তাজা ফল আমদানিতে শুল্ককর কমাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। এতে সংস্থাটি বলছে, ফল অত্যাবশ্যকীয় পণ্য। তাই আমদানিতে শুল্ককর বিশেষ করে স্থানীয় পর্যায়ে অগ্রিম ভ্যাট ৫ শতাংশ প্রত্যাহার করা যেতে পারে। একই সঙ্গে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ১০ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা যায়। 

ট্যারিফ কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ফল আমদানিতে শুল্ককর কমানোর দাবিতে ফল আমদানিকারকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে এ সুপারিশ করা হয়েছে।  

চিঠিতে কমিশন বলেছে, ফলের চাহিদার সিংহভাগই আমদানি করে পূরণ হয়। গত কয়েক বছর ডলারের দাম ও শুল্ককর বাড়ার কারণে ফলের দাম বেড়েছে। শুল্ককর কাঠামো এবং ২০২১-২২ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আমদানির চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ফল আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। যেমন– আপেল আমদানি ৫২, মালটা ৭১ ও আঙুর আমদানি ২৯ শতাংশ কমেছে। গত ৯ জানুয়ারি ফলকে বিলাসী পণ্য বিবেচনা করে এর ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করার কারণে আমদানি আরও কমেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারির তুলনায় গত জানুয়ারিতে মেন্ডারিন আমদানি কমেছে ৫১ শতাংশ। এ ছাড়া আঙুর ২১, আপেল ৩, নাশপাতি ৪৬, আনার ও ড্রাগন ফল ৩২ শতাংশ আমদানি কমেছে। 

বর্তমানে সব মিলিয়ে ফল আমদানিতে মোট শুল্কভার রয়েছে ১৩৬ দশমিক ২০ শতাংশ। অর্থাৎ ৮৬ টাকায় ফল আমদানি করলে তার ওপর কর দিতে হয় ১২০ টাকা, যা ভোক্তার জন্য অসহনীয়। এ ক্ষেত্রে কমিশন বলেছে, উচ্চ শুল্কের কারণে বৈধ পথে আমদানি কমে অবৈধ পথে বাড়বে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে তাজা ফলে অতি মাত্রায় কেমিক্যাল ব্যবহারের প্রবণতা বাড়বে। আমদানি কমে গেলে শুধু ভোক্তার ক্ষতি নয়, রাজস্ব আহরণও কমবে। এসব বিবেচনায় চিঠিতে বলা হয়, ফল আমদানির পরবর্তী পর্যায়ে তেমন কোনো প্রক্রিয়াজাত (মূল্য সংযোজন) করা হয় না। তাই অগ্রিম কর (স্থানীয় পর্যায়ের অগ্রিম ভ্যাট ৫ শতাংশ) আরোপ করা সমীচীন নয়। এতে ব্যবসায়ীদের রিফান্ড নেওয়ার জন্য আবেদন করতে হয়। অনুমোদনের জন্য সময়ক্ষেপণসহ আর্থিক চাপের মুখে পড়তে হয়। খাদ্যপণ্য হিসেবে এটি অব্যাহতি দেওয়া যেতে পারে।

কমিশনের পর্যালোচনায় বলা হয়, মোট আমদানি মূল্যের ওপর ১০ শতাংশ এআইটি আরোপের কারণে তা সমন্বয় করতে ব্যবসায়ীদের অস্বাভাবিক মুনাফা দেখাতে হয়। বাস্তবতার সঙ্গে যার কোনো মিল নেই। বরং এতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ তৈরি হয়। অন্যদিকে, রিফান্ড দাবি করার জন্য ব্যবসায়ীকে আর্থিক ও অন্য চাপের মুখে পড়তে হয়। তাই এআইটি ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা যেতে পারে। এ ছাড়া নিত্যপণ্য আইন-১৯৫৬ অনুযায়ী, ফল অত্যাবশ্যকীয় পণ্য। এর ওপর আরোপিত অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার বা যৌক্তিক করা যেতে পারে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস য় র জন য র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য

কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।

মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।

দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।

লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।

দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।

জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।

রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।

দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ