছেন। তাঁর সামনে ছয় থেকে সাত রকমের শীতকালীন সবজির পসরা সাজানো আছে। ছুটির দিন থাকায় কিছুক্ষণ পরপর ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছেন। দাঁড়িপাল্লা দিয়ে ওজন করে তাঁদেরকে ব্যাগে করে সবজি দিচ্ছেন ওই নারী। বিক্রয়মূল্য নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে দরদাম করতেও দেখা যায় তাঁকে।

শনিবার সকালে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক প্রথম ছাত্রী হলের পাশে বেশ কিছুক্ষণ এ দৃশ্য দেখার পর কথা হয় ওই নারীর সঙ্গে। তিনি জানালেন, তাঁর নাম গোলবানু। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর বয়স ১১ ছিল। সে অনুযায়ী এখন তাঁর বয়স ৬৩ হবে। স্বামী জমশেদ আলী অসুস্থ। পরিবারের সদস্য ১১ জন। এর মধ্যে তাঁর এক ছেলে, ছেলের বউ, ছেলের সন্তান, অসুস্থ স্বামীসহ মোট পাঁচজন সদস্য আছেন। অন্যদিকে বিবাহিত মেয়ের স্বামী শারীরিকভাবে রোগাক্রান্ত হওয়ায় তাঁর সন্তানসহ পরিবারের ছয় সদস্য গোলবানুর পরিবারেই থাকেন। গোলবানুর ছেলে দিনমজুরির কাজ করেন। তবে সব দিন কাজ মেলে না। মেয়ে মানুষের বাড়িতে কাজ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন টিয়রবাড়ি এলাকায় তাঁরা বসবাস করেন।

গোলবানুর দোকানের ক্রেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের ছাত্রীরা। ছাত্রীদের কেউ কেউ গোলবানুকে ‘খালা’, কেউ ‘মামি’ বলে সম্বোধন করেন। হলে ব্যক্তিগতভাবে রান্না করার সুযোগ থাকায় ছাত্রীদের অনেকেই নিজের খাবার নিজেই তৈরি করেন। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে সবজি আনতে গিয়ে সময় এবং বাড়তি অর্থ গুনতে হয় তাঁদের। সে জন্য অধিকাংশ ছাত্রীই গোলবানুর কাছ থেকে তরকারি কেনেন।

শনিবার ক্যাম্পাসে ছুটির দিন থাকায় সবজি-তরকারি একটু কম পরিমাণে নিয়ে আসেন গোলবানু। আড়ত থেকে ওই দিন তিনি এক টুকরি টমেটো, ৫ কেজি আলু, ৬ কেজি শিম, ১৫ কেজি বেগুন, ২৪টি ফুলকপি, ১০টি বাঁধাকপি, ৫ কেজি পেঁয়াজের ডাঁটা, ৫ কেজি গাঁজর, আড়াই কেজি কাঁচা মরিচ, ১ কেজি ধনেপাতা, কয়েক আঁটি পুঁইশাক ও লালশাক এনেছেন বলে জানান। এদিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত তাঁর অর্ধেক বিক্রি হয়েছিল।

গোলবানুর দোকানের ক্রেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের ছাত্রীরা.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্ব ইজতেমা মার্চে 

প্রতিবছর জানুয়ারিতে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করা হলেও এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে তা পিছিয়ে মার্চ মাসে করা হবে।

সোমবার (৩ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ এ তথ্য জানিয়েছেন তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ বা শুরায়ী নেজামের শীর্ষ নেতা মুফতি কেফায়েতুল্লাহ আজহারি।

আরো পড়ুন:

শেষ হলো দাওয়াতে ইসলামীর ইজতেমা

দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা শুরু 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিগত বছরগুলোতে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা হলেও আগামী বছর এক পর্বে হবে। মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারী বা সাদপন্থিদের ইজতেমা আয়োজনের সুযোগ থাকবে না। 

মুফতি কেফায়েতুল্লাহ বলেছেন, “তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ তাবলিগি এ মেহনতকে দ্বীনি মেহনত হিসেবে বিশ্বাস করে। দ্বীনি কাজের অংশ হিসেবে বর্তমান সরকারের অনুরোধ শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করে আমরা আগামী বিশ্ব ইজতেমা মার্চে আয়োজনের বিষয়ে একমত হয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, এ সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে সরকারের প্রতি সহযোগিতার শামিল।”

বিশ্ব ইজতেমা সাদপন্থিরা আয়োজন করতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “সরকারের কাছে তারা লিখিত দিয়ে গতবার শেষবারের মতো ইজতেমার আয়োজন করেছিল। সেক্ষেত্রে তাদের আর ইজতেমা করার সুযোগ নেই।”

বিশ্ব ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তিনটি অনুরোধ তুলে ধরা হয়।
১. আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের আগেই ইজতেমার দিন-তারিখ ঘোষণা এবং সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোকে অবহিত করা।

২. ইজতেমা যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দানকে অস্থায়ীভাবে কেপিআই (কি পয়েন্ট ইন্সটলেশন) ঘোষণা।

৩. ইজতেমায় আসা বিদেশি অতিথিদের সময়মতো উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভিসা সহজীকরণ-সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করা।

ঢাকা/রায়হান/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ