টাঙ্গাইলের মধুপুরে হেফাজতে ইসলামের আপত্তির মুখে বন্ধ হলো লালন স্মরণোৎসব। বুধবার রাত ৮টা থেকে মধুপুর উপজেলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় লালন স্মরণোৎসব অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ফকির লালন সাঁইজির ১৩৪তম তিরোধান বর্ষ উদযাপন উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল মধুপুর লালন সংঘ । 

এর আগে একাধিকবার লালন স্মরণোৎসব বাধাহীনভাবে অনুষ্ঠিত হলেও এবার বাধার মুখে অনুষ্ঠান স্থগিত করে আয়োজক কমিটি। বিকেলে থেকে এলাকায় মাইকিং করে অনিবার্য কারণে অনুষ্ঠান স্থগিত করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন তারা।

অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধুপুরের নেতা সবুজ মিয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর লালন সংঘ মধুপুর বাসস্ট্যান্ডে লালন স্মরণোৎসব নামে দুইবার বৃহৎ পরিসরে লালন সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ বছর লালন স্মরণোৎসবের নামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান অতিথি করা হয়। আয়োজন পুরোদমেই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই খবর আসে মধুপুর হেফাজতে ইসলাম অনুষ্ঠান নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। হেফাজতের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সঙ্গে ১১ ফেব্রুয়ারি বাদ আসর বসার ব্যবস্থা হয়। উপজেলা হেফাজতের সভাপতি মুফতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মাহমুদুল্লাহ, কওমি ওলামা পরিষদের সভাপতি মাওলানা সোলায়মান কাসেমীসহ তাদের ১০-১৫ জন উপস্থিত ছিলেন। লালন সংঘের সভাপতি ফরহাদ হোসেন তরফদার এবং অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে তিনি উপস্থিত ছিলেন। মধ্যস্থতায় ছিলেন মধুপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাকির হোসেন সরকার।’

ময়মনসিংহের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন চারুকলা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ফরহাদ তরফদার জানান, ইসলামিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দ তাদের জানিয়েছেন, লালনের মতাদর্শ নাজায়েজ, কুফরি বা শিরক। তারা এই ভ্রান্ত মতাদর্শ মধুপুরে প্রচার করতে দেবেন না। লালনের মতাদর্শ নিয়ে কোনো আলোচনা ইতোপূর্বে হয়নি, এবারও হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও তারা মানেননি।  মধুপুরের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেন অবনতি না হয়, সে জন্য অনুষ্ঠান স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। যারা অনুষ্ঠানের আয়োজনে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন এবং যারা এই অনুষ্ঠান উপভোগের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন, তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছে আয়োজক কমিটি।

এ বিষয়ে হেফাজতে ইসলাম মধুপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহমুদউল্লাহ বাধা দেওয়ার কথা স্বীকার করে সাংবাদিকদের জানান, ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে অনুষ্ঠান করতে মানা করা হয়েছে।

কওমি ওলামা পরিষদ মধুপুর শাখার সভাপতি সোলেমান কাসেমীর বক্তব্য নিতে বুধবার তাঁর মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলে বন্ধ পাওয়া গেছে।
মধুপুর থানার ওসি এমরানুল কবির ছুটিতে ছিলেন জানিয়ে বলেন, বুধবার বিকেলে এসে শুনেছি ইসলামী দলগুলো অনুষ্ঠান করতে বাধা দিয়েছে।

মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর্জা জুবায়ের হোসেন জানান, দু’পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে অনুষ্ঠান স্থগিত হয়েছে শুনেছি। কারও বাধা দেওয়ার বিষয়ে অবগত নন বলে জানান তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসল ম উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

রুয়া নির্বাচন স্থগিতের প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের (রুয়া) কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন স্থগিতের প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সাড়ে চারটার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এ কর্মসূচি শুরু করেন তাঁরা। এর আগে তাঁরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক হয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রুয়া অ্যাডহক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৯ মে পুনর্মিলনী এবং ১০ মে রুয়ার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করেন বিএনপিপন্থী সাবেক শিক্ষার্থীরা। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দুই পক্ষের নির্বাচন নিয়ে পাল্টাপাল্টি যুক্তি চলতে থাকে।

এদিকে গতকাল ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে রুয়া নির্বাচন কমিশনের প্রধান কমিশনার পদত্যাগ করেন। সেই সঙ্গে গতকাল বুধবার গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদের বাসভবনে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটে। এ পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানিয়ে নোটিশ জারি করেন রুয়ার অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ করছেন।

এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘সিলেকশন না ইলেকশন, ইলেকশন ইলেকশন’, ‘প্রশাসন জবাব দে, রুয়া কি তোর বাপের রে’, ‘রুয়া নিয়ে টালবাহানা, চলবে চলবে না’, ‘অ্যাডহক না নির্বাচন, নির্বাচন নির্বাচন’, ‘সিন্ডিকেট না রুয়া, রুয়া রুয়া’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।

এ সময় ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা-কর্মীদেরও উপস্থিত থেকে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। পরে জামায়াত ইসলামীর কয়েকজন নেতাও কর্মসূচিতে যোগ দেন। একপর্যায়ে বিকেল পৌনে ছয়টার দিকে বিক্ষোভকারীদের একটি প্রতিনিধি দল উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনার জন্য বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করে। বিকেল ছয়টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চলছিল।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘১০ মে রুয়া নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ হঠাৎ সেই নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছে প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তে ক্যাম্পাসের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা মনঃক্ষুণ্ন হয়েছে। যারা রুয়া নির্বাচন দিতে পারে না, তারা রাকসু নির্বাচন কীভাবে বাস্তবায়ন করবে? ১০ মের নির্বাচন সেই একই তারিখে হতে হবে। এই সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ