শিরোনামহীনের ‘প্রিয়তমা’ প্রশংসা কুড়াচ্ছে
Published: 21st, February 2025 GMT
শিরোনামহীনের ‘বন্ধ জানালা’, ‘হাসিমুখ’ কিংবা ‘ইচ্ছে ঘুড়ি’ গান শুনতে শুনতে একজন শ্রোতা বিষাদের সাগরে ভেসে যেতে পারেন! গানগুলো কখনো শ্রোতার ধমনিতে রক্ত সঞ্চালনা বাড়িয়ে দেয়, কখনো গহীন নিশীথিনীর মতো গম্ভীর করে তোলে। এমন আরো বেশ কটি গান রয়েছে দেশের জনপ্রিয় এই দলটির।
নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে যাত্রা শুরু করে শ্রোতাদের মাঝে দারুণ সাড়া ফেলে শিরোনামহীন। এখনো স্টেজে পারফর্ম করছে। তবে প্রায় তিন দশকের জার্নিতে নানারকম ঘাতপ্রতিঘাতের মুখোমুখি হয়েছে দলটি। মাঝে তেমন সাড়া জাগানো গানও উপহার দিতে পারেনি। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পেয়েছে দলটির নতুন গান ‘প্রিয়তমা’।
“প্রিয়তমা, চোখে চোখ রেখে/কথা হোক নিরবে/ কিছু কথা এভাবেই নির্বাক/ একান্তে নিবিড়ে/ ঝাঁঝালো বাতাসে বেদনায় নীল ঠোঁট/ অজস্র বেলীফুল হাতে অভিমান/ ম্রিয়মাণ বিকেলে/ পৃথিবীর মিথ্যে স্বপ্নের আড়ালে/ অযথাই কি নিভে যায় আলো/ শেষ বিকেলে?”— এমন কথার গানটি রচনা করেছেন জিয়াউর রহমান। সুর করেছেন কাজী আহমেদ শাফিন।
আরো পড়ুন:
অ্যাকাপেলায় একুশের গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’
হৃদয় খানের সংসার ভাঙার গুঞ্জন
দলটির অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে গানটি মুক্তির পর ভূয়সী প্রশংসা করছেন নেটিজেনরা। আপ্লুত হয়েছেন অনেকে। নাঈম নামে একজন লেখেন, “শুরুটাই মনে ছুয়ে দিল। বাকিটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।” সাদ্দাম সিকদার লেখেন, “গান আর অ্যালকোহলে একটা দারুণ মিল রয়েছে, দুটোই যত পুরোনো হয় ততই নেশা বারে।” মিউজিক ভিডিও ও গানের সুখ্যাতি করে নাসিফ হাসান লেখেন, “সত্যি কথা বলতে, যেরকম লোকেশন ও গান কম্পোজিশনে একেবারে অনবদ্যভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।”
গালিব লেখেন, “অনবদ্য সৃষ্টি হবে এটা। প্রসঙ্গত, সব গানই কবিতা, সব কবিতাই গান না, শিরোনামহীন মানেই সব কবিতায় গান, সব গানই কবিতা। ধন্যবাদ শিরোনামহীন!” রাতুল লেখেন, “প্রথম শুনলাম! এই অবেলায়-এর পর এটা বেস্ট মনে হচ্ছে! অসাধারণ! চোখের জল বের করে আনার মতো একটা গান! লাভ ইউ শিরোনামহীন-ব্রাদারস।” এমন অসংখ্য মন্তব্য ভেসে বেড়াচ্ছে গানটির কমেন্ট বক্সে।
‘প্রিয়তমা’ গানটি মুক্তির পর কেটে গেছে পাঁচ দিন। এরই মধ্যে প্রায় ৫ লাখ ৭৪ হাজারের বেশি দেখা হয়েছে গানটির ভিডিও। এক বিবৃতিতে শিরোনামহীন জানিয়েছে, “প্রিয়তমা’ ৫ দিনে ৫ লাখ। সারা বিশ্বের ইউটিউব মিউজিক ট্রেন্ডিংয়ে চলে এসেছে টপ থার্টিনের ভিতর। শেয়ার করে বাংলা গান ছড়িয়ে দিন সারা বিশ্বের দুয়ারে। সবাইকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা।”
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫