পিকনিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় আহত একজন আইসিইউতে, গ্রেপ্তার ৪
Published: 13th, February 2025 GMT
ঢাকার ধামরাইয়ে আলাদীনস পার্কে পিকনিকে আসা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় গুরুতর আহত একজনকে হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিটে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর নাম হাসান আল মুত্তাহিদ। তিনি মিরপুরের বনফুল আদিবাসী গ্রিনহার্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। কলেজের শিক্ষকরা জানান, বুধবার বিকেলে হামলার পর মারাত্মক আহত ছয়জনকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এর মধ্যে হাসানের মাথার ক্ষত গুরুতর ছিল। চিকিৎসকরা তাঁকে আইসিউইতে নেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে সেখান থেকে রাজধানীর কাকরাইলের অরোরা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। এদিকে হামলার ঘটনায় বুধবার পার্কের মালিকসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে ধামরাই থানায় কলেজের পক্ষে মামলা করা হয়। মামলার পর রাতে পুলিশ পার্কের চারজন কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে।
জানা গেছে, গত বুধবার রাজধানীর মিরপুর থেকে বনফুল আদিবাসী গ্রিনহার্ট কলেজের ছয় শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের সীতি এলাকার আলাদীনস পার্কে পিকনিকে যান। বিকেলের দিকে পার্ক কর্তৃপক্ষের লকারে মোবাইল ফোনসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রেখে সুইমিংপুলে নামেন। এরপর সুইমিং থেকে উঠে অনেকেই মোবাইল ফোনসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র লকারে না পেয়ে পার্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী রিয়াদের কাছে কৈফিয়ত চান। এক পর্যায়ে রিয়াদের সহকর্মীরা এসে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সুইমিংপুল-সংলগ্ন ভবনের গ্লাস ও টব ভাঙচুর করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জিনিসপত্র ফেরত না পেলেও শিক্ষকরা বুঝিয়ে ফেরার জন্য শিক্ষার্থীদের নিয়ে গাড়িতে ওঠেন। এমন সময় পার্কের কর্মচারীরা জোট বেঁধে লাঠিসোটা, রড ও হাতুড়ি নিয়ে হামলা চালায়। তারা আটটি বাস ভাঙচুর ও বাসে থাকা জিনিসপত্র নিয়ে যায়। এতে শিক্ষক রিপন হালদার, শিক্ষার্থী হাসান আল মুক্তাদির, নাফিস, আহসাফ, তূর্য, জাকারিয়া, গোলাম সারোয়ার, আবু আল মাহিয়ানসহ ২০ শিক্ষার্থী জখম হন। পরে ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে ধামরাই থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
কলেজের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মরিয়ম জামিলা জানান, হাসানকে বৃহস্পতিবার বিকেলে সাভার থেকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাঁর মাথার জখম গুরুতর বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। অস্ত্রোপচার চলছে। রক্তও দিতে হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, একাদশ শ্রেণির ছাত্র আল মাহিয়ানের মাথায় পাঁচটি সেলাই দিতে হয়েছে। জাকারিয়ার মাথায় দা দিয়ে আঘাত করছিল, তা ঠেকাতে গেলে তাঁর হাতের রগ কেটে যায়। দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আহনাফ হাবীবের পায়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়েছে। তাঁর হাঁটতে সমস্যা হচ্ছে।
হামলার ঘটনায় কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো.
আব্দুল হাই মজুমদার বলেন, আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থীর অবস্থা খুবই খারাপ। আমরা এর সঠিক বিচার দাবি করছি।
ধামরাই থানার ওসি মনিরুল ইসলাম জানান, আলাদীনস পার্কের চার কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পার্কের মালিকসহ মামলার অন্য আসামিদের ধরার চেষ্টা চলছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম রধর জ ন সপত র কল জ র
এছাড়াও পড়ুন:
তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
পূর্ব আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়ে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসান। শনিবার (১ নভেম্বর) নির্বাচন কমিশন ঘোষিত চূড়ান্ত ফলে দেখা যায়, বুধবারের নির্বাচনে তিনি ৯৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। খবর বিবিসির।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা নির্বাচনে স্বচ্ছতার অভাব এবং ব্যাপক অস্থিরতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নির্বাচন ঘিরে দেশটিতে গত কয়েক দিনে সহিংসতায় কয়েক শ’ মানুষ নিহত ও বহু আহত হয়েছে। দেশজুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে নিহতের সঠিক সংখ্যা যাচাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
সরকার সহিংসতার মাত্রা কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অস্থিরতা দমনে দেশজুড়ে কারফিউও বাড়ানো হয়েছে।
ক্ষমতাসীন চামা চা মাপিন্দুজি (সিসিএম) দলের প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসানের প্রশাসনের বিরুদ্ধে ভোটের আগে ভিন্নমত পোষণকারী ও বিরোধীদের ওপর কঠোর দমনপীড়ন চালানোর অভিযোগ রয়েছে। প্রধান দুই বিরোধী দলকেই নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়া হয়নি।
ফলে নির্বাচনের পরই বৃহত্তম নগরী দার-এস-সালাম ও অন্যান্য শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। শুক্রবারও বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। অস্থিরতা বন্ধ করার জন্য সেনাপ্রধানের সতর্কবার্তা সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীরা সামিয়ার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে এবং অসংখ্য গাড়ি, পেট্রোল স্টেশন এবং থানায় আগুন দেয়।
বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বেশিরভাগ তরুণ বিক্ষোভকারীরা, যারা নির্বাচনকে অন্যায্য বলে সমালোচনা করেছেন। তাদের অভিযোগ, সরকার প্রধান বিরোধী নেতাদের দমন করে গণতন্ত্রকে ক্ষুণ্ন করছে। প্রধান দুই বিরোধী নেতার মধ্যে একজন কারাগারে রয়েছেন এবং অন্যজনকে নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
বিরোধী চাদেমা দলের একজন মুখপাত্র শুক্রবার বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে প্রায় ৭০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে তানজানিয়ার একটি কূটনৈতিক সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, কমপক্ষে ৫০০ জন মারা যাওয়ার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ কম্বো থাবিত এই সহিংসতাকে ‘এখানে-সেখানে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিরাপত্তা বাহিনী খুব দ্রুত ও দৃঢ়তার সাথে কাজ করেছে।”
প্রধান দুই বিরোধী দলীয় নেতার মধ্যে চাদেমা দলের টুন্ডু লিসুকে নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রদোহের অভিযোগ আটক করা হয়, যদিও তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং এসিটি-ওয়াজালেনডো দলের নেতা লুহাগা এমপিনাকে আইনি কৌশল খাটিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি।
১৬টি প্রান্তিক দল, যাদের কারোরই ঐতিহাসিকভাবে উল্লেখযোগ্য জনসমর্থন ছিল না, তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
সামিয়ার ক্ষমতাসীন দল সিসিএম, দেশটির রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করেছে। স্বাধীনতার পর থেকে কখনও কোনো নির্বাচনে সিসিএম হারেনি।
নির্বাচনের আগে, মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিরোধী ব্যক্তিত্বদের জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরকারের নিন্দা জানিয়েছিল।
প্রেসিডেন্ট জন মাগুফুলির মৃত্যুর পর ২০২১ সালে তানজানিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে সামিয়া ক্ষমতায় আসেন।
ঢাকা/ফিরোজ