এ বছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা জাতীয় পদক এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা আন্তর্জাতিক পদক পাচ্ছেন দেশি-বিদেশি দুই ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে জাতীয় পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন ভাষাবিজ্ঞানী ও ভাষাগবেষক অধ্যাপক আবুল মনসুর মুহম্মদ আবু মুসা। আর আন্তর্জাতিক পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন জোসেফ ডেভিড উইন্টার ও প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্যারিসে বাংলাদেশ দূতাবাস।

আজ রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাতৃভাষা সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন ও বিকাশে ভূমিকা রাখায় জাতীয় পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন ভাষাবিজ্ঞানী ও ভাষাগবেষক অধ্যাপক আবুল মনসুর মুহম্মদ আবু মুসা। আন্তর্জাতিক পদকের জন্য মনোনীত জোসেফ ডেভিড উইন্টার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জীবনানন্দ দাশের রচনাবলি অনুবাদ, বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিকীকরণ ও প্রসারে ভূমিকা রেখেছেন। এ ছাড়া প্যারিসে বাংলাদেশ দূতাবাস মহান ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে কেন্দ্র করে ইউনেসকোর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে এই পদক দেওয়া হয়। মাতৃভাষার চর্চা, সংরক্ষণ, বিকাশ, গবেষণা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনন্যসাধারণ কৃতিত্বের জন্য দেশি ও বিদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা জাতীয় পদক’ এবং ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা আন্তর্জাতিক পদক’ দেওয়া হয়। পদকের সংখ্যা চার। এর মধ্যে জাতীয় ক্ষেত্রে দুটি ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দুটি। পদক হিসেবে ১৮ ক্যারেট মানের ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, সম্মাননাপত্র ও চার লাখ টাকা বা সমমূল্যের ডলার দেওয়া হয়। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিত থেকে এই পদক দেওয়ার কথা রয়েছে।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহীদদের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের সংস্থা ইউনেসকো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা দেয়। এ বছর এই স্বীকৃতি দেওয়ার ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা একুশে ফেব্রুয়ারি বেলা তিনটায় ইউনেসকো আয়োজিত অনুষ্ঠানে অনলাইনে শুভেচ্ছাবার্তা দেবেন বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ত য় পদক ইউন স

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ