আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও কৃষকদের কাছে তার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) শুরু হয়েছে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন অ্যাগ্রিকালচারাল মেশিনারি অ্যান্ড বায়োরিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং (আইসিএএমবিই-২০২৫)।’ দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যাগ্রিকালচারাল মেশিনারি অ্যান্ড বায়োরিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং (বিএসএএমবিই) এবং বাকৃবির কৃষিশক্তি ও যন্ত্র বিভাগ।

আজ বুধবার সকাল সাড়ে নয়টায় সম্মেলনের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলিপ্যাডে কৃষিপ্রযুক্তি মেলার উদ্বোধন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া।

মেলায় এসিআই মোটরস তাদের উদ্ভাবনী কৃষিপ্রযুক্তি প্রদর্শন করেছে, যার মধ্যে ছিল ইয়ানমার পটেটো প্ল্যান্টার, সোনালিকা ট্রাক্টর ও সাইলেজ চপার, কৃষি ড্রোন এবং অন্যান্য আধুনিক যন্ত্রপাতি, যা কৃষির দক্ষতা এবং স্থায়িত্ব উন্নত করতে সহায়ক। আধুনিক ফসল ব্যবস্থাপনা ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণের চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধানের জন্য এই প্রযুক্তিগুলো নিয়ে এসিআই মোটরস কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ (ব্রি) আটটি কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান তাদের উদ্ভাবিত কৃষিপ্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি প্রদর্শন করে।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলনকক্ষে কৃষি গবেষণা, যান্ত্রিকীকরণ এবং প্রযুক্তির উৎকর্ষতা বৃদ্ধিবিষয়ক উদ্বোধনী আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এসিআই মোটরস লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ক্ষেত্রে তাঁদের অবদান, প্রচেষ্টা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁদের উদ্ভাবিত যন্ত্রগুলোর মাঠপর্যায়ের সফলতা ও সুবিধাবিষয়ক তথ্য উপস্থাপন করেন তিনি। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাঁদের তাত্ত্বিক পড়াশোনা কীভাবে দৃশ্যমান করে তুলতে পারেন, এ বিষয়ে অনুপ্রাণিত করেন তিনি।

উপাচার্য  অধ্যাপক এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘কৃষির সব পর্যায়ে যান্ত্রিকীকরণ এখন আবশ্যক। তবে আন্তর্জাতিকভাবে যে যন্ত্রগুলো রয়েছে, সেটির ওপর নির্ভরশীল না থেকে আমাদের নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী যন্ত্র নকশা করতে হবে। কৃষকের আর্থসামাজিক অবস্থার ওপর গুরুত্ব দিয়ে যন্ত্র তৈরি করতে হবে। যন্ত্রের ব্যবহার কৃষককে লাভবান করবে, এই লক্ষ্য নিয়ে এগোতে হবে। প্রযুক্তি ব্যবহারকে পরিবেশবান্ধব, অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক, টেকসই এবং অবশ্যই সহজলভ্য করে তুলতে হবে। পাশাপাশি প্রযুক্তির ব্যবহার যাঁদের বেকার করবে, তাঁদের জীবিকার ব্যবস্থাও প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোতে করতে হবে।’

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কৃষিতে আধুনিক সেচ, ড্রোন ও স্যাটেলাইট প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে কাজ করছে সরকার জানিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া বলেন, কৃষিপ্রযুক্তি গ্রহণের জন্য নীতিমালা করা হয়েছে এবং তা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। দেশের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে। উৎপাদন বাড়াতে যান্ত্রিকীকরণ প্রয়োজন।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ব্যবসায়ী, নীতিনির্ধারক ও কৃষকদের উপস্থিতিতে ডায়ালগ সেশন ও পোস্টার উপস্থাপনা অনুষ্ঠিত হবে। প্লেনারি সেশন, পোস্টার, মৌখিক উপস্থাপনাসহ মোট ১৬০টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ন ত র ক করণ ব যবহ র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনার ফুটপাত পথচারীদের নয়, হকারদের দখলে

খুলনা নগরের প্রধান সড়ক ও ফুটপাত এখন পথচারীদের নয়, হকারদের দখলে। ডাকবাংলা থেকে বড়বাজার পর্যন্ত নগরের প্রধান ব্যবসাকেন্দ্রজুড়ে ফুটপাতের ওপর চলছে অস্থায়ী দোকানপাট, পণ্যের পসরা আর ক্রেতাদের ভিড়। ফলে পথচারীদের হাঁটার জায়গা নেই, স্থায়ী দোকানের ব্যবসায়ীরা হারাচ্ছেন ক্রেতা, হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত।

ডাকবাংলা এলাকা খুলনা নগরের বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র। এখানে ডাকবাংলা সুপারমার্কেট, রেলওয়ে মার্কেট, খুলনা বিপণিবিতান, দরবেশ চেম্বার, শহীদ সোহরাওয়ার্দী বিপণিবিতান, কাজী নজরুল ইসলাম মার্কেট, মশিউর রহমান মার্কেটসহ বড় শপিং কমপ্লেক্স আছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের অন্যতম বাজার এটি। কিন্তু এখন এর পুরো এলাকার ফুটপাত দখল হয়ে গেছে ভাসমান ব্যবসায়ীদের হাতে।

হকারদের ভিড়ে দোকান দেখা যায় না

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, ডাকবাংলা মোড় থেকে ক্লে রোড পর্যন্ত ফুটপাতে মালামাল সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। স্থায়ী দোকানদাররাও নিজেদের দোকানের সামনের জায়গা দখল করে ব্যবসা করছেন। ভ্যানে করে জামাকাপড়, ফল, গৃহস্থালির পণ্য বিক্রি হচ্ছে ফুটপাতের পর এখন রাস্তার অর্ধেকজুড়ে। পুরোনো যশোর রোড, সদর থানা মোড়, কেডি ঘোষ রোড থেকে হেলাতলা পর্যন্ত একই চিত্র। খালিশপুর চিত্রালি বাজার ও দৌলতপুর বাজারেও ফুটপাতের ওপর খাট বসিয়ে চালা তুলে ব্যবসা চলছে। ফলে পথচারীদের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিদিন।

খালিশপুর চিত্রালি বাজারের দোকান ব্যবস্থাপক মো. আসাদ বলেন, ‘হকারদের কারণে বাইরে থেকে আমাদের দোকান দেখা যায় না। তাদের ব্যবসা জমজমাট, কিন্তু আমাদের বিক্রি কমে গেছে। সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোও ঢেকে গেছে অস্থায়ী দোকানে।’

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) সূত্রে জানা গেছে, নগরের আয়তন ৪৬ বর্গকিলোমিটার, পাকা সড়ক ৬৪১ কিলোমিটার। ফুটপাতের সঠিক হিসাব না থাকলেও অন্তত ২৫ কিলোমিটার ফুটপাত হকারদের দখলে। চলতি বছরে ১২ দিনের মতো উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও কয়েক দিনের মধ্যেই ফের দখল হয়ে যায়।

কেসিসির সম্পত্তিবিষয়ক কর্মকর্তা গাজী সালাউদ্দীন বলেন, ‘আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। কিন্তু নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী নেতা ও প্রশাসন সবাই একসঙ্গে উদ্যোগ না নিলে এটি বন্ধ হবে না। অনেকে নিজের দোকানের সামনের ফুটপাতও ভাড়া দেন হকারদের। সহযোগিতা না পেলে একা আমাদের কিছু করার নেই।’

পথচারীদের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সম্প্রতি তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ