আন্দোলনে নিহত, লাশ পেতে লেগে গেল সাড়ে ৬ মাস
Published: 15th, February 2025 GMT
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে গত বছরের ৫ আগস্ট গুলিতে নিহত হন দোকান শ্রমিক মো. হাসান। পরদিন ৬ আগস্ট ফেসবুকে ভিডিও দেখে তাঁর মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হলেও লাশ পেতে লেগে গেল সাড়ে ৬ মাস।
ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে ১৩ ফেব্রুয়ারি হাসানের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে লাশ বুঝে পাওয়ার পর শনিবার আনা হয় ভোলায় বাড়িতে। এ সময় স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে বাড়ির পরিবেশ। পরে জানাজা শেষে বাড়ির পাশের মসজিদের কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে।
আজ সকালে হাসানের লাশবাহী গাড়ি এনে রাখা হয় সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের সাহামাদর গ্রামের বাড়ির সামনে। এ সময় এক নজর দেখতে ভিড় জমান এলাকাবাসী। এর মধ্যেই কফিনে রাখা ছেলের লাশ ঘরে তুলতে বারবার ছুটে আসছিলেন মা গোলেনুর বেগম। কোনো বাধায় তাঁকে আটকানো যাচ্ছিল না। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ছেলের লাশ সাড়ে ৬ মাস পর পেয়ে পাগলপ্রায় মা। শুরু হয় মায়ের গগণবিদারী বিলাপ। হাসানের বাবা মনির হোসেনের ছোট্ট বাড়িতে সমবেদনা জানাতে ছুটে আসা পাড়া-প্রতিবেশী ও স্বজন সবাই শোকে কাতর।
মনির হোসেন জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট দোকান শ্রমিক হাসানও যাত্রাবাড়ীর সুতিখালপাড় এলাকার ভাড়া বাড়ি থেকে বের হয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়। এর পর আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না হাসানের। ৬ আগস্ট যাত্রাবাড়ী রাস্তার ওপর গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পায়ে তার প্যাঁচানো হাসানের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই ছবি দেখে হাসানকে চিনতে পারলেও সন্ধান মিলছিল না। মানববন্ধন, মাইকিং ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক প্রচার করেও তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। এক পর্যায়ে গত ১২ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে থাকা হাসানের লাশ শনাক্ত করা হয়।
গত ১৩ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ী থানার মাধ্যমে হাসানের বাবা-মায়ের ডিএনএর নমুনা দেওয়া হয় সিআইডিকে। বাবা-মায়ের সঙ্গে ডিএনএ মিলে যাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পরিবারের কাছে লাশের কাগজপত্র বুঝিয়ে দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এর পর শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে প্রথম জানাজা শেষে তাঁর লাশ নিয়ে গণহত্যার বিচার ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে কফিন মিছিল করা হয়।
শনিবার সকালে ঢাকা থেকে হাসানের লাশ নেওয়া হয় ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের সাহামাদার গ্রামের বাড়িতে। সকাল ১০টার দিকে সাহামাদার হাইস্কুল মাঠে তাঁর দ্বিতীয় জানাজা হয়। এর পর দাফন করা হয় বাড়ির পাশের উত্তর সাহামাদার মোহাম্মদিয়া জামে মসজিদসংলগ্ন কবরস্থানে।
লাশ দাফনের পর হত্যার বিচার চেয়ে বিক্ষোভ করেছেন ভোলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী। একই সঙ্গে নিহত হাসানের পরিবারের জন্য সহায়তা চেয়েছেন মিছিলকারীরা।
চার ভাইবোনের মধ্যে মো.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গৌরনদী থানার ওসি-এসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা
এক লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগে গৌরনদী মডেল থানার ওসি ইউনুস মিয়া ও উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী এক নারী। বরিশাল সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে আজ মঙ্গলবার মামলাটি দায়ের করেন গৌরনদীর বাটাজোর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আজাদ সরদারের স্ত্রী সুমা বেগম।
অভিযোগকারীর আইনজীবী নাজিম উদ্দীন আহমেদ পান্না এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে মামলাটি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী নারী মামলায় অভিযোগ করেছেন, গত ১১ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় কতিপয় দুর্বৃত্তরা তার (সুমা) শ্বশুরবাড়ির পাকা কবরস্থান ভাঙচুর করে ও দখলের চেষ্টা করে। এ ঘটনায় বাদী জরুরি সেবা ৯৯৯- এ কল করলে থানার এসআই নজরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে যান। তবে নজরুল ইসলাম ভুক্তভোগী সুমা বেগমসহ মামলার তিনজন সাক্ষীকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। ওসি এবং এসআই আটককৃতদের ছেড়ে দিতে সুমা বেগমের কাছে এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। টাকা দিকে অপরাগতা প্রকাশ করায় মামলায় জড়ানোর হুমকি দেন ওসি এবং এসআই। ওইদিন রাত নয়টার পর থানা হেফাজত থেকে বাদী ও মামলার তিনজন সাক্ষীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ওসি এবং এসআই মামলার বাদী ও তিন সাক্ষীকে দীর্ঘসময় থানায় আটকে রাখার সুযোগে দুর্বৃত্তরা কবরস্থান ভাঙচুর করে দখল করতে পেরেছে। বাদীর দায়ের করা এজাহার থানায় মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়নি। এ ঘটনায় বাদী সুমা বেগম গত ১৩ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশনের বরিশাল কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. ইউনুস মিয়া বলেন, ‘ঘুষ দাবির কোনো ঘটনা সেদিন ঘটেনি। একটি কু-চক্রী মহলের প্ররোচনায় এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।