পান রপ্তানি আরও জটিল করে দিল শুল্ক বিভাগ
Published: 17th, February 2025 GMT
অনলাইন—
মেটা:
সেকশন: বাণিজ্য
ট্যাগ:
বাংলাদেশ থেকে পান রপ্তানি আরও জটিল করল শুল্ক বিভাগ। বিভাগটি বলেছে, বাংলাদেশ পান রপ্তানিকারক সমিতির প্রত্যয়নপত্র ছাড়া ২০ ফেব্রুয়ারির পর কেউ পান রপ্তানি করতে পারবে না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টম হাউস গত সপ্তাহে এ–সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশ পান রপ্তানিকারক সমিতির সদস্য ছাড়া কেউ পান রপ্তানি করতে পারবে না, এমন ব্যবস্থা নিতে এনবিআরকে অনুরোধ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পান রপ্তানিকারক সমিতির প্রত্যয়নপত্র ছাড়া কোনো রপ্তানিকারক যেন পান রপ্তানি করতে না পারে, এ জন্য কাস্টম হাউসকে অনুরোধ করে এনবিআর।
কাস্টম হাউসের এই নির্দেশনায় ক্ষুব্ধ হয়েছে বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফভিএপিইএ)। সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনসুর গতকাল রোববার এনবিআর চেয়ারম্যানকে একটি চিঠি দিয়ে নির্দেশনাটি বাতিলের অনুরোধ করেছেন। চিঠিতে বলা হয়, বিএফভিএপিইএর সদস্য ৪০০ প্রতিষ্ঠান নিয়মিত ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শাকসবজি, ফলমূল, পান একটি এয়ারওয়েজ বিল ও একটি শিপমেন্টের মাধ্যমে রপ্তানি করে। কখনো শাকসবজি, ফলমূল, পানসহ কৃষিপণ্য রপ্তানিতে পৃথক কোনো শিপমেন্ট করা হয়নি। বর্তমান নির্দেশনা রপ্তানির বাজার ধ্বংসের শামিল।
জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি পান রপ্তানি করা হয়। এর বাইরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পান রপ্তানি করা হয়। তবে যুক্তরাজ্যে পান রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ পান রপ্তানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন বলেন, আইন অনুযায়ী কোনো পণ্য রপ্তানি করতে হলে সংশ্লিষ্ট সমিতির সদস্যপদ থাকতে হয়। নতুন সিদ্ধান্তে রপ্তানি কমবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতি কেজি পানের প্রকৃত রপ্তানি মূল্য ৫ ডলার। সবজির গড় রপ্তানি মূল্য ১ ডলার। ফলে সবজির আড়ালে পান রপ্তানির হচ্ছে। এখন এটি বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা ইতিমধ্যে বলে দিয়েছি, ৫ ডলারের কমে পান রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হবে না।
জানা যায়, বাংলাদেশ পান রপ্তানিকারক সমিতি ২০০২ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিবন্ধন পায়। পরে সংক্ষুব্ধ হয়ে এই সমিতির নিবন্ধন বাতিল চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট মামলা করে বিএফভিএপিইএ। ২০০৫ সালে সেই সমিতির নিবন্ধন বাতিল হয়। তখন পুনরায় আবেদন করে সদস্যপদ পায় বাংলদেশ পান রপ্তানিকারক সমিতি। আবার রিট করে বিএফভিএপিইএ। সেই রিটের নিষ্পত্তি হয় ২০২৩ সালে, সমিতির পক্ষে রায় দেন উচ্চ আদালত।
সার্বিক বিষয়ে বিএফভিএপিইএর সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ৩০–৪০ বছর ধরে সবজির পাশাপাশি অনেক প্রতিষ্ঠান পান রপ্তানি করে। আবার বিদেশের যেসব ক্রেতা প্রতিষ্ঠান সবজি কিনছে, তারাই পান কিনছে। ফলে পান রপ্তানির জন্য একটি সমিতির সদস্যপদ বা প্রত্যয়নপত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হলে রপ্তানি ব্যয় বাড়বে। এতে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে। এই সিদ্ধান্তে পান সমিতির আয় বৃদ্ধি ছাড়া অন্য কারও কোনো উপকার হবে না। তিনি আরও বলেন, সবজি বা পান রপ্তানিকারকদের মুনাফা হচ্ছে রপ্তানির বিপরীতে সরকারের নগদ সহায়তা। ফলে কম দামে পান রপ্তানি করে রপ্তানিকারকদের কোনো লাভ নেই।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’
অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি বরাবর অভিযোগ করেন।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।