দ্বিতীয় দফায় ১১৯ ভারতীয় অভিবাসীকে নিয়ে অমৃতসরে অবতরণ করেছে মার্কিন উড়োজাহাজ
Published: 15th, February 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্র থেকে দ্বিতীয় দফায় ১১৯ ভারতীয় অভিবাসীকে নিয়ে দেশটির পাঞ্জাব প্রদেশের অমৃতসর বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে একটি মার্কিন উড়োজাহাজ। গতকাল শনিবার উড়োজাহাজটি ওই বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ১০ দিন আগে প্রথম দফায় ১০৪ ভারতীয় অভিবাসীকে নিয়ে একই বিমানবন্দরে একটি মার্কিন সামরিক উড়োজাহাজ অবতরণ করেছিল।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এসব ভারতীয় অভিবাসীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে।
আজ রোববার আরেকটি উড়োজাহাজে করে ১৫৭ জন ভারতীয় অভিবাসীকে নিয়ে অবতরণ করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা অবৈধ অভিবাসীদের সবচেয়ে বড় উৎস মেক্সিকো ও এল সালভাদর। এরপরই ভারতের অবস্থান।গতকাল ভারতের স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৪০ মিনিটে মার্কিন বিমানবাহিনীর সি-১৭ গ্লোবমাস্টার উড়োজাহাজটি অমৃতসর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
ওই উড়োজাহাজে করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো ১১৯ ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে ৬৭ জন পাঞ্জাবের, ৩৩ জন হরিয়ানার, আটজন গুজরাটের, তিনজন উত্তর প্রদেশের এবং দুজন করে গোয়া, মহারাষ্ট্র ও রাজস্থানের এবং একজন করে হিমাচল প্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দা ছিলেন।
এর আগে ফেরত পাঠানো ১০৪ জনের মধ্যে ৩৩ জন হরিয়ানার, ৩৩ জন গুজরাটের, ৩০ জন পাঞ্জাবের, তিনজন মহারাষ্ট্রের, তিনজন উত্তর প্রদেশের এবং তিনজন ছত্তিশগড়ের ছিলেন। তাঁদের একই উড়োজাহাজ করে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের অ্যন্টোনিও থেকে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
ফেরত পাঠানোর ভারতীয়দের সঙ্গে যাতে দুর্ব্যবহার না করা হয়, তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্র সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। —এস জয়শঙ্কর, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ভারতআরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক বিমানে ফিরলেন নথিপত্রহীন ভারতীয় অভিবাসীরা০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫উড়োজাহাজে পুরোটা সময়জুড়ে ভারতীয় অভিবাসীদের হাতকড়া এবং পায়ে শেকল পরিয়ে রাখা হয়েছিল। ভারতে পৌঁছার পরই তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এই বিষয়টি ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক ঝড় তুলেছে। এ নিয়ে ভারতীয় পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে বাজেট অধিবেশন চলাকালে গোলমালের ঘটনাও ঘটেছে।
সমালোচনার মাঝে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, ফেরত পাঠানোর ভারতীয়দের সঙ্গে যাতে দুর্ব্যবহার না করা হয়, তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্র সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তিনি আরও বলেন, অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করা নতুন কোনো ঘটনা নয়। বছরের পর বছর ধরে এটি চলছে।
গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ভারত যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসকারী তাদের যে কোনো নাগরিককে ফিরিয়ে নেবে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, মানবপাচার বন্ধে প্রচেষ্টা চালানো দরকার।
আরও পড়ুনভারতে মোদি সরকার হঠাৎ অবৈধ অভিবাসী নিয়ন্ত্রণে বিল আনছে কেন৩১ জানুয়ারি ২০২৫মোদী বলেন, ‘আমাদের বৃহত্তর লড়াই এই পুরো বাস্তুতন্ত্রের বিরুদ্ধে। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই বাস্তুতন্ত্রের অবসান ঘটাতে ভারতকে পুরোপুরি সহযোগিতা করবেন।’
ভারতে মার্কিন দূতাবাস বলেছে, ‘আমাদের দেশের অভিবাসন আইন প্রয়োগ করা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা এবং জননিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ দূতাবাসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সমস্ত অগ্রহণযোগ্য এবং অপসারণযোগ্য বিদেশিদের বিরুদ্ধে বিশ্বস্ততার সঙ্গে অভিবাসন আইন কার্যকর করা।’
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা অবৈধ অভিবাসীদের সবচেয়ে বড় উৎস মেক্সিকো ও এল সালভাদর। এরপরই ভারতের অবস্থান।
এদিকে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান গতকাল দিনের শুরুতে অমৃতসর বিমানবন্দর পরিদর্শন করেন এবং বলেন, তাঁর সরকার দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানোদের মধ্য থেকে পাঞ্জাবের বাসিন্দাদের তাদের নিজ শহরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। অন্যান্য রাজ্যের লোকেদের রোববার সকালে একটি উড়োজাহাজে করে অমৃতসর থেকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হবে। এর পর তাদের নিজ নিজ প্রদেশে পাঠানো হবে।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রে নথিপত্রহীন অভিবাসীদের ফেরত নেবে ভারত: জয়শঙ্কর২৩ জানুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতে আবারও বিমান বিপর্যয়, পাইলটের তৎপরতায় প্রাণে বাঁচলেন ২৫০ হজযাত্রী
ভারতের লখনৌতে অবতরণের সময় সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। ল্যান্ডিংয়ের পরই বিমানের বাঁ দিকের চাকা থেকে ধোঁয়া বের হতে শুরু করে, দেখা যায় স্ফুলিঙ্গও। পাইলটের তৎপরতায় নিরাপদভাবে ২৫০ জনকে নামানো হয় লখনৌয়ে।
রোববার ভোরে এ ঘটনা ঘটেছে। সৌদি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এসভি-৩১১২ শনিবার রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে জেদ্দা থেকে রওনা দেয়। রোববার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে বিমানটি লখনৌয়ের চৌধুরি চরণ সিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরনের কথা রয়েছে।
বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা জানান, অবতরণের ঠিক পরপরই বিমানের বাঁ দিকের চাকায় ধোঁয়া এবং আগুনের স্ফুলিঙ্গ দেখা যায়। সঙ্গে সঙ্গে পাইলট বিপদ সংকেত পাঠান কন্ট্রোল রুমে। কোনো ঝুঁকি না নিয়ে বিমানটিকে রানওয়ে থেকে সরিয়ে আনা হয় ট্যাক্সিওয়েতে।
তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় বিমানবন্দরের এমার্জেন্সি রেসপন্স টিম। ফোম ও জল ব্যবহার করে ২০ মিনিটের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণে আনা হয় পরিস্থিতি। এরপর একে একে বিমান থেকে নামিয়ে আনা হয় সব যাত্রী ও কর্মীদের। সৌভাগ্যবশত, কারো কোনো চোট লাগেনি।
তদন্তে জানা যায়, বিমানের হুইল অ্যাসেম্বলিতে আচমকা হাইড্রলিক তরল লিক করায় অতিরিক্ত ঘর্ষণে বেশি তাপ তৈরি হয়েছিল। সেটাই ধোঁয়া ও স্ফুলিঙ্গের কারণ। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই সমস্যা যদি উড়া চলাকালীন বা টেক-অফের সময় ঘটত, তাহলে বড় বিপদ হতে পারত।
ঘটনায় আতঙ্ক ছড়ালেও পাইলটের দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। ফ্লাইটটি হাজযাত্রীদের নিয়ে জেদ্দা থেকে এসেছিল এবং খালি অবস্থায় সৌদি আরবে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল।