ধামরাইয়ে মূখ্য সংগঠকসহ বহু নেতাকর্মীর পদত্যাগ, কমিটি অবাঞ্ছিত
Published: 21st, February 2025 GMT
ঢাকার ধামরাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদ্য ঘোষিত কমিটি থেকে মূখ্য সংগঠক রহিত খন্দকার ও যুগ্ম সদস্য সচিব জুবায়েদ আলম পিয়াসসহ অন্তত অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন। কমিটিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করা হয়েছে অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করে কমিটি অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন তারা। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে ধামরাই উপজেলা পরিষদ চত্বরে এক বিক্ষোভ মিছিলের পর সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেন তারা। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শতাধিক নেতাকর্মী যোগ দেন।
বক্তারা বলেন, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ধামরাই উপজেলা কমিটি গঠন করে। সেই কমিটিতে উজ্জ্বল হোসেন নামে যাকে আহ্বায়ক করা হয়েছে, তিনি ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত। তার পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত। উজ্জ্বল আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনে প্রচারে অংশ নিয়েছেন। উজ্জ্বলের নিজের ওয়ার্ডের লোকদের কমিটিতে বেশি বেশি পদায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়াও বিতর্কিতদের কমিটিতে নেওয়া হয়েছে।
তারা অভিযোগ করে বলেন, কমিটি গঠনের আগেই আমরা বিষয়টি অবহিত করেছি। কমিটি করার দায়িত্বে থাকা মেহরাব সিফাত অবৈধভাবে এই কমিটি করেছেন, সব জেনেশুনেই তিনি করেছেন। তারা এই ব্যানারকে কলঙ্কিত করেছেন। আমরা অবিলম্বে কমিটি বাতিল ও পুনর্গঠনের দাবি জানাই।
এ সময় বিক্ষুব্ধরা কমিটি বাতিল না হলে কঠোর প্রতিবাদ গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দেন এবং ঘোষিত কমিটি অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
নবগঠিত কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব জুবায়েদ আলম পিয়াস এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ধামরাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যে কমিটি দেওয়া হয়েছে, এটি একপাক্ষিক অবাঞ্ছিত কমিটি। কমিটিতে আওয়ামীপন্থী লোকজনকে দেখা যাচ্ছে। আহ্বায়ক উজ্জ্বল আওয়ামী পরিবারের সন্তান এবং বিতর্কিত। এছাড়া কমিটির বেশিরভাগ সদস্যই আওয়ামীপন্থী ও উজ্জ্বলপন্থী। কমিটি ভর্তি ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রয়েছে। ধামরাইয়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে ছিল, তারাই আন্দোলন শুরু করে। আমরা তাদের বাদ দিয়ে কিছু করতে পারি না।’’
‘‘আমরা কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্মারকলিপি দেব। আমরা জানিয়েছি, তারা ব্যবস্থা নেয়নি কেনো, তার জবাবদিহিতাও করতে হবে।’’ বলেন পিয়াস।
নুসরাত জাহান আনিকা বলেন, ‘‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যে কমিটি হয়েছে, সেটি আমাদের কাছে সম্পূর্ণ অবাঞ্ছিত মনে হয়েছে, তাতে আওয়ামী লীগের লোকজন রয়েছে। ধামরাইয়ে যখন আমরা আন্দোলন শুরু করি, কোনো সমন্বয়ক ছিল না, কোনো সহযোগিতা ছিল না। প্রচুর হুমকি পেয়েছি। আমরা কষ্ট করেছি, আমাদের ভাইয়ের রক্তের ওপর দিয়ে যখন আওয়ামী লীগের কেউ আহ্বায়ক হবে, আমরা কি সেটা সহ্য করবো?’’
‘‘আমাদের দাবি, এ সংগঠন পুনর্গঠন করা হোক। যারা আন্দোলনের সামনে ছিল তাদের দায়িত্ব দেওয়া হোক।’’ বলেন তিনি।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ধামরাই উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক উজ্জ্বল হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘ওরা যে অভিযোগ করেছে এসব অভিযোগ আরও ১০ দিন আগে থেকে ঢাকায় কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানিয়ে এসেছে। কিন্তু কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। আর যেসব অভিযোগ দিয়েছে, সেগুলোর জবাবের প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। আমরাও সবাইকে জানাবো। ওরা যে অভিযোগ তুলেছে তার কোনো প্রমাণ নেই। ওদের নেপথ্যে কী, সেগুলোও সামনে আসা উচিত। প্রমাণ আমরাও দেব।’’
অভিযোগের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মেহরাব সিফাত বলেন, ‘‘পুরো প্রক্রিয়া একটা রাজনৈতিক গোষ্ঠী, যারা আন্দোলন করেছে, কিন্তু আন্দোলনের পরে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। সেটিরই একটা ঘটনা এটা। যার নামে অভিযোগ, সেই অভিযোগের আসল তথ্যসহ প্রমাণ করতে পারবে না। আমাকে যেসব তথ্য দেওয়া হয়েছিল, আমি সেগুলো পরীক্ষা করিয়েছি। অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। দ্বিতীয়ত, তাদের সদিচ্ছার যথেষ্ট অভাব আছে। যে জন্য আমার সম্মুখীন না হয়ে তারা বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করে। কারণ যখন কমিটি করার জন্য ঘোষণা দিয়ে মাঠপর্যায়ে যাই, পাবলিক পেজ থেকে ঘোষণা দেই, তখন তারা সম্মুখীন হয় না, বক্তব্য দেয় না। কিন্তু কমিটি দেওয়ার আগমুহূর্তে তারা কমিটি দিতে নিষেধ করে ও কমিটি আটকানোর চেষ্টা করে এবং রাজনৈতিক দলের যারা তারা নিজেদের আন্দোলনের পরিচয় রেখে, রাজনৈতিক পরিচয়ে থেকে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব পদগুলো গ্রাস করতে চায়। আমাদের যেহেতু অরাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম করার কথা ছিল, তাই তারা এখান থেকে বাদ পড়ে। সেই প্রতিহিংসা থেকে তারা প্রেস ব্রিফিং করে।’’
প্রতিবাদ করা হলেও এই বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি।
এর আগে, কমিটি ঘোষণা হওয়ার পরপরই এ নিয়ে প্রতিবাদ জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা, দেন পদত্যাগের ঘোষণা। ফেসবুকে এ কমিটি নিয়ে নিন্দা জানান তারা।
তারা//
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন ত ক অব ঞ ছ ত ন ত কর ম পদত য গ আম দ র য গ কর ত কম ট কম ট ত কর ছ ন আওয় ম সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
পুলিশের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে: সলিমুল্লাহ খান
লেখক ও অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, আমাদের বুকে হাত দিয়ে স্বীকার করতে হবে, পুলিশের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। পুলিশের যে পজিশনে থাকার কথা ছিল সে পজিশনে নেই। পুলিশ যেই আইনে চলে সেখানে পদে পদে সমস্যা আছে। এসব বিষের মাঝেমধ্যে আলোচনা করা উচিত এবং খোলাখুলি আলোচনা হওয়া উচিত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজারবাগে পুলিশ সপ্তাহের বিশেষ আয়োজন ‘নাগরিক ভাবনায় জনতার পুলিশ: নিরাপত্তা ও আস্থার বন্ধন’ আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, পুলিশ শুধু রাষ্ট্রযন্ত্রের অংশ নয়, সমাজেরও অংশ। পুলিশের সঙ্গে জনতার বিভক্তির মূলে যেতে হবে, এটা হলো জনতার সঙ্গে রাষ্ট্রের বিভক্তি। আর এই সমস্যার সমাধান হলো গণতন্ত্র।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক আইজিপি আব্দুল কায়ুম বলেন, এত বড় একটা পরিবর্তন হয়ে গেল, একটা গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেল; ছাত্র-জনতা তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা বলেছে, তারা নতুন একটি বাংলাদেশ গড়তে চায়। একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল স্বাধীনতার পর। কিন্তু সঠিকভাবে আমরা এগোতে পারিনি, আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এই যে একটা সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা অনেক স্বপ্ন, এই স্বপ্ন যেন ব্যর্থ না হয়। সে জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ২০০৯ থেকে ২৪ পর্যন্ত আমরা যা দেখলাম, তা কল্পনা করা যায় না। আগেও গণতন্ত্র ছিল না, কিন্তু আমরা সেবা দিতে পেরেছি। তবে গত ১৫ বছরের মতো আমরা দারোয়ানে পরিণত হইনি। গণতন্ত্র থাকলে যে সুবিধাটা হয়, সেটা হলো, পাঁচ বছর পর আপনাকে ভোটারদের কাছে যেতে হবে এবং মেন্ডেট নিতে হবে আপনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারবেন না। ২০০৯ সালের নির্বাচন যে খুব নিখুঁত হয়েছে, তা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারব না। তার পরবর্তী তিনটা নির্বাচনে যা হয়েছে তা আমরা সবাই জানি। যখন একচ্ছত্র ক্ষমতা এসে যায় তখন প্রশাসন ভেঙে পড়ে। এটা ভয়, খুন-গুম ও সন্ত্রাস দ্বারা সম্ভব হয়েছে। এ সময়টাতে শুধু এক শ্রেণির পুলিশ কর্মকর্তা না সব সেক্টরের এক শ্রেণির কর্মকর্তা অতি উৎসাহিত হয়ে কাজ করেছে।
তিনি বলেন, যা হওয়ার হয়েছে, আমাদের আবার নতুন করে মানুষের সেবা দিতে হবে। সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কমিউনিটি পুলিশিং করতে হবে।
সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা পুলিশ সংস্কার কমিশনকে ব্যর্থ উল্লেখ করে বলেন, সংস্কার কমিশন পুলিশের বিষয়ে বলছে, অনেক বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার। পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার–যদি এই কথা বলা হয়, তাহলে এই সংস্কার কমিশনের কী দরকার। এই পুলিশ কমিশন ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন নিয়ে কিছু বলে না গণ্ডগোল কিন্তু ওইখানেও আছে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা যদি না থাকে তাহলে পুলিশ কীভাবে কাজ করবে। যাদের সুবাদে আমরা আজ কথা বলতে পারছি, সেটা কতদিন বলতে পারবো সেটার কোনও গ্যারান্টি নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর যদি সদিচ্ছা না থাকে তাহলে সম্ভব না।
তিনি বলেন, পুলিশের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক কিন্তু ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার। এটা বদলানো পুলিশের হাতে নাই। পুলিশের অনেক অফিসাররা দুর্নীতিতে জড়িয়েছে।
পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত আইজিপি গোলাম রসুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন– নিউ এইজের সম্পাদক নুরুল হুদা, এপেক্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির মঞ্জু, কর্ম কমিশনের সদস্য অধ্যাপক সায়মা চৌধুরী, নির্বাচন কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ করিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাহিত্যিক, খেলোয়াড়সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিরা।