খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ (কুয়েট) কোথাও ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হলে তার জন্য ছাত্রদল দায়ী থাকবে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। তিনি আজ বৃহস্পতিবার খুলনা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ওই দাবি করেন।

এক প্রশ্নের জাবাবে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন ফুটেজে দেখেছি, ওই হামলার সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ সম্পৃক্ত হয়েছিল।’


মতবিনিময় সভা নাম দেওয়া হলেও সেটি ছিল মূলত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তরের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ওই সভায় ঘুরেফিরে কুয়েট পরিস্থিতি ও গত বুধবার ছাত্রদলের সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত বিভিন্ন প্রশ্ন উঠে আসে। এসব প্রশ্নের জবাব দেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি।

কুয়েট ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার পেছনে দায়ী কে, এমন প্রশ্ন করা হলে কৌশলে উত্তর দেন জাহিদুল ইসলাম। গত বুধবার অনুষ্ঠিত হওয়া কুয়েটের ৯৩তম জরুরি সিন্ডিকেটের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ছাত্রদল দুই-তিন দিন আগ থেকে ক্যাম্পাসে প্রচারণা চালাচ্ছে। এ ঘটনা থেকেই সূত্রপাত হয়েছে। এরপর তাদের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়েছে। তারপর বাইরে থেকে বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে এসে হামলা চালিয়েছে। এর জন্য দায়ী স্পষ্ট হয়েছে।’

কুয়েট ক্যাম্পাসে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পেছনে ছাত্রশিবিরের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেন জাহিদুল। তিনি বলেন, ওই ঘটনার জন্য ছাত্রশিবিরের কোনো দায় নেই।

কুয়েটসহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বন্ধ হলে এর জন্য ছাত্রদল দায়ী থাকবে। কুয়েটে যে ঘটনাটা ঘটল, আমি মনে করি কোথাও সামনে যদি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয়, এর জন্য স্পষ্ট, প্রমাণসহকারে ছাত্রদল দায়ী থাকবে।’

শিবির সভাপতি বলেন, ‘কুয়েটে সব রাজনৈতিক সংগঠনকে লাল কার্ড দেখানো হয়েছে। যদি এমন ঘটনা না ঘটত, তাহলে কি আজকে লাল কার্ডের ঘটনা ঘটত! আজকে কি এই অস্থিতিশীল পরিবেশ সারা দেশে তৈরি হতো! তাহলে এর জন্য দায়ী কে?’

কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার ব্যাপারে জানতে চাইলে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতির সজ্ঞায়ন হলো, সেখানে শিক্ষামূলক কার্যক্রম থাকবে, জ্ঞানচর্চার প্রতিযোগিতা থাকবে, সেবামূলক কার্যক্রম থাকবে। শিক্ষার্থীদের মতের বাইরে ছাত্রশিবির কোনো মত চাপিয়ে দেয়নি, দেবেও না। শিক্ষার্থীরা যা চাইবে, ক্যাম্পাসে তাই হবে।’

গত বুধবার ছাত্রদলের করা একটি প্রশ্ন আজ ছাত্রশিবির সভাপতির কাছে করা হলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি হয়েছেন, তিনি কি তাঁর শিক্ষাজীবনে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন? অথবা তিনি কি কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছেন? তিনি মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়েই তাঁর কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।’

জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘যে ছাত্ররাজনীতির কারণে মানুষ হত্যা করতে হয়, যে ছাত্ররাজনীতির কারণে মায়ের বুক খালি হয়, সেই ছাত্ররাজনীতি আমরাও চাই না।’
সভার শুরুতেই খুলনা মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসেন বলেন, কেন্দ্রীয় সভাপতি খুলনা সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত হওয়া সায়েন্স ফেস্ট পরিদর্শন ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে এসেছেন। যেহেতু খুলনায় এসেছেন তাই তিনি খুলনার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে চান। তারই অংশ হিসেবে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় স্কুল কার্যক্রম সম্পাদক নোমান মোর্শেদ, খুলনা মহানগরের সভাপতি আরাফাত হোসেন, সেক্রেটারি রাকিব হাসান, আইন ও সমাজসেবা সম্পাদক মো.

আব্দুর রশিদ প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল দ র জন ত র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ