আগামী বিপিএল নিয়ে কাজ শুরু, ‘সুখবর’ দিলেন ফারুক
Published: 17th, February 2025 GMT
সদ্যই শেষ হয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) একাদশ আসর। এই আসরের আয়োজন নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। সফলতা-ব্যর্থতা দুই দিক নিয়েই আলোচনা হয়েছে। সেই আলোচনা শেষ না হতেই বিপিএলের আগামী আসর নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। সেই সঙ্গে দিলেন আরো এক সুখবর। আগামী আসর থেকে লভ্যাংশের শেয়ার পাবেন ফ্র্যাঞ্চাইজি মানিকরা।
মিরপুরে সাবেক অধিনায়কদের সঙ্গে বৈঠকের পর এক ভিডিও বার্তা দেন ফারুক আহমেদ। খোলামেলা জানিয়েছেন বিপিএল নিয়ে নিজের পরিকল্পনা এবং আসর শেষে কি পেলেন না পেলেন।
ফারুক বলেন, ‘‘অগাস্ট মাসে নির্বাচিত হওয়ার পর আমার বেশ কিছু কমিটমেন্ট ছিল। আমি মনে করেছিলাম বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে টিকিট বিক্রি একটা জায়গা যেখান থেকে আমরা ভালো একটা লাভ অর্জন করতে পারি, বিশেষত বিপিএলের মতো টুর্নামেন্ট থেকে।’’
আরো পড়ুন:
চার্টার্ড বিমানে শিরোপা নিয়ে বরিশালে তামিমরা
চারে এসে সফল শান্ত-হৃদয়
বিপিএলের এবারের আসরে টিকিট বিক্রি থেকে বড় একটা অংশ লাভ করেছে বিসিবি। এ বিষয়ে বলতে গিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘‘আমরা এবার অবিশ্বাস্যরকম সফলভাবে টিকিট বিক্রি করেছি। এটার বিরাট কারণ ছিল আমরা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে গিয়েছি ১০০ ভাগ, আপনারা জানেন অত্যন্ত সিকিউরড, বিশ্বকাপে যেভাবে টিকিট বিক্রি হয় ওভাবে। আমরা যদিও পুরোপুরি অনলাইন যেতে পারিনি, জাস্ট নতুন একটা সিস্টেম দেখার জন্য। প্রথম রাউন্ডে আমরা ৩৫% টোটাল টিকিটের, পরের রাউন্ডে ৪০% গিয়েছিলাম অনলাইনে।’’
‘‘পুরো বিপিএলে আমরা প্রায় ১২ কোটি ২৫ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি করেছি। ছোট্ট একটা কম্পারিজন যদি আপনাদের দেই। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড গত ১০ আসরে যে টিকিট বিক্রি করেছে, আপনার ১৫ কোটি টাকার মতো। সেটা বিবেচনা করলে আমরা এক বছরেই সেটার কাছাকাছি চলে গিয়েছে। আমরা টিকিট সত্ত্ব বিক্রি বাবদও তিন বছর চুক্তি করেছি এক কোটি টাকা করে। এটা একটা বিরাট মাইলফলক।’’- আরো যোগ করেন ফারুক।
বিপিএলের আগামী আসরে সবচেয়ে বড় চমকটা পাবেন ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকরা। এবারের আসরে লভ্যাংশ শেয়ার নিয়ে তাদের যেই দাবি ছিল, সেটা আগামী আসরে বাস্তবায়ন হবে বলে জানিয়েছেন ফারুক।
ফারুক আরো বলেন, ‘‘ফ্র্যাঞ্চাইজিদের একটা বিরাট দাবি ছিল রেভিনিউ শেয়ারিং। তখন আমি তাদের বলেছিলাম, আমি আসলে লাভটা কত কী হয় এটাই আমি জানি না। আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। সব ফ্র্যাঞ্চাইজির সুখবর, যদিও রেভিনিউ শেয়ারিং বলতে সব ক্ষেত্রেই বোঝায়, অন্যগুলো ওরকম করে করতে পারিনি। তবে টিকিট বিক্রির একটা ভালো ভাগ তাদের দেবো।’’
এবারের আসরে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান অধিকারী দলকেও পুরস্কৃত করেছে। সে সঙ্গে বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলের জন্য প্রাইজমানিও বাড়িয়েছে। যেটা উন্নতির লক্ষণ বলে জানিয়েছেন ফারুক, ‘‘এবার আমরা থার্ড ও ফোর্থ পুরস্কার দিয়েছি। প্রাইজমানি ৭০% ইনক্রিজ করেছি।’’
এবারের আসরে নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে বিসিবি। আগামী আসরেও এই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন ফারুক, ‘‘বিপিএলে কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। প্রথম দিকে টিকিট যেহেতু নতুন একটা সিস্টেম ঝামেলা ছিল। দুয়েকটা ফ্র্যাঞ্চাইজি টাকা দেওয়ার ব্যাপারেও একটু অসুবিধার সৃষ্টি করেছে। এটা নিয়ে অনেক নেতিবাচক নিউজ হয়েছে। তবে যদি ওভার অল দর্শক, উইকেট, টিকিট বিক্রি, দর্শকদের অংশগ্রহণ এবং আমাদের যে টিভি প্রডাকশন…। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’’
‘‘আগামীর বিপিএল নিয়ে এখনই কাজ শুরু করে দিয়েছি। একটা উইন্ডো বের করেছি আমরা। এখন তো সব দেশে অনেকগুলো টি–টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হয়, ওগুলো ক্ল্যাশ হয়। আমরা একটু অন্যরকম করে যেন করতে পারি যেন একটু মানসম্পন্ন বিদেশি পাই।’’- সবশেষ যোগ করেন তিনি।
রিয়াদ/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব প এল ফ র য ঞ চ ইজ ব প এল র
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।