ওয়াশিংটন ডিসির রিগান ন্যাশনাল এয়ারপোর্টের কাছে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় নিহত এক যাত্রীর পরিবার ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) এবং মার্কিন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের মামলা দায়ের করেছে।

গত ২৯ জানুয়ারি আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৫৩২ একটি সামরিক ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের সাথে মাঝ আকাশে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং উভয় বিমানই হিমশীতল পোতোম্যাক নদীতে বিধ্বস্ত হয়। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় বাণিজ্যিক বিমানের ৬৪ জন যাত্রী ও ক্রুসহ সামরিক হেলিকপ্টারের তিনজন কর্মী নিহত হন।

নিহতদের মধ্যে ছিলেন বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ কেইসি ক্রাফটনের পরিবার এখন সরকারের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নেমেছে। মঙ্গলবার ক্রাফটনের পরিবার শিকাগোভিত্তিক আইন প্রতিষ্ঠান ক্লিফোর্ড ল’ অফিসকে নিয়োগ করেছে এবং ফেডারেল টোর্ট ক্লেইমস অ্যাক্টের অধীনে মামলা দায়েরের জন্য ফর্ম ৯৫ দাখিল করেছে।

ক্রাফটনের পরিবারের আইনজীবী বব ক্লিফোর্ড বলেছেন, ন্যাশনাল এয়ারপোর্টের আশপাশের পরিবেশ তদারকি করা সংস্থাগুলো এবং মার্কিন সেনাবাহিনী সম্ভবত ‘ইচ্ছাকৃত অবহেলা’ করেছে, যার ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।

তিনি আরও জানান, এয়ারলাইন্স এবং সামরিক সংস্থাগুলোর অবহেলার বিষয়ে সময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই। ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (NTSB) ইতিমধ্যে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তাই দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

আইন প্রতিষ্ঠানটি আমেরিকান এয়ারলাইন্স, আমেরিকান ঈগল, পিএসএ এবং সম্ভাব্যভাবে সিকোরস্কি এয়ারক্রাফটের কাছে প্রমাণ সংরক্ষণ সংক্রান্ত চিঠিও পাঠিয়েছে।

এফএএ সম্ভাব্য মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে, এবং মার্কিন সেনাবাহিনীও সংবাদমাধ্যমের অনুরোধের সাড়া দেয়নি।

ক্রাফটন বব জোনস ইউনিভার্সিটিতে বিমান পরিচালনা নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন এবং উইচিটা থেকে ব্যবসায়িক সফর শেষে ওয়াশিংটনে ফিরছিলেন। তিনি গার্ডিয়ান জেট নামক একটি বিমান পরামর্শদাতা সংস্থায় প্রযুক্তিগত সহায়তা ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র পর ব র দ র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

বাড়তি করের চাপে পোলট্রি শিল্প

অতিমারি করোনার যে চোট পোলট্রি খাতে লেগেছিল, তা সারাতে পারেননি উদ্যোক্তারা। এরপর একের পর এক বেড়েছে পোলট্রি উপকরণের দাম। খুঁড়িয়ে চলা খাতটির এ অবস্থায় প্রস্তাবিত বাজেটে পোলট্রি শিল্পের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ খাতের প্রতিষ্ঠানের টার্নওভার কর শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে। অপরদিকে করপোরেট কর ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, এ খাতের ওপর বাড়তি করের কারণে সস্তা ও সহজলভ্য প্রোটিনের উৎস হিসেবে পরিচিত ব্রয়লার মুরগির ডিম ও মাংসের দাম বেড়ে যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত তা  ভোক্তার ওপর চাপ তৈরি করবে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তার প্রয়োজনে তারা টার্নওভার কর কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ এবং করপোরেট কর ২০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।
ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ফিআব) সভাপতি এবং বিপিআইসিসির আহ্বায়ক শামসুল আরেফিন খালেদ সমকালকে বলেন, টার্নওভার কর  বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচ বাড়বে, যা আধুনিকায়ন ও খরচ কমানোর প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করবে। যেখানে পোলট্রি উদ্যোক্তারা সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩ শতাংশ লাভে পণ্য বিক্রি করেন, সেখানে এত বেশি হার আরোপ কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।
তিনি আরও বলেন, কোম্পানিগুলোর মোট করের পরিমাণ ৩৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত দাঁড়াবে, যা ব্যবসায় টিকে থাকা কঠিন করে তুলবে। এতে উদ্যোক্তারা ঝুঁকির মুখে পড়বেন এবং সাশ্রয়ী দামে ডিম ও মাংস বাজারে সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়বে। তারা সরকারের কাছে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানাচ্ছেন।

ওয়ার্ল্ডস পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখার (ওয়াপসা-বাংলাদেশ) সভাপতি মসিউর রহমান সমকালকে বলেন, ‘মাংস ও ডিমের দাম দীর্ঘমেয়াদে সহনীয় রাখতে আমরা কাজ করছি। অথচ আমরা যখন এ খাতের আধুনিকায়নের জন্য মেশিনারিজ আনছি, তখন আমাদের ব্যাপকহারে আমদানি শুল্ক দিতে হচ্ছে। এখন আমাদের করপোরেট কর প্রায় দ্বিগুণ করা হলো। আমরা দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার জন্য নির্দিষ্ট সময়ের জন্য করমুক্ত খাত হিসেবে পোলট্রি খাতকে করমুক্ত রাখার দাবি করছি। কারণ আমরা নিম্ন আয়ের মানুষের পুষ্টির জন্য ডিম ও মাংসের ভোগ বাড়াতে চাইছি।’ 
ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) সহসভাপতি এহতেশাম বি শাহজাহান বলেন, মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ায় মুরগি এখন সবচেয়ে সাশ্রয়ী প্রোটিনের উৎস। অথচ দেশের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ লেয়ার খামার ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। এখন উৎপাদন বাড়ানোর পথে না গিয়ে বরং চাপে রাখা হলে, ফল ভোক্তার ওপরই পড়বে। প্রস্তাবিত বাজেটে করপোরেট কর ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। অথচ ২০১৫ সাল থেকে ১৫ শতাংশ ছিল। ২০১৫ সালের আগ পর্যন্ত কর ছিল। 

ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) সভাপতি মাহাবুবুর রহমান বলেন, কর আদায়ে আগে থেকেই এক ধরনের জটিলতা রয়েছে। কোম্পানির লাভ থেকে কর নেওয়ার কথা। যেখানে লোকসান হচ্ছে, সেখানে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। টার্গেট করে এ খাত থেকে রেভিনিউ বাড়ানোর চিন্তা করা হলে একটা সংকট তৈরি হবে।
উদ্যোক্তারা আরও জানিয়েছেন, ফিড উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানিতে বর্তমানে ভুট্টায় ২ শতাংশ এবং সয়াবিন মিলে ৫ শতাংশ পর্যন্ত আগাম কর নেওয়া হচ্ছে। আগাম কর ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও জটিলতার কারণে তা আটকে থাকে। আগাম কর কমিয়ে আনার জন্য তারা দাবি জানিয়ে আসছেন। 
উদ্যোক্তারা সরকারকে সতর্ক করে বলেন, পোলট্রি খাত দেশের খাদ্য নিরাপত্তার অন্যতম স্তম্ভ। এই খাত চাপে পড়লে জনগণের প্রোটিন গ্রহণের সক্ষমতা কমে যাবে এবং দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য খাতে আরও খরচ বাড়বে। তাই বাজেটে পোলট্রি খাতের জন্য করনীতি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ