অন্তর্বর্তী সরকারকে ছয় মাসে ২০০টির বেশি আন্দোলন মোকাবিলা করতে হয়েছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো পক্ষ তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে রাজধানী ঢাকায় সড়ক আটকে আন্দোলনে নামছে। ফলে চিরভোগান্তির নগরীতে নাগরিক ভোগান্তি আরও তীব্র হচ্ছে এবং সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে। কিন্তু তাই বলে অন্যায় ও অযৌক্তিক চাপে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া কিংবা সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সেখান থেকে সরে আসা শেষ বিচারে সরকারের দুর্বলতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে দোদুল্যমানতার বহিঃপ্রকাশ।

এটা সত্য যে বিগত সরকারের আমলে ক্ষমতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশেষ গোষ্ঠীর বাইরে নাগরিকদের প্রায় সব অংশকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। ৫ আগস্টের পর তারা দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলনে নামছে। তাদের অনেকের দাবিদাওয়া ন্যায্য ও যৌক্তিক। কিন্তু সড়ক বন্ধ করে নাগরিকদের জিম্মি করে তারা যেভাবে প্রতিবাদে নামছে, সেটা কতটা যৌক্তিক? কেননা প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীর অন্যতম কেন্দ্র শাহবাগে সড়ক অবরোধ হচ্ছে। অথচ এর আশপাশের এলাকায় পিজি, বারডেমের মতো গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল রয়েছে।

জনভোগান্তির কথা চিন্তা করে ২২ অক্টোবর, আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভায় শাহবাগের বদলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সভা-সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত এসেছিল। কিন্তু সেটা শুধু কাগজে-কলমের সিদ্ধান্ত হয়ে রয়ে গেছে। সরকার কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে সেটা বাস্তবায়নে কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। যে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার উদ্যোগই নেই, সেই সিদ্ধান্ত কেন গ্রহণ করা হবে?

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার ১১ দিনের মাথায় পরীক্ষার্থীদের একাংশ সচিবালয়ে ঢুকে বিক্ষোভ করলে তঁাদের দাবির মুখে এইচএসসির কয়েকটি পরীক্ষা বাতিল করা হয়। নীতিগত ও কৌশলগত বিবেচনায় এটি ছিল নতুন সরকারের জন্য ভুল একটা পদক্ষেপ। ফলে অনেকের মধ্যে ধারণা জন্মে যায়, যৌক্তিক, অযৌক্তিক যেকোনো দাবিতে আন্দোলন করলে সরকার মেনে নেবে।

অভ্যুত্থানের অল্প কিছুদিন পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে নাজুক অবস্থায় ছিল, তাতে সরকার হয়তো চাপের মুখে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু ছয় মাস পরও এসে একই ধারা কেন অব্যাহত থাকবে? সর্বশেষ ঘটনাটি আমরা দেখলাম, রাজধানীর সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচলের ক্ষেত্রে যে নৈরাজ্য রয়েছে, তা বন্ধে মালিক ও চালকদের জরিমানা কার্যকর করার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে। সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া ও জমার হার কার্যকর করতে বিআরটিএ শাস্তিমূলক ব্যবস্থার উদ্যোগ নিলেও জনগণকে জিম্মি করে মালিক ও চালকদের আন্দোলনের মুখে সরকারকে পিছু হটতে হয়েছে।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, ঢাকায় অটোরিকশা সেবায় নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনা দীর্ঘদিনের। ২০০৩ সালে এই সেবা চালুর পর পাঁচ দফা বাড়ানো হয়েছে ভাড়া ও দৈনিক জমা। কিন্তু কোনোবারই মানেননি মালিক ও চালকেরা। একেকটি অটোরিকশার জন্য সরকার নির্ধারিত জমা ৯০০ টাকা। অথচ মালিকেরা নেন এর দ্বিগুণ। আর চালকেরা মিটারে তো চলেন-ই না, যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করেন দেড় থেকে দুই গুণ বেশি ভাড়া। কোন গন্তব্যে যাবেন, আর কোন গন্তব্যে যাবেন না, সে ক্ষেত্রেও তাঁরা নিজেদের মর্জিমাফিক চলেন। বলা চলে, তাঁদের খেয়ালখুশিতে জিম্মি যাত্রীরা।

নাগরিকেরা চান সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ গণপরিবহনব্যবস্থায় যে অব্যবস্থাপনা ও নৈরাজ্য চলে আসছে, তার অবসান। নাগরিকেরা প্রত্যাশা করেন, সরকার এ ক্ষেত্রে জনবান্ধব সিদ্ধান্ত নেবে এবং তা বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নেবে। কিন্তু জনবান্ধব কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সেটা যদি বাস্তবায়িত না হয় কিংবা অন্যায় চাপের মুখে সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়, তাহলে তাদের ভেতর হতাশা জন্ম হতে বাধ্য। শেষ বিচারে সেটা সরকারের অবস্থান সম্পর্কে জনমনে ভুল বার্তাও দেয়।

সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে অবশ্যই বিচক্ষণ ও কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’

স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, “জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম প্রধান অংশীদার ও পরীক্ষিত বন্ধু। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)-এর মাধ্যমে দেশটি বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে আসছে। আগামী দিনে বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে।”

বুধবার (৩০ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর অফিসকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত Saida Shinichi-এর সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।

বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কৃষি খাতে সহযোগিতা বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, ২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামাতে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’তে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, কৃষি বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ সংস্কার, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যু সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকের শুরুতে রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “জাপান বাংলাদেশের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আগামী দিনগুলোতে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।” 

উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামা'তে ‘আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’ অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক এ এক্সপো'তে বাংলাদেশকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ।”

উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। আর জাপান কৃষি খাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারী দেশ। তাই জাপান বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহযোগিতা করতে পারে।” 

তিনি বলেন, “জাপান বাংলাদেশের কৃষি পণ্য সংরক্ষণে আধুনিক হিমাগার স্থাপন ও কুলিং ভ্যান সরবরাহ করে সহযোগিতা করতে পারে। তাছাড়া জাপান আমাদেরকে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তা করতে পারে।” 

তিনি এসময় রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রদূত বলেন, “কৃষি বিষয়ক দু'দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সর্বশেষ সভা ২০২৪ সালের মে মাসে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দ্রুত এ সংক্রান্ত পরবর্তী সভা আয়োজন করা দরকার।” 

উপদেষ্টা জানান, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরবর্তী সভা এ বছরের অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ সভা আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। তবে এটির আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে এবং আমরা এ ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচ্ছি।” 

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোনো সুযোগ নেই, বরং দিন দিন এটির উন্নতি ঘটবে বলে আমি আশা করছি।”

পুলিশের সামর্থ্য ও গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতির তুলনায় বর্তমানে পুলিশের সামর্থ্য, মনোবল ও বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেশি বেড়েছে।” 

তিনি এসময় আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জাপানের সহায়তা কামনা করেন। তাছাড়া তিনি নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডকে পেট্রোল ভেসেল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সহযোগিতা এবং অধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে জাপানে উন্নত প্রশিক্ষণে প্রেরণের জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন। 

রাষ্ট্রদূত জানান, আগামী ইন্টারপোল নির্বাচনে নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে জাপানের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রদান করা হবে। উপদেষ্টা এ পদে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস প্রদান করেন।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাপান দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ শুরু 
  • বিএনপির শ্রমিক সমাবেশে নেতাকর্মীদের ঢল
  • সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্যের ৪৫% রাজনৈতিক
  • নির্বাচনে র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী যুক্ত করাসহ ১২ প্রস্তাব
  • ‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’