আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। বিগত বছরগুলোতে রমজান মাসে পর্যটকশূন্য ছিল সমুদ্রকন্যা খ্যাত কুয়াকাটা। পর্যটন সংশ্লিষ্টদের ধারণা, আগামী মাসের শুরু থেকেই পর্যটক আসা কমে যাবে। তার আগে শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লাখো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে দেশের অন্যতম এই পর্যটন কেন্দ্র।

সরকারি দুই দিনের ছুটিকে কেন্দ্র করেই পর্যটকদের আগমন ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেল থেকেই পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন।  

আরো পড়ুন:

খুলছে দেবতাখুম ভ্রমণের দুয়ার

কক্সবাজারে পর্যটকদের ঢল, উৎসবের আমেজ

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, আগত পর্যটকরা সৈকতের নোনা জলে গাঁ ভাসিয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতেছেন। অনেকে আবার প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে সৈকতের বেঞ্চিতে বসে উপভোগ করছেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। ঘোড়াসহ বিভিন্ন বাহনে চরে সৈকতের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ঘুরে বেড়াতেও দেখা গেছে অনেককে। একসঙ্গে ঘুরতে আসা পর্যটকদের বনভোজন কিংবা খেলাধুলায় মেতে থাকতে দেখা যায়। 

এদিকে, কুয়াকাটার হোটেল মোটেলের শতভাগ কক্ষ বুকিং রয়েছে। বিক্রি বেড়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। মৌসুমের শেষ সময়ে পর্যটকের এমন ভিড়ে উচ্ছ্বসিত ব্যবসায়ীরা। পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিষ্ট পুলিশ, থানা পুলিশ ও নৌ-পুলিশের সদস্যরা তৎপর রয়েছেন।

ঢাকার গাজীপুর থেকে আসা মোশারেফ-পারভিন দম্পিতি জানান, আগামী সপ্তাহ থেকে  রমজান মাস শুরু হবে। তাই আগে ভাগেই আমরা পরিবারের সবাইকে নিয়ে কুয়াকাটায় বেড়াতে এসেছি। আজকে সৈকতে অনেক মানুষ। এতো মানুষ একসঙ্গে আর দেখিনি। কুয়াকাটার পরিবেশ সমুদ্রের ছোট ছোট ঢেউ আমাদের ভালোই লেগেছে। 

উত্তরা থেকে আসা পর্যটক সোহান হোসেন বলেন, “আমরা এলাকার বন্ধুরা মিলে আজ (শুক্রবার) সকালে কুয়াকাটায় এসে পৌঁছেছি। গতকাল রওনা দেওয়ার আগে কুয়াকাটার কয়েকটি আবাসিক হোটেল যোগাযোগ করেছিলাম, কিন্তু কোথাও রুম পাইনি। কুয়াকাটায় পৌঁছে সোজা সৈকতে নেমে পড়েছি। বন্ধুরা মিলে সাঁতার কটেছি, অনেক মজা করেছি। সময় দারুন কাটছে। সন্ধ্যার মধ্যে যদি কোনো হোটেলে রুম খালি পাই  তাহলে আজও থাকতে চাই। না পেলে রাতের গাড়িতে ঢাকায় চলে যাব।”

ট্যুর অপারেটর এ্যাসোসিয়েশন অফ কুয়াকাটা (টোয়াক) এর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন রাজু বলেন, “কুয়াকাটায় আজ প্রায় লক্ষাধিক পর্যটকের আগমন ঘটেছে। সব হোটেল মোটেলের রুম বুকিং রয়েছে। পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠাগুলোতে বিক্রি বেড়েছে। আমাদের সংগঠনের সদস্যরা পর্যটকদের  সেবা দিয়ে যাচ্ছে।” 

কুয়াকাটা ট্যুরিষ্ট পুলিশ রিজিয়নের ইন্সপেক্টর মো.

হাবিবুর রহমান বলেন, “পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। বিভিন্ন স্পটে আমাদের সদস্য মোতায়েন রয়েছে। আমাদের টহল টিম মাঠে কাজ করছে। থানা পুলিশ এবং নৌ-পুলিশের সদস্যরাও মাঠে তৎপর রয়েছে।” 

ঢাকা/ইমরান/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপক ল র সদস য আম দ র রমজ ন ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ 

রাজধানী ঢাকা থেকে ছুটিতে পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন হাবিবুল আউয়াল। ভালো হোটেলে রুম না পাওয়ায় শহরের কলাতলী এলাকায় মধ্যমমানের একটি আবাসিক হোটেলে উঠেছেন। তাঁর কাছে এক রাতের জন্য হোটেলটির দুটি রুমের ভাড়া নেওয়া হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। যদিও অন্য সময়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকায় এই মানের হোটেলে রুম ভাড়া পাওয়া যায়। ঈদ মৌসুমে চাহিদা বাড়ায় অন্য সময়ের তুলনায় ১২ গুণের বেশি ভাড়া নেওয়া হয়েছে তাঁর কাছ থেকে।

কোরবানির ঈদ ও পরবর্তী ছুটির সময়ে অতিরিক্ত পর্যটক আসায় কক্সবাজার শহর ও এর আশপাশের পাঁচ শতাধিক আবাসিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টের প্রায় প্রতিটিতেই অন্য সময়ের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। শুধু আবাসিক হোটেল নয়, রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে পর্যটনসংশ্লিষ্ট সব সেবা খাতেই অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, প্রতিটি ছুটির মৌসুমে কক্সবাজারে পর্যটকদের সংখ্যা একটু বাড়লেই তাদের কাছ থেকে ‘গলাকাটা’ টাকা নেওয়া হয়।

ঈদুল আজহার লম্বা ছুটি শেষ হচ্ছে আজ। গতকাল শুক্রবার কক্সবাজার সৈকতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় ছিল পর্যটকের ভিড়। সাগরতীর পরিণত হয়েছিল উৎসবের বেলাভূমিতে। শুক্রবার সকাল থেকে তীব্র গরম থাকলেও পর্যটকে পূর্ণ ছিল কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট, লাবণী, কলাতলী, হিমছড়ি, ইনানী, পাতুয়ারটেক থেকে মেরিন ড্রাইভ পর্যন্ত পুরো এলাকা।

রাজধানীর মতিঝিল থেকে ঘুরতে আসা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এখন সমুদ্রে গোসল করছি। বিকেলে মেরিন ড্রাইভে ঘুরব, এরপর শনিবার রাতে ঢাকায় ফিরে যাব।’ নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা আসিফ আহমেদ বলেন, ‘অনেক মানুষ, তবুও পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দ করছি, ছবি তুলছি, বিচ বাইক ও ঘোড়ায় চড়েছি।’ 

কক্সবাজার শহরের পাঁচতারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ নুর সোমেল সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার পর্যন্ত তাদের হোটেলের ৭০-৮৫ শতাংশ রুম বুকিং রয়েছে। যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক হোটেল ব্যবসায়ী জানান, ১৩ জুন পর্যন্ত অধিকাংশ আবাসিক হোটেল সম্পূর্ণ বুকিং হয়ে গেছে। তবে প্রশাসন, কর ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের ফাঁকি দিতে তারা বিষয়টি স্বীকার করতে চান না। 

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের এএসপি নিত্যানন্দ দাস বলেন, এবার কোরবানির ঈদের পর গত সাত দিনে আট লাখের বেশি মানুষ কক্সবাজার ভ্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, অতীতের মতো এবারও শহর ও সমুদ্রসৈকতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সৈকতের প্রতিটি গোলঘরে সার্বক্ষণিক পুলিশের অবস্থান এবং মোবাইল টিমসহ কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পর্যটন স্পটগুলোতে সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা। 

আবাসিক হোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে এএসপি জানান, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গত কয়েকদিন এমন পাঁচটি অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। 

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহিদুল আলম বলেন, পর্যটকদের হয়রানি রোধে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত মাইকিং করা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে কেউ অসুন্দর করলে ব্যবস্থা: চসিক মেয়র
  • সীতাকুণ্ডে ঝরনায় ২ বছরে ৮ পর্যটকের মৃত্যু, নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়নি বন বিভাগ
  • আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ
  • বরিশাল: পর্যটনশিল্পের নতুন সম্ভাবনা
  • বান্দরবানে পর্যটক নিখোঁজের ঘটনায় পর্যটন সংস্থার প্রধান গ্রেপ্তার
  • কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ