বছরে আয় ৩১৫০ কোটি টাকা, আবারও বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আয়ের অ্যাথলেট ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো
Published: 13th, February 2025 GMT
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ৪০ ছুঁয়েছেন গত সপ্তাহে। এ বয়সে পা রাখার আগেই অনেকে বুট তুলে রাখেন, কিন্তু রোনালদো ব্যতিক্রম। এখনো খেলে যাচ্ছেন, নিয়মিতই গোল করছেন, ৯২৪ গোল হয়ে গেছে। সামনে এখন হাজার গোলের হাতছানি। এরই মধ্যে আরেকটি অর্জনেরও দেখা পেলেন পর্তুগিজ কিংবদন্তি। খেলাধুলার আর্থিক বিষয়ের সংবাদমাধ্যম ‘স্পোর্টিকো’র হিসাবে এবারও বিশ্বের সর্বোচ্চ আয়কারী অ্যাথলেটের সিংহাসনটি রোনালদোর। টানা দ্বিতীয়বার আয়ে সবার ওপরে আল নাসর তারকা।
আরও পড়ুনবিশ্বকাপেও সৌদি আরবে নিষিদ্ধ থাকবে মদ২ ঘণ্টা আগেগত বছর রোনালদোর মোট আয় ২৬ কোটি ডলার বা প্রায় ৩১৫০ কোটি টাকা। সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আল নাসর থেকে শুধু পারিশ্রমিক বাবদই পেয়েছেন ২১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। বিভিন্ন স্পনসর চুক্তি থেকে পেয়েছেন আরও সাড়ে চার কোটি ডলার।
পেশাদার খেলাধুলা অপেক্ষাকৃত তরুণদের জন্য হলেও এবার স্পোর্টিকোর তালিকায় শীর্ষ আট আয়কারী ক্রীড়াবিদের মধ্যে শুধু নেইমারের বয়স ৩৫ বছরের নিচে। বাকি সাতজন ৩৫ পার করেছেন।
৩৬ বছর বয়সী বাস্কেটবল কিংবদন্তি স্টিভেন কারি সর্বোচ্চ আয়ের এই তালিকায় দ্বিতীয়। গোল্ডেন স্টেট ওয়ারিয়র্সের এই তারকা গত বছর পারিশ্রমিক বাবদ পেয়েছেন ৫ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। বিভিন্ন স্পনসর থেকে আয় করেছেন ১০ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে গত বছর কারির মোট আয় ১৫ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। অর্থাৎ শীর্ষ আয়কারী অ্যাথলেটদের মধ্যে রোনালদোর আয় বছরে অন্তত ২০ কোটি ডলার ছুঁয়েছে। রোনালদো এ নিয়ে টানা আট বছর অন্তত ১০ কোটি ডলার আয় করলেন। গত বছরও তাঁর ২০ কোটি ডলার ছুঁয়েছিল। ২০০২ সালে স্পোর্টিং লিসবনের হয়ে পেশাদার ফুটবলে অভিষেকের পর এ পর্যন্ত ক্যারিয়ারে রোনালদোর মোট আয় ১৮০ কোটি ডলার।
ব্রিটেনের ৩৬ বছর বয়সী সাবেক বক্সার টাইসন ফিউরি ১৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার আয় করে এই তালিকার তিনে। গত বছর পারিশ্রমিক বাবদ আয় করেছেন ১৪ কোটি ডলার। বাকি ৭০ লাখ ডলার আয় করেছেন স্পনসর চুক্তি থেকে। ৩৭ বছর বয়সী ইন্টার মায়ামি তারকা লিওনেল মেসি গত বছর মোট ১৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার আয় করে তালিকার চারে। পারিশ্রমিক বাবদ ৬ কোটি ডলার এবং স্পনসর চুক্তি থেকে সাড়ে ৭ কোটি ডলার আয় করেছেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি। ১৩ কোটি ৩২ লাখ ডলার আয় করে পাঁচে বাস্কেটবল কিংবদন্তি ৪০ বছর বয়সী লেব্রন জেমস।
আরও পড়ুনফুটবল ছেড়ে কি আমেরিকান ফুটবলে যোগ দেবেন হ্যারি কেইন৫ ঘণ্টা আগেশীর্ষ পাঁচজনের মধ্যে ফুটবলার ও বাস্কেটবল খেলোয়াড় দুজন করে, অন্যজন বক্সার। শীর্ষ দশ আয়কারীর মধ্যে ফুটবলারই সবচেয়ে বেশি—পাঁচজন। বক্সার ও বাস্কেটবল খেলোয়াড় দুজন করে ও গলফার একজন।
সান্তোসে ফেরা নেইমার গত বছর ১৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার আয় করে তালিকার ছয়ে। আল ইত্তিহাদের ফরাসি তারকা করিম বেনজেমা ১১ কোটি ৬০ লাখ ডলার আয় করে আটে। ১১ কোটি ডলার আয় করে নয়ে রিয়াল মাদ্রিদের ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে।
সর্বোচ্চ আয়কারী অ্যাথলেটদের শীর্ষ দশে নেইমারও আছেন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব স ক টবল বছর বয়স গত বছর ফ টবল ত বছর র বয়স বদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।