ভুল সিদ্ধান্তে রাজস্ব না বেড়ে উল্টো কমবে
Published: 12th, February 2025 GMT
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে সরকার করজাল না বাড়িয়ে পরোক্ষ করের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। ফলে অতি প্রয়োজনীয় পণ্যে ভ্যাট ও শুল্ক বাড়িয়েছে। ভুল সময়ে এসে সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ বেশি ক্ষতির মুখে পড়বেন। উৎপাদন ও বিক্রি কমে যাওয়ায় কমবে ব্যবসা। তাতে রাজস্ব আয় না বেড়ে উল্টো কমে যাবে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর গুলশানে এমসিসিআই কার্যালয়ে জাগো নিউজ আয়োজিত ‘ভোক্তার কাঁধে বাড়তি করের বোঝা: উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। ২০১৮ সালের সিপিডির এক গবেষণার বরাতে তিনি বলেন, বছরে কোটি টাকার বেশি আয় করেন এমন ৬৭ শতাংশ মানুষ করজালের বাইরে। সরকার করজাল না বাড়িয়ে পণ্য ও সেবায় শুল্ক-কর বাড়িয়ে দুর্নাম কুড়িয়েছে। তিনি বলেন, ২০-২৫ ধরে কর প্রশাসন অটোমেশন করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। সংস্কারে যেন কর প্রশাসনের কোনো আগ্রহ নেই। এখানে ব্যক্তিস্বার্থ জড়িত থাকতে পারে। নিজেদের এমন অসংগতি দূর করতে না পারলে কিংবা নিয়মের প্রতিপালন করতে না পারলে কর আদায় বাড়বে না।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড.
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, কর বাড়ালে বিনিয়োগে কী প্রভাব পড়বে, তা পর্যালোচনা করেই বাড়ানো উচিত। অসময়ে কর বাড়ালে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘুরেফিরে তা ভোক্তার ঘাড়েই পড়ে।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে পাঁচটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে– উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বড় আকারে রাজস্ব ঘাটতি, ব্যাংকে তারল্য সংকট, বিনিয়োগে স্থবিরতা ও বেকারত্ব বেড়ে যাওয়া। এগুলো সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে সরকার বিপদে পড়বে। বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এখনও বিভিন্ন বাজারে ও সড়কে চাঁদাবাজি হচ্ছে। চাঁদাবাজি কমলে পণ্যের দাম কমবে। তাতে মূল্যস্ফীতিও কমে যাবে।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ালে পণ্যের দর যেভাবে বাড়ে, বিপরীতে এসব ক্ষেত্রে ছাড় দিলে সে হারে কমে না। ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, যারা নিয়মিত কর দেন, তাদের ওপর করের বোঝা বাড়ানো হচ্ছে। এক সময় করের চাপে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। এতে রাজস্ব আয় নিয়ে বিপদ বাড়বে। বাংলাদেশ অটো বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া, ভ্যাট-ট্যাক্সের জাঁতাকলে ব্যবসায়ীরা বিস্কুটের প্যাকেট আর কত ছোট করবে, প্যাকেটে বিস্কুটের পরিমাণ আর কত কমাবে? এভাবে কমাতে কমাতে এক সময় তো খালি প্যাকেট দিতে হবে।
বাংলাদেশ সুপারমার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, সুপারশপে বাড়তি ভ্যাট, কাছেই অন্য দোকানে ভ্যাট নেই। এতে সুপারশপে বিক্রি কমেছে। দেশের ২০ লাখ দোকানির সিংহভাগই ভ্যাটের বাইরে। এই বৈষম্য দূর করলে সরকারের টাকার অভাব হবে না।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, কর-ভ্যাটের হার যুক্তিযুক্ত হলে দেশ সুন্দরভাবে চলবে। বছরের মাঝপথে এসে ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ালে পণ্যের দাম বাড়বে। তাতে মানুষের কষ্ট বাড়বে। বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি এম এ হাশেম বলেন, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যে বর্ধিত ভ্যাট ও শুল্ক আরোপে দাম বাড়লে পণ্য কেনা কমাবেন ভোক্তা। কোম্পানিগুলো কৃষিপণ্য সংগ্রহ কমিয়ে দেবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষক।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ ল ককর সরক র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
দেশের জন্য যা যা করা দরকার, সব করেছেন আহমদ ছফা
আহমদ ছফাকে বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই সহ্য করতে পারতেন না। কিন্তু তাঁর বেশির ভাগ কথা এখন সত্যে পরিণত হয়েছে। দেশের সঙ্গে তিনি প্রাণকে যুক্ত করেছিলেন। দেশকে ভালোবেসে যা যা করা দরকার, তার সবকিছু করেছেন।
শুক্রবার বিকেলে আহমদ ছফা স্মৃতি বক্তৃতায় সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান এসব কথা বলেন। এশীয় শিল্পী ও সংস্কৃতি সভা জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘আহমদ ছফা স্মৃতি বক্তৃতা-২০২৫’ আয়োজন করে। ‘আহমদ ছফার রাষ্ট্র বাসনা এবং জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পরিচয়’ শীর্ষক স্মৃতি বক্তৃতা দেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের পরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এশীয় শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সভার সভাপতি জহিরুল ইসলাম। আহমদ ছফা (১৯৪৩–২০০১) ছিলেন লেখক, প্রগতিশীল সাহিত্যকর্মী ও রাজনৈতিক চিন্তক।
অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আহমদ ছফা ছিলেন মূলত সাহিত্যিক। তবে তিনি সাহিত্যের গণ্ডি পেরিয়ে চিন্তাকে রাষ্ট্রভাবনা বিষয়ে প্রসারিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন অনেক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। তিনি এমন বিষয় নিয়ে চিন্তা করেছিলেন, তা অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না।’ ছফা বলেছিলেন, ‘বিপ্লবের একটি নতুন ভাষা থাকতে হবে। মানুষের রাষ্ট্রের বাসনা বুঝতে হবে। দেশটা আমার নিজের বলে মনে করলে তার সমস্যার সমাধানও আমার নিজের মতো করেই ভাবতে হবে।’
স্মৃতি বক্তৃতায় ফারুক ওয়াসিফ বলেন, আহমদ ছফা রাষ্ট্র নিয়ে গভীরভাবে ভেবেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে ধরনের দেশ সেই বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করার মতো কোনো তাত্ত্বিক রাজনৈতিক রূপরেখা নেই। কোনো রাজনৈতিক দলও নেই।
ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পূর্বপরিকল্পনা ছিল না। একাত্তর ছিল অপরিকল্পিত। একইভাবে জুলাই অভ্যুত্থানও হয়েছে অপ্রস্তুতভাবে। এখন জুলাইয়ের নেতারা প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হয়েছেন। বড় দলের যে সামর্থ্য আছে, সেই শক্তি–সামর্থ্য তাদের নেই। তারা মিত্রহীন হয়ে পড়েছে।’
আহমদ ছফার বন্ধু ব্যবসায়ী আবদুল হক বলেন, জনগণ রাষ্ট্রের পরিবর্তন চেয়েছিল। বাংলাদেশের নবীন প্রজন্ম সেই পরিবর্তন ঘটিয়েছে। সারা বিশ্ব দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবাদ করতে জানে। এখন একটি নতুন রাজনীতি দরকার।