সমাবেশ নিয়ে বিরোধে বৈষম্যবিরোধীদের দুই পক্ষ
Published: 21st, February 2025 GMT
চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে নগরের লালদীঘি ময়দানে ডাকা হয়েছে সমাবেশ। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেকটি পক্ষ বলছে, সমাবেশটি সংগঠনের নয়। বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।
পক্ষ দুটির মধ্যে একটিতে রয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্র থেকে দেওয়া চট্টগ্রামের কমিটির নেতা-কর্মীরা, অন্যটিতে রয়েছেন এই কমিটি থেকে পদত্যাগ করা ও কমিটিকে প্রত্যাখ্যানকারীরা।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা এবং জুলাই-আগস্ট গণহত্যা, শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড, বিডিআর হত্যাকাণ্ডসহ সব হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার নিশ্চিতের দাবিতে আজ শুক্রবার নগরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দেয় কমিটি প্রত্যাখ্যান করা অংশটি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রাম’ নামের ফেসবুক পেজ থেকে এ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। নগরের লালদীঘি ময়দানে আজ বেলা তিনটায় এ সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে।
গতকাল রাতে ফেসবুকে এই কর্মসূচি ঘোষণার ঠিক এক ঘণ্টা পর ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন–চট্টগ্রাম’ নামের আরেকটি পেজ থেকে বলা হয়, লালদীঘি ময়দানের কর্মসূচি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নয়। এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম নগরের মুখপাত্র ফাতেমা খানম লিজার সই করা একটি বিবৃতিও আপলোড করা হয়েছে। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রামের ব্যানারে ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে, সেটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের নয়। এটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চেষ্টা, যার মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কলঙ্কিত করার চক্রান্ত চলছে।
গত সোমবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম মহানগর এবং চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলার কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়। পরদিন মঙ্গলবার আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকায় থাকা যোদ্ধাদের অবমূল্যায়ন এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস বিকৃত করে কমিটি দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে পদত্যাগ করেন কয়েকজন নেতা। মূলত তাঁদের পক্ষ থেকেই লালদীঘির কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে। এতে সমর্থন জানিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে খুদে বার্তায় সমাবেশের ব্যানার পাঠিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য রাসেল আহমেদ। তবে এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়ক জোবায়রুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধারা এ কর্মসূচি পালন করছেন। আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন।’
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম নগরের আহ্বায়ক রিজাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ চট্টগ্রাম মহানগর, দক্ষিণ জেলা, উত্তর জেলার উদ্যোগে নগরে প্রভাতফেরি, শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন ও জুলাই শহীদদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার কর্মসূচি রয়েছে। লালদীঘির কর্মসূচি আমাদের নয়।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দেশের জন্য যা যা করা দরকার, সব করেছেন আহমদ ছফা
আহমদ ছফাকে বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই সহ্য করতে পারতেন না। কিন্তু তাঁর বেশির ভাগ কথা এখন সত্যে পরিণত হয়েছে। দেশের সঙ্গে তিনি প্রাণকে যুক্ত করেছিলেন। দেশকে ভালোবেসে যা যা করা দরকার, তার সবকিছু করেছেন।
শুক্রবার বিকেলে আহমদ ছফা স্মৃতি বক্তৃতায় সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান এসব কথা বলেন। এশীয় শিল্পী ও সংস্কৃতি সভা জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘আহমদ ছফা স্মৃতি বক্তৃতা-২০২৫’ আয়োজন করে। ‘আহমদ ছফার রাষ্ট্র বাসনা এবং জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পরিচয়’ শীর্ষক স্মৃতি বক্তৃতা দেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের পরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এশীয় শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সভার সভাপতি জহিরুল ইসলাম। আহমদ ছফা (১৯৪৩–২০০১) ছিলেন লেখক, প্রগতিশীল সাহিত্যকর্মী ও রাজনৈতিক চিন্তক।
অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আহমদ ছফা ছিলেন মূলত সাহিত্যিক। তবে তিনি সাহিত্যের গণ্ডি পেরিয়ে চিন্তাকে রাষ্ট্রভাবনা বিষয়ে প্রসারিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন অনেক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। তিনি এমন বিষয় নিয়ে চিন্তা করেছিলেন, তা অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না।’ ছফা বলেছিলেন, ‘বিপ্লবের একটি নতুন ভাষা থাকতে হবে। মানুষের রাষ্ট্রের বাসনা বুঝতে হবে। দেশটা আমার নিজের বলে মনে করলে তার সমস্যার সমাধানও আমার নিজের মতো করেই ভাবতে হবে।’
স্মৃতি বক্তৃতায় ফারুক ওয়াসিফ বলেন, আহমদ ছফা রাষ্ট্র নিয়ে গভীরভাবে ভেবেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে ধরনের দেশ সেই বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করার মতো কোনো তাত্ত্বিক রাজনৈতিক রূপরেখা নেই। কোনো রাজনৈতিক দলও নেই।
ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পূর্বপরিকল্পনা ছিল না। একাত্তর ছিল অপরিকল্পিত। একইভাবে জুলাই অভ্যুত্থানও হয়েছে অপ্রস্তুতভাবে। এখন জুলাইয়ের নেতারা প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হয়েছেন। বড় দলের যে সামর্থ্য আছে, সেই শক্তি–সামর্থ্য তাদের নেই। তারা মিত্রহীন হয়ে পড়েছে।’
আহমদ ছফার বন্ধু ব্যবসায়ী আবদুল হক বলেন, জনগণ রাষ্ট্রের পরিবর্তন চেয়েছিল। বাংলাদেশের নবীন প্রজন্ম সেই পরিবর্তন ঘটিয়েছে। সারা বিশ্ব দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবাদ করতে জানে। এখন একটি নতুন রাজনীতি দরকার।