বগুড়ায় ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন ২৫ বিদেশি নাগরিক
Published: 21st, February 2025 GMT
বগুড়ার বীট মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ২৫ জন বিদেশি নাগরিক। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবসে শুক্রবার সকালে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা।
ইতালি, নেপাল, মালয়েশিয়া ও ভারত থেকে আসা এই ২৫ জন নাগরিক শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আলোচনা সভা ও শিক্ষার্থীদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তারা পঞ্চম বগুড়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিতে বগুড়ায় এসেছিলেন।
আলোচনা সভায় ইতালির নাগরিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা আলবার্তো স্টারোস্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় অনেক বড়। ভাষার জন্য তাদের যে ত্যাগ, তা এখন সারা পৃথিবীর মানুষ যথাযথভাবে উদযাপন করছে। এবারের উদযাপনটা আমার কাছে ভিন্ন। কারণ বাংলাদেশে বসেই শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পেরেছি।’
মালয়েশিয়ার নাগরিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা জুনিয়া আনিলিক বলেন, ‘আমাদের দেশেও প্রতিবছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন করে থাকি। বাংলাদেশের বগুড়ায় এসে এই আয়োজন দেখে আমরা মুগ্ধ হয়েছি। এ দেশের শিক্ষার্থীরা অনেক মেধাবী। আশা করি তারা দেশের ভাষা আরও প্রসিদ্ধ করে করবে।’
বীট মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ প্রকৌশলী সাহাবুদ্দীন সৈকত বলেন, ‘মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে আমাদের প্রতিষ্ঠানে নানান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এই আয়োজনে ২৫ জন বিদেশি নাগরিক শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। ভাষার মাসে এটা নিঃসন্দেহে অনেক গর্বের বিষয়।’
সভা শেষে শিক্ষার্থীরা মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। পরে ২৫ জন বিদেশি নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানপ্রধান চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক অলোক পাল এবং তাসনিম ত্রয়ী।
অপরদিকে জেলা প্রশাসন ও জাসাস শহীদ খোকন পার্কে সাত দিনব্যাপী বই মেলার আয়োজন করেছে। এছাড়া সরকারি বেসরকারি রাজনৈতিক ও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে মহান ২১ ফেব্রয়ারি উদযাপন করে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।