নিজের জীবন বাজি রেখে স্বামীকে বাঁচাতে ঢাল হয়ে দাঁড়ালেন স্ত্রী
Published: 18th, February 2025 GMT
সোমবার রাত সাড়ে আটটা। রাজধানীর উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোড এলাকা। হঠাৎ দুই নারী-পুরুষকে রামদা দিয়ে কোপাতে শুরু করে দুই যুবক। ক্ষোভের মাত্রা বেশি পুরুষটির দিকে। নিরুপায় হয়ে ছুটোছুটি করছেন নারী। পুরুষটিকে আক্রমণ না করতে হাতজোড় করে অনুরোধ করতে থাকেন তিনি। কিন্তু তাতেও রক্ষা হচ্ছে না। একপর্যায়ে নিজের জীবন বাজি রেখে অস্ত্রের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন তিনি।
গতকাল রাতেই এই ঘটনা নেটিজেনদের সবাই কমবেশি দেখেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফুটেজটি রীতিমতো ভাইরাল।
জানা গেছে, ওই নারী ও পুরুষ সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। তাদের নাম মকবুল ও ইফতি। আর অভিযুক্তরা হলেন মোবারক হোসেন (২৫) ও রবি রায় (২২)। তারা দু’জনই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। ইতোমধ্যে তাদের আটকও করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, ভুক্তভোগী মকবুল জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য তাহসিন রিয়াদের বন্ধু। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির দায়িত্বশীল সদস্য হাসান মঈন গণমাধ্যমকে বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। দুজনকে আটক করা হয়েছে। এই হামলার পেছনে আরও যারা জড়িত; তাদের সবাইকে খুঁজে বের করা হবে।
ঘটনার কারণ জানিয়ে হাসান মঈন বলেন, কিশোর গ্যাং গ্রুপটি টঙ্গী এলাকার। তারা সেক্টরের ভেতরে উচ্চশব্দে মোটরসাইকেলের হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় রিকশা থেকে প্রতিবাদ জানান মকবুল ও ইফতি। এতে ক্ষীপ্ত হয়ে ২০-২৫ জনের গ্যাং বাহিনীকে জড়ো করে তারা। পরে মোবারক ও রবি রায় ওই দম্পতিকে কোপানো শুরু করে।
স্থানীয়রা জানান, টঙ্গী এলাকার কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য তারা। সন্ধ্যার পর উত্তরা ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন স্পটে সংঘবদ্ধভাবে ছিনতাইয়ে জড়িত চক্রের সদস্য বলে জানা গেছে।
গতকালের ঘটনার সময় স্থানীয়রা ধাওয়া দিলে অভিযুক্তরা সেক্টরের বিভিন্ন রোড ধরে পালিয়ে গেলেও দুজনকে আটক করে স্থানীয়রা। এ সময় আটককৃতদের গণপিটুনি দিয়ে সেনাবাহিনীর মধ্যস্থতায় উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয় স্থানীয় জনতা।
এদিকে ধারালো অস্ত্রের মুখে স্বামীকে বাঁচাতে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়ার অদম্য সাহসের কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রসংশা কুড়িয়েছেন স্ত্রী ইফতি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রুয়া নির্বাচন স্থগিতের প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের (রুয়া) কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন স্থগিতের প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সাড়ে চারটার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এ কর্মসূচি শুরু করেন তাঁরা। এর আগে তাঁরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক হয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রুয়া অ্যাডহক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৯ মে পুনর্মিলনী এবং ১০ মে রুয়ার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করেন বিএনপিপন্থী সাবেক শিক্ষার্থীরা। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দুই পক্ষের নির্বাচন নিয়ে পাল্টাপাল্টি যুক্তি চলতে থাকে।
এদিকে গতকাল ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে রুয়া নির্বাচন কমিশনের প্রধান কমিশনার পদত্যাগ করেন। সেই সঙ্গে গতকাল বুধবার গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদের বাসভবনে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটে। এ পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানিয়ে নোটিশ জারি করেন রুয়ার অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ করছেন।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘সিলেকশন না ইলেকশন, ইলেকশন ইলেকশন’, ‘প্রশাসন জবাব দে, রুয়া কি তোর বাপের রে’, ‘রুয়া নিয়ে টালবাহানা, চলবে চলবে না’, ‘অ্যাডহক না নির্বাচন, নির্বাচন নির্বাচন’, ‘সিন্ডিকেট না রুয়া, রুয়া রুয়া’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
এ সময় ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা-কর্মীদেরও উপস্থিত থেকে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। পরে জামায়াত ইসলামীর কয়েকজন নেতাও কর্মসূচিতে যোগ দেন। একপর্যায়ে বিকেল পৌনে ছয়টার দিকে বিক্ষোভকারীদের একটি প্রতিনিধি দল উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনার জন্য বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করে। বিকেল ছয়টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চলছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘১০ মে রুয়া নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ হঠাৎ সেই নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছে প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তে ক্যাম্পাসের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা মনঃক্ষুণ্ন হয়েছে। যারা রুয়া নির্বাচন দিতে পারে না, তারা রাকসু নির্বাচন কীভাবে বাস্তবায়ন করবে? ১০ মের নির্বাচন সেই একই তারিখে হতে হবে। এই সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’