রৌমারীতে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে সংঘর্ষে শাহাদত হোসেন নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১৭ জন। গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে যাদুরচর ইউনিয়নের ধনারচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। 

এ ঘটনায় বুধবার তিন নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয় তিন পুলিশ সদস্যকে। তবে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রৌমারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মমিনুল ইসলাম।

আটক নারীরা হলেন– আফরিনা আকতার, কুপিয়া বেগম ও আফরোজা বেগম। নিহত শাহাদত হোসেন উপজেলার ধনারচর এলাকার আব্দুল হামিদের ছেলে।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে যাদুরচর ইউনিয়নের ধনারচর এলাকার আবুল হোসেন ও নূর ইসলামের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি একাধিক মামলাও রয়েছে আদালত ও থানায়। এরই জের ধরে গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বিরোধপূর্ণ জমিতে সরিষা তুলে নিয়ে যাচ্ছিল আবুল হোসেনের পক্ষের শতাধিক লোক। সে সময় জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে কল দেয় নূর ইসলামের পক্ষের লোকজন। সত্যতা যাচাইয়ের জন্য এসআই খুকিন, কনস্টেবল সোহেল ও রাশেদ ঘটনাস্থলে যান। এ সময় পুলিশের সামনে দু’পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে গুরুতর আহত হন শাহাদত, রিতা, শেফালী, বাছিরন, রাবেয়া, মন্টু মিয়া, শহিদুলসহ অন্তত ১৭ জন। তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বুধবার সকাল ৭টার দিকে সেখানে মারা যান শাহাদত হোসেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বুধবার এলাকায় আবারও উত্তেজনা তৈরি হয়। খবর পেয়ে ইউএনও, সার্কেল এসপি, রৌমারী ও রাজীবপুর থানার ওসি ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ সময় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে উত্তেজিত জনতা। এতে তোপের মুখে পড়ে পুলিশ।

মঙ্গলবার পুলিশের সামনে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় এসআই খুকিন, কনস্টেবল সোহেল ও রাশেদকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আজিজুল হক নামে একজন বাদী হয়ে ৪৩ জনের নামে হত্যা মামলা করেছেন। এ মামলায় ৫০-৬০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে পলাতক অভিযুক্তরা। বক্তব্য জানতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কাউকে পাওয়া যায়নি।

সহকারী পুলিশ সুপার মমিনুল ইসলাম বলেন, ৩ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একটি হত্যা মামলা হয়েছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৩ নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রৌমারী থানায় নিয়ে এসেছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র এল ক র জন য স ঘর ষ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

দেশের জন্য যা যা করা দরকার, সব করেছেন আহমদ ছফা

আহমদ ছফাকে বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই সহ্য করতে পারতেন না। কিন্তু তাঁর বেশির ভাগ কথা এখন সত্যে পরিণত হয়েছে। দেশের সঙ্গে তিনি প্রাণকে যুক্ত করেছিলেন। দেশকে ভালোবেসে যা যা করা দরকার, তার সবকিছু করেছেন।

শুক্রবার বিকেলে আহমদ ছফা স্মৃতি বক্তৃতায় সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান এসব কথা বলেন। এশীয় শিল্পী ও সংস্কৃতি সভা জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘আহমদ ছফা স্মৃতি বক্তৃতা-২০২৫’ আয়োজন করে। ‘আহমদ ছফার রাষ্ট্র বাসনা এবং জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পরিচয়’ শীর্ষক স্মৃতি বক্তৃতা দেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের পরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এশীয় শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সভার সভাপতি জহিরুল ইসলাম। আহমদ ছফা (১৯৪৩–২০০১) ছিলেন লেখক, প্রগতিশীল সাহিত্যকর্মী ও রাজনৈতিক চিন্তক।

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আহমদ ছফা ছিলেন মূলত সাহিত্যিক। তবে তিনি সাহিত্যের গণ্ডি পেরিয়ে চিন্তাকে রাষ্ট্রভাবনা বিষয়ে প্রসারিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন অনেক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। তিনি এমন বিষয় নিয়ে চিন্তা করেছিলেন, তা অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না।’ ছফা বলেছিলেন, ‘বিপ্লবের একটি নতুন ভাষা থাকতে হবে। মানুষের রাষ্ট্রের বাসনা বুঝতে হবে। দেশটা আমার নিজের বলে মনে করলে তার সমস্যার সমাধানও আমার নিজের মতো করেই ভাবতে হবে।’

স্মৃতি বক্তৃতায় ফারুক ওয়াসিফ বলেন, আহমদ ছফা রাষ্ট্র নিয়ে গভীরভাবে ভেবেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে ধরনের দেশ সেই বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করার মতো কোনো তাত্ত্বিক রাজনৈতিক রূপরেখা নেই। কোনো রাজনৈতিক দলও নেই।

ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পূর্বপরিকল্পনা ছিল না। একাত্তর ছিল অপরিকল্পিত। একইভাবে জুলাই অভ্যুত্থানও হয়েছে অপ্রস্তুতভাবে। এখন জুলাইয়ের নেতারা প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হয়েছেন। বড় দলের যে সামর্থ্য আছে, সেই শক্তি–সামর্থ্য তাদের নেই। তারা মিত্রহীন হয়ে পড়েছে।’

আহমদ ছফার বন্ধু ব্যবসায়ী আবদুল হক বলেন, জনগণ রাষ্ট্রের পরিবর্তন চেয়েছিল। বাংলাদেশের নবীন প্রজন্ম সেই পরিবর্তন ঘটিয়েছে। সারা বিশ্ব দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবাদ করতে জানে। এখন একটি নতুন রাজনীতি দরকার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ