মোটরসাইকেল মেকানিকের কাজ করেন আবদুল মজিদ আকন্দ (২৫)। দোকানের সামনে ফাঁকা জায়গায় রোদে তাঁকে কাজ করতে হয়। কিন্তু গায়ে রোদ লাগলেই শরীরের ক্ষতস্থানে জ্বালাপোড়া করে। তখন অবস্থা এমন হয়, তাঁর শ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। রাতে ঘুমাতে গেলেও সারা গায়ে ব্যথা শুরু হয়।

বগুড়ার শেরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছররা গুলিতে আহত হয়েছিলেন আবদুল মজিদ আকন্দ ওরফে বাবু। হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর তিনি বাড়ি ফিরেছেন। সংসার চালাতে কাজও শুরু করেছেন। কিন্তু শরীরের সমস্যা দূর হয়নি। অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে না তাঁর।

একই অবস্থা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত নাসির উদ্দিন (৩০), শাকিল রেজা (২৭) ও আবদুল মজিদ শেখের (২৭)।  

গত বছরের ১৭ জুলাই দুপুরে শেরপুর পৌর শহরের ধুনট রোড বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পুলিশের ছররা গুলিতে আহত হন আবদুল মজিদ, নাসির উদ্দিন ও শাকিল রেজা। আর ৪ আগস্ট বিকেলে শেরপুর থানার সামনে দিয়ে মিছিল করে যাওয়ার সময় পুলিশের ছররা গুলিতে আহত হন আবদুল মজিদ শেখ।

মজিদ আকন্দের বাড়ি উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে। শাকিল ও নাসিরের বাড়ি ওই ইউনিয়নের শুবলী গ্রামে। নাসির মোটরসাইকেল মেরামত করেন এবং শাকিল ইজিবাইক চালান। মজিদ শেখের বাড়ি শেরপুর পৌর শহরের খেজুরতলা এলাকায়। তিনি পানের দোকানি।

সম্প্রতি শেরপুর শহরের ধুনট রোড বাসস্ট্যান্ডে ওই চারজনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, শরীরে ছররা গুলির যন্ত্রণায় প্রতিদিন অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে। এর মধ্যেই সংসার চালাতে কষ্ট করে কাজ করতে হয়। যে টাকা আয় করেন, তা সংসার চালাতে শেষ হয়ে যায়; ওষুধ কেনার টাকা থাকে না।

কাজ করার সময় রোদ গায়ে লাগে। শরীরের যেগুলা জাগাত গুলি লাগিছিল, সেগুলা জাগাত চুলকায় আর জ্বালাপোড়া করে। আবার রাতের বেলায় বিছানায় শুইতে গেলে শরীরের এই গুলি লাগার জায়গাত ব্যথা শুরু হয়ে যায়। ঠিকমতো ঘুমাতেও পারি না। প্রতিদিনের জীবন কাটে অতিকষ্টে।মজিদ আকন্দ, গুলিবিদ্ধ যুবক

মজিদ আকন্দ বলেন, ‘কাজ করার সময় রোদ গায়ে লাগে। শরীরের যেগুলা জাগাত গুলি লাগিছিল, সেগুলা জাগাত চুলকায় আর জ্বালাপোড়া করে। আবার রাতের বেলায় বিছানায় শুইতে গেলে শরীরের এই গুলি লাগার জায়গাত ব্যথা শুরু হয়ে যায়। ঠিকমতো ঘুমাতেও পারি না। প্রতিদিনের জীবন কাটে অতিকষ্টে।’

নাসির উদ্দিন জানান, তাঁর শরীরে ১৫০টি ছররা গুলি লেগেছে। বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে বেশ কিছু ছররা গুলি বের করা হয়েছে। তবে শরীরে এখন অনেক গুলি আছে। প্রতিনিয়ত যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে।

আহত চারজন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে তালিকভুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে শাকিল রেজা, নাসির উদ্দিন ও মজিদ শেখ ১ লাখ ৭০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। মজিদ আকন্দ এখনো ফাউন্ডেশন থেকে টাকা পাননি। এর বাইরে আর কোনো আর্থিক সহায়তা পাননি তাঁরা।

আহত চারজন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে তালিকভুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে শাকিল রেজা, নাসির উদ্দিন ও মজিদ শেখ ১ লাখ ৭০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। মজিদ আকন্দ এখনো ফাউন্ডেশন থেকে টাকা পাননি।

শাকিল রেজা বলেন, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিদিন ওষুধ কিনতে ২৫০–৩৫০ টাকা লাগবে, কিন্তু ওষুধ কেনার সামর্থ্য নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে কোনো ওষুধ পাওয়া যায় না। তখন তাঁদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকেও ওষুধ দেয় না।

স্বাভাবিক কর্মজীবনে ফিরতে চান শাকিল রেজা। তিনি বলেন, তাঁরা বেঁচে থাকার সুযোগ চান। সরকারি ব্যবস্থাপনায় যদি উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হয় তাহলে তাঁরা ছররা গুলির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন। স্বাভাবিকভাবে কর্মজীবনে ফিরে যেতে পারবেন।

শেরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাজিদ হাসান সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হবে। প্রয়োজন হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁদের শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

ঝিনাইদহে গাছ থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু 

ঝিনাইদহের শৈলকূপায় গাছ থেকে পড়ে খায়রুল ইসলাম (৫৫) নামে এক কাঠ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (৩ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার দুধসর গ্রামে দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। খায়রুল একই উপজেলার খন্দকবাড়িয়া গ্রামের মুকাদ্দেস আলীর ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, খায়রুল আজ সকালে গাছ কাটার জন্য দুধসর গ্রামের হাজরাতলায় যান। বেলা ১১টার দিকে একটি গাছের ডাল কাটার সময় পা পিছলে তিনি নিচে পড়ে যান। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসক খায়রুলকে মৃত ঘোষণা করেন।

আরো পড়ুন:

বরিশালে অপসো ফার্মার ৫০০ শ্রমিক ছাঁটাইয়ের অভিযোগ

আশুগঞ্জ সার কারখানায় গ্যাস সংযোগের দাবিতে সমাবেশ

দুধসর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহিম জানান, হাজরাতলায় একটি রেইনট্রি গাছ কাটার সময় খায়রুল নামে এক শ্রমিক গাছ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুত্ব আহত হন। সবাই মিলে তাকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

শৈলকূপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাসুম খান জানান, গাছ থেকে পড়ে এক কাঠ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। পরিবারে কোনো অভিযোগ না থাকায় মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।

ঢাকা/শাহরিয়ার/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ