ঢাকার ধামরাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদ্য ঘোষিত কমিটি থেকে মূখ্য সংগঠক রহিত খন্দকার ও যুগ্ম সদস্য সচিব জুবায়েদ আলম পিয়াসসহ অন্তত অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন। কমিটিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করা হয়েছে অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করে কমিটি অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন তারা। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে ধামরাই উপজেলা পরিষদ চত্বরে এক বিক্ষোভ মিছিলের পর সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেন তারা। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শতাধিক নেতাকর্মী যোগ দেন।

বক্তারা বলেন, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ধামরাই উপজেলা কমিটি গঠন করে। সেই কমিটিতে উজ্জ্বল হোসেন নামে যাকে আহ্বায়ক করা হয়েছে, তিনি ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত। তার পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত। উজ্জ্বল আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনে প্রচারে অংশ নিয়েছেন। উজ্জ্বলের নিজের ওয়ার্ডের লোকদের কমিটিতে বেশি বেশি পদায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়াও বিতর্কিতদের কমিটিতে নেওয়া হয়েছে। 

তারা অভিযোগ করে বলেন, কমিটি গঠনের আগেই আমরা বিষয়টি অবহিত করেছি। কমিটি করার দায়িত্বে থাকা মেহরাব সিফাত অবৈধভাবে এই কমিটি করেছেন, সব জেনেশুনেই তিনি করেছেন। তারা এই ব্যানারকে কলঙ্কিত করেছেন। আমরা অবিলম্বে কমিটি বাতিল ও পুনর্গঠনের দাবি জানাই। 

এ সময় বিক্ষুব্ধরা কমিটি বাতিল না হলে কঠোর প্রতিবাদ গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দেন এবং ঘোষিত কমিটি অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।

নবগঠিত কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব জুবায়েদ আলম পিয়াস এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ধামরাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যে কমিটি দেওয়া হয়েছে, এটি একপাক্ষিক অবাঞ্ছিত কমিটি। কমিটিতে আওয়ামীপন্থী লোকজনকে দেখা যাচ্ছে। আহ্বায়ক উজ্জ্বল আওয়ামী পরিবারের সন্তান এবং বিতর্কিত। এছাড়া কমিটির বেশিরভাগ সদস্যই আওয়ামীপন্থী ও উজ্জ্বলপন্থী। কমিটি ভর্তি ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রয়েছে। ধামরাইয়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে ছিল, তারাই আন্দোলন শুরু করে। আমরা তাদের বাদ দিয়ে কিছু করতে পারি না।’’

‘‘আমরা কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্মারকলিপি দেব। আমরা জানিয়েছি, তারা ব্যবস্থা নেয়নি কেনো, তার জবাবদিহিতাও করতে হবে।’’ বলেন পিয়াস। 

নুসরাত জাহান আনিকা বলেন, ‘‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যে কমিটি হয়েছে, সেটি আমাদের কাছে সম্পূর্ণ অবাঞ্ছিত মনে হয়েছে, তাতে আওয়ামী লীগের লোকজন রয়েছে। ধামরাইয়ে যখন আমরা আন্দোলন শুরু করি, কোনো সমন্বয়ক ছিল না, কোনো সহযোগিতা ছিল না। প্রচুর হুমকি পেয়েছি। আমরা কষ্ট করেছি, আমাদের ভাইয়ের রক্তের ওপর দিয়ে যখন আওয়ামী লীগের কেউ আহ্বায়ক হবে, আমরা কি সেটা সহ্য করবো?’’

‘‘আমাদের দাবি, এ সংগঠন পুনর্গঠন করা হোক। যারা আন্দোলনের সামনে ছিল তাদের দায়িত্ব দেওয়া হোক।’’ বলেন তিনি। 

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ধামরাই উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক উজ্জ্বল হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘ওরা যে অভিযোগ করেছে এসব অভিযোগ আরও ১০ দিন আগে থেকে ঢাকায় কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানিয়ে এসেছে। কিন্তু কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। আর যেসব অভিযোগ দিয়েছে, সেগুলোর জবাবের প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। আমরাও সবাইকে জানাবো। ওরা যে অভিযোগ তুলেছে তার কোনো প্রমাণ নেই। ওদের নেপথ্যে কী, সেগুলোও সামনে আসা উচিত। প্রমাণ আমরাও দেব।’’

অভিযোগের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মেহরাব সিফাত বলেন, ‘‘পুরো প্রক্রিয়া একটা রাজনৈতিক গোষ্ঠী, যারা আন্দোলন করেছে, কিন্তু আন্দোলনের পরে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। সেটিরই একটা ঘটনা এটা। যার নামে অভিযোগ, সেই অভিযোগের আসল তথ্যসহ প্রমাণ করতে পারবে না। আমাকে যেসব তথ্য দেওয়া হয়েছিল, আমি সেগুলো পরীক্ষা করিয়েছি। অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। দ্বিতীয়ত, তাদের সদিচ্ছার যথেষ্ট অভাব আছে। যে জন্য আমার সম্মুখীন না হয়ে তারা বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করে। কারণ যখন কমিটি করার জন্য ঘোষণা দিয়ে মাঠপর্যায়ে যাই, পাবলিক পেজ থেকে ঘোষণা দেই, তখন তারা সম্মুখীন হয় না, বক্তব্য দেয় না। কিন্তু কমিটি দেওয়ার আগমুহূর্তে তারা কমিটি দিতে নিষেধ করে ও কমিটি আটকানোর চেষ্টা করে এবং রাজনৈতিক দলের যারা তারা নিজেদের আন্দোলনের পরিচয় রেখে, রাজনৈতিক পরিচয়ে থেকে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব পদগুলো গ্রাস করতে চায়। আমাদের যেহেতু অরাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম করার কথা ছিল, তাই তারা এখান থেকে বাদ পড়ে। সেই প্রতিহিংসা থেকে তারা প্রেস ব্রিফিং করে।’’

প্রতিবাদ করা হলেও এই বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি।

এর আগে, কমিটি ঘোষণা হওয়ার পরপরই এ নিয়ে প্রতিবাদ জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা, দেন পদত্যাগের ঘোষণা। ফেসবুকে এ কমিটি নিয়ে নিন্দা জানান তারা।

তারা//

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন ত ক অব ঞ ছ ত ন ত কর ম পদত য গ আম দ র য গ কর ত কম ট কম ট ত কর ছ ন আওয় ম সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

শত্রুতার জেরে সাত গরুকে বিষ প্রয়োগের অভিযোগ, মারা গেছে ৩টি

গোপালগঞ্জে পূর্ব শত্রুতার জেরে খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তিনটি গরু হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আরো চারটি গরু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ফলে দুই কৃষক পরিবারের অন্তত পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। গত শনিবার (১ নভেম্বর) মধ্যরাতে সদর উপজেলার সিংগারকুল পূর্বপাড়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কীভাবে গরুগুলো মারা গেছে তা খতিয়ে দেখতে নমুনা সংগ্রহ করেছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। পুলিশ বলছে, তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।

আরো পড়ুন:

‎নামাজরত বাবাকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ, ৩ পুলিশ আহত

গাইবান্ধায় ৩ জনকে পিটিয়ে হত্যা: মামলা দায়ের 

এলাকাসাসী জানান, সিংগারকুল পূর্বপাড়া গ্রামের দুই ভাই মো. রাসুল গাজী ও হাসিব গাজী কৃষি কাজ করে সংসার চালান। তারা খামার করে কয়েকটি গরু লালন-পালন করছেন। শনিবার মধ্যরাত সাড়ে ১২টার দিকে গরুর গোঙানির শব্দ শুনে পাশের বাড়ির এক আত্মীয় ছুটে গিয়ে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন দুই ভাইকে। তারা স্থানীয় পশু চিকিৎসককে খবর দেন। সকাল হওয়ার আগেই তিনটি গরু মারা যায়। একই গোয়াল ঘরে থাকা একটি বড় ষাঁড়, একটি বাছুর ও অপর গোয়ালে থাকা দুটি ষাঁড় এখনো অসুস্থ। 

ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক মো. রাসুল গাজী জানান, শত্রুতা করেই খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তাদের গরুগুলোকে হত্যা করা হয়েছে। রাতেই টের পেয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেও বাঁচানো যায়নি গরুগুলো। দুই ভাইয়ের আরো চারটি গরু অসুস্থ রয়েছে। এতে তাদের অন্তত ৫-৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। 

তিনি জানান, এ ঘটনায় সদর থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

কারা তাদের গরু হত্যা করেছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাসুল গাজী বলেন, “ঘর থেকে বের হয়ে কয়েকজনকে দৌঁড়ে যেতে দেখেছি। তাদের চেহারা দেখতে পারিনি। ফলে কাউকে চিনতে পারিনি।” 

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক হাসিব গাজী বলেন, ‍“কারো সঙ্গে আমাদের শত্রুতা থাকতেই পারে। এই অবলা পশুগুলো কার কী ক্ষতি করেছে। কোন অপরাধে এদের হত্যা করা হলো। আমরা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”

এলাকাবাসী মো. ইমদাদ শেখ বলেন, “গত শনিবার রাতে বৃষ্টি হয়। এই সুযোগে গরুগুলোকে বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমরা চাই দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।”

গোপালগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোবিন্দ চন্দ্র সর্দার বলেন, “সিংগারকুল পূর্বপাড়া গ্রামে কয়েকটি গরুকে বিষ খাওয়ানো হয় এমন খবর পেয়ে সকালে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে যান। তিনি অসুস্থ গরুগুলোকে চিকিৎসা দেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পয়জনজনিত কারণেই গরুগুলো মারা গেছে। মারা যাওয়া গরুর নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই গরু তিনটির মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।”

গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ আলম বলেন, “আমি ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে গিয়ে তদন্ত শুরু করি। মারা যাওয়া গোরুগুলোর নমুনা সংগ্রহ ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/বাদল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ