হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের বন্ধু হোটেল ব্যবসায়ী আজাহার
Published: 22nd, February 2025 GMT
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) তখন প্রতিষ্ঠা হয়নি। দিনাজপুরের বাঁশের হাট নামক স্থানে যখন কৃষি কলেজ ছিল, তখন ভাতের হোটেল দেন মো. আজাহার আলী। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর প্রায় ৪০ বছর ধরে হোটেল ব্যবসা করা আজাহার আলী আস্তে আস্তে শিক্ষার্থীদের বন্ধু হয়ে ওঠেন।
শিক্ষার্থীরা তাকে বন্ধু বলেই ডাকেন, তিনিও তেমন। বর্তমানে তার হোটেলটি হাবিপ্রবি সংলগ্ন মহাবলীপুর মোড়ে।
সকাল হয়েছে, খাবার খেতে হবে। আবাসিক হল ও মেসের শিক্ষার্থীরা চলে যান বন্ধু আজাহার আলীর হোটেলে। সেখানে তারা ভাত, ডাল, আলু ভর্তা, সবজি, ডিমের তরকারি আর রুটি খেতে পারেন সাশ্রয়ী মূল্যে।
দুপুরের জন্য তিনি রান্না করেন নিজ হাতে কেনা টাটকা রুই, কাতল, টাকি, শোল আর নদী থেকে ধরা নানা পদের ছোট মাছের তরকারি। তবে প্রতিদিনই সব মাছ পাওয়া যায় না। একেকদিন রান্না করেন একেক রকম মাছ। যাতে শিক্ষার্থীরা একই মাছ খেতে খেতে বিরক্ত না হন। মাছের সঙ্গে থাকে ব্রয়লার মুরগি, গরুর মাংস, ডিম ডালের তরকারি, ভর্তা ও সবজি।
তার হোটেলে ৫০ টাকা প্লেটে পাওয়া যায় ছোট মাছ। তবে কেউ যদি বলেন, বন্ধু ৩০ টাকার ছোট মাছ দিও। তিনি দিয়ে দেন নির্দ্বিধায়। রুই, কাতলা ৫০ টাকা করে হলেও আকারে একটু ছোট মাছগুলো বিক্রি হয় ৪০ টাকা দরে। গরুর মাংস ১০০ টাকায় তিন টুকরা এবং পরে অতিরিক্ত ঝোলের সঙ্গে তিনি দেন আরো একটি ছোট টুকরা। মুরগী বিক্রি করেন ৫০ টাকা বাটি। আর ২৫ টাকায় বিক্রি করেন ডিমের তরকারি, সঙ্গে ডাল ফ্রি। রাতের খাবারে জন্য তার হোটেলে থাকে ভাত, মাছ, মুরগি, সবজি আর ভর্তা।
ভাত খেয়েছেন, হঠাৎ পকেটে দেখেন মানিব্যাগ নেই কিংবা মানিব্যাগ থাকলেও তাতে টাকা নেই। সমস্যা নেই, শিক্ষার্থীরা ‘বন্ধু পরে দিচ্ছি’ বলে চলে যান। তার স্বভাবসুলভ উত্তর, ‘ঠিক আছে বন্ধু, পরে মনে করে দিয়ে যেও।’
শিক্ষার্থীরা তাকে কেনই বা বন্ধু বলবেন না। আজহার আলী তাদের কোন শর্ত ছাড়াই নিয়মিত বাকি খাওয়ান। তবে বাকি খাওয়া শিক্ষার্থীদের অনেকেই আবার টাকা দেন না।
রাইজিংবিডির পক্ষ থেকে বন্ধুকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, যারা টাকা দেয় না, তাদের থেকে টাকা আদায় করতে কখনো কি কোনো পদক্ষেপ নিয়েছিলেন? বন্ধু জবাবে বলেন, “দেখো বন্ধু, কিসের পদক্ষেপ নেব। টাকা নেই, দেয়নি। টাকা থাকলে তো অবশ্যই দিত।”
তিনি বলেন, “শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আমার টাকা মারি খাবে না। ওই বহুতদিন পরে হলেও টাকা দেয়। অনেকেই আছে, খোঁজ নিয়ে আমার বিকাশ নাম্বার সংগ্রহ করে টাকা পাঠায় দেয়। কারো কাছে আবার টাকা পাব না, সেও আমাকে খরচ করার জন্য ১-২ হাজার টাকা পাঠায় দেয়।”
একগাল হেসে “সবই খোদাতায়ালার হুকুম বন্ধু, তুমি আমি কিছু না,” যুক্ত করেন আজহার।
বন্ধুর হোটেলটির বেড়া দেওয়া হয়েছে বাঁশ দিয়ে, উপরে টিনের চালা। হোটেলের একপাশে অন্য মালিকের ঘরের ইটের দেয়াল থাকায় সেদিকে বেড়া নেই। শীতের বাতাস ঠেকাতে টানিয়েছেন সিমেন্টের বস্তা। বাঁশের বেড়া দেওয়া এ হোটেলে শুধু শিক্ষার্থীরা না, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মককর্তারাও খেতে আসেন।
হাবিপ্রবির মার্কেটিং বিভাগের ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মেহেদী মিনহাজ রাইজিংবিডিকে বলেন, “বন্ধুর হোটেলে শুধু খাবার খেতে যায় না। সেখানে তার হাসিমাখা মুখও দেখতে যায়। বন্ধু যেমন ভালো মানের খাবার পরিবেশন করেন, তেমনি সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহারও করেন। তার হোটেলে বিভিন্ন রকমের খাবার পাওয়া যায়। আমরা বন্ধুরা মিলে ক্ষুধাতুর পেটে তার হোটেলে এসে নিজেদের তৃপ্ত করি। তিনি এভাবেই আমাদের বন্ধু হয়ে থাকুক। তার সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করি।”
ঢাকা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র তরক র হ র আল বন ধ র আজ হ র
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৩৫ কিলোমিটারজুটে যানজট
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার নিমশার থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটারজুড়ে যানজট দেখা দিয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকেরা। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি কাভার্ড ভ্যান উল্টে যাওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে এ যানজট দেখা দেয়।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার ভোরে মহাসড়কে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার নূরীতলা এলাকায় একটি কাভার্ড ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। ফেনী থেকে রেকার এনে কাভার্ড ভ্যানটি উদ্ধারের কাজ শুরু করে পুলিশ।
সকাল সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়কে যানজট দেখা গেছে।
ঢাকাগামী রয়েল পরিবহনের চালক রমিজ উদ্দিন বলেন, সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা করে বুড়িচংয়ের নিমশার বাজারে যানজটে এক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে। ৫ মিনিট গাড়ি চললে ২০ মিনিট বসে থাকতে হয়। এভাবে ১০টা ৪০ মিনিটে চান্দিনায় পৌঁছেছি। এ সময়ে ঢাকার কাছাকাছি থাকার কথা ছিল।
নিমশার বাজারে আটকে থাকা প্রাইভেট কারের যাত্রী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভোর থেকে যানজট অথচ সড়কে হাইওয়ে পুলিশ দেখছি না।
ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুহুল আমিন বলেন, মহাসড়কের নূরীতলা এলাকায় উল্টে কাভার্ড ভ্যানটি আড়াআড়িভাবে পড়ে ছিল। পরে ঢাকামুখী লেনের বেশ কিছু গাড়ি উল্টো পথে ঢোকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফেনী থেকে ক্রেন এনে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।
হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিওনের পুলিশ সুপার অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খাইরুল আলম সমকালকে বলেন, দুর্ঘটনার কারণেই যানজট দেখা দিয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত কাভার্ড ভ্যানটি উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে।