চট্টগ্রাম নগরে ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজারের একটি রিয়াজউদ্দিন বাজার। পাইকারি-খুচরা মিলিয়ে অন্তত ৫০টি দোকানে সয়াবিন তেল বিক্রি হয় এখানে। গত দুই দিন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ দোকানে বোতলজাত সয়াবিনের সংকট রয়েছে। যেসব দোকানে আছে, সেখানেও নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে। একই চিত্র দেখা গেছে নগরের বহদ্দারহাট, চকবাজার, কাজির দেউড়ি বাজারেও। রোজাকে সামনে রেখে খুচরা পর্যায়ে এখনো বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ বাড়ায়নি কোম্পানিগুলো।

দেশে বোতলজাত তেলের এই সংকট অনেক দিন ধরে চলছে। গত নভেম্বরে সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছিল। এরপর গত ৯ ডিসেম্বর সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে আট টাকা বাড়িয়ে ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। শুল্ক-কর কমানোর পরও সংকট কাটেনি। বাজারে সংকট থাকলেও বিপুল পরিমাণ সয়াবিন তেল আমদানির তথ্য রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে, জানুয়ারি মাসে ১ লাখ ১৭ হাজার টন সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে।

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানিগুলো বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ করছে না। তবে ভিন্ন তথ্য বলছে সরকারি সংস্থাগুলো। বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়ে বোতলজাত সয়াবিন মজুতের প্রমাণ পেয়েছে তারা। তাদের ভাষ্য, কোম্পানিগুলো এখন সরবরাহ বাড়িয়েছে। তবে কিছু ব্যবসায়ী নিজেরা সয়াবিন মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন। দোকানিরা ১৭৫ টাকার সয়াবিন ২০০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ ক্রেতাদের।

বাজারে সংকট, দাম বেশি

চট্টগ্রাম নগরের অধিকাংশ খুচরা দোকানে এক ও দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন প্রায় নেই বলা চলে। গুটিকয়েক দোকানে তেল পাওয়া গেলেও দাম চাওয়া হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। আবার এসব তেলের গায়ে নির্ধারিত মূল্যও মুছে দেওয়া হচ্ছে। ক্রেতারা জানিয়েছেন, যেখানে ৫ লিটার বোতলজাত তেল ৮৫০ টাকা হওয়ার কথা, সেখানে দোকানিরা দাম চাইছেন এক হাজার টাকা।

নগরের বহদ্দারহাট ও কর্ণফুলী কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রায় দোকানে সয়াবিন তেলের বোতল নেই। থাকলেও দাম বাড়তি চাইছেন বিক্রেতারা। দোকানিদের অভিযোগ, কোম্পানিগুলো তেল দিচ্ছে না। দিলেও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই বাড়তি দামে বিক্রি করছেন তাঁরা। কোম্পানি তেল দেওয়ার কথা বললেও তেল সরবরাহ করছে না।

কর্ণফুলী কমপ্লেক্স বাজারের দোকানি মোহাম্মদ হাসিব বলেন, বাজারে এখন তেল নেই। গত সপ্তাহে তেল দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোম্পানিগুলো তেল দেয়নি। আবার তেলের সঙ্গে বাজারে কম চলে এমন পণ্য কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে।

টি কে গ্রুপের বিক্রয়কর্মী নিউটন মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, বহদ্দারহাট বাজারে আজ ১২০ কার্টন সয়াবিন তেল দিয়েছেন তিনি। এ সময় তিনি কয়েকজন দোকানিকে বাড়তি দামে তেল বিক্রি করতে দেখেছেন। তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য কিনতে বাধ্য করার অভিযোগটি সত্য নয় বলে তিনি জানান।

বহদ্দারহাট বাজারের মুহাম্মদ ফরিদুল হক বলেন, ‘একটি কোম্পানি থেকে ২০ কার্টন সয়াবিন তেল অর্ডার দিয়ে পেয়েছি মাত্র দুই কার্টন। আবার সরিষার তেল নিতে হবে, এমন শর্তে সয়াবিন দিয়েছে।’

সংকট অনেকটা ‘কৃত্রিম’

বাজারে সয়াবিন তেলের সংকটের খবরে বাজারগুলো ঘুরে দেখেছে বাজার তদারকি সংস্থাগুলো। এর মধ্যে অভিযানে গিয়ে বাজারে বোতলজাত সয়াবিনের পর্যাপ্ত মজুত দেখেছেন তারা। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বাজারের এ সংকট অনেকটা কৃত্রিম। তারা বাজারে বিভিন্ন সময় গিয়ে অধিকাংশ দোকানেই সয়াবিন পেয়েছেন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার আসন্ন রমজানের বাজার নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এক মতবিনিময় সভায় একই কথা জানানো হয়। বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, গোয়েন্দা দপ্তর থেকেও বলা হয়, বোতলজাত সয়াবিনের সংকট থাকার কথা নয়। যথেষ্ট পরিমাণে সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে।

বাজারে তেল সরবরাহকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মীরা বলছেন, তেল সরবরাহ কিছুটা কম। তবে যেটুকু সরবরাহ করা হচ্ছে, সেটিও কিছু দোকানি মজুত করে দাম বেশি নিচ্ছেন। ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রয়কর্মীরা দিচ্ছেন ৮৩৭ টাকা দরে। যেটি বিক্রি করার কথা ৮৫০ টাকায়, দোকানিরা দাম নিচ্ছেন এক হাজার টাকা।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংকট অনেকটা কৃত্রিম। আমরা বাজারে গিয়ে সয়াবিনের মজুত পেয়েছি বেশ কয়েকটি দোকানে। জরিমানা করা হয়েছে, কোম্পানিগুলোর সঙ্গেও কথা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, যাতে সয়াবিনের বাজার অস্থিতিশীল না হয়।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত ল সরবর হ সরবর হ ক

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশে আতঙ্ক-উত্তেজনা, ট্রাম্প আসলে কী চান

যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ভাইস অ্যাডমিরাল রিচার্ড কোরেল ভেবেছিলেন, দেশটির পারমাণবিক বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে তাঁর নিয়োগ নিশ্চিত হওয়া নিয়ে গত বৃহস্পতিবার শুনানি সহজভাবেই শেষ হবে। তবে তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের আগের দিন বুধবার রাত ৯টা ৪ মিনিটে সে আশা ভেঙে গেছে।

ওই সময় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে বিশ্বকে চমকে দেন। বলেন, তিনি মার্কিন বাহিনীকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা অবিলম্বে শুরু করতে বলেছেন। তাঁর যুক্তি, যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে রাশিয়া ও চীনের পেছনে থাকতে পারে না।

ট্রাম্প বলেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্রে রাশিয়া দ্বিতীয় এবং চীন বেশ দূরে তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু দেশটি পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের সমপর্যায়ে উঠে আসতে পারে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিনেটে সশস্ত্র বাহিনী কমিটির প্রায় ৯০ মিনিটের শুনানিতে ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে বারবার কোরেলকে প্রশ্ন করা হয়। ট্রাম্পের মন্তব্যে অনেক আইনপ্রণেতাই এ সময় ছিলেন বিভ্রান্ত। এ থেকে বোঝা যায়, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটন ও এর বাইরে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন।

মার্কিন কর্মকর্তারা পরিষ্কার করেননি যে ট্রাম্প পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ ব্যবস্থার পরীক্ষা করতে বলছেন, নাকি বিস্ফোরক পরীক্ষায় ৩৩ বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষ করতে চাইছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ট্রাম্পের নির্দেশ বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াতে পারে, যা শীতল যুদ্ধের ভয়ংকর স্মৃতি ফিরিয়ে আনে।

কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য সিনেটর জ্যাক রিড কোরেলকে প্রশ্ন করেন, যুক্তরাষ্ট্র আবারও পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা শুরু করলে তা কি বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বাড়াবে এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে।

কোরেল বলেন, ‘যদি আমাকে স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের (স্ট্র্যাটকম) কমান্ডার হিসেবে নিশ্চিত করা হয়, আমার কাজ হবে, পারমাণবিক পরীক্ষাবিষয়ক যেকোনো আলোচনা সম্পর্কে সামরিক পরামর্শ দেওয়া।’

ভাইস অ্যাডমিরাল কোরেলকে গত সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প স্ট্র্যাটকমের প্রধান করার জন্য মনোনীত করেন। স্ট্র্যাটকম পারমাণবিক হামলা প্রতিরোধ ও আক্রমণের সক্ষমতা নিয়ে কাজ করে। কোরেল পুরো শুনানিতে সতর্কভাবে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।

পারমাণবিক অস্ত্রে রাশিয়া দ্বিতীয় ও চীন বেশ দূরে তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু দেশটি পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের সমপর্যায়ে উঠে আসতে পারে।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

শুনানির এক পর্যায়ে স্বতন্ত্র সিনেটর অ্যাঙ্গাস কিং প্রশ্ন করেন, ট্রাম্প কি পারমাণবিক ডিভাইসের বিস্ফোরক পরীক্ষা নয়, বরং ক্ষেপণাস্ত্র বা অন্য সরবরাহ ব্যবস্থা পরীক্ষার কথা বলছেন কি না।

জবাবে কোরেল বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্টের উদ্দেশ্য জানি না, তবে এটি এমন একটি ব্যাখ্যা হতে পারে, আমি তা মেনে নিই।’

দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে গত বৃহস্পতিবার মুখোমুখি বৈঠকে যোগ দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সি চিন পিং

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিশ্বকে ১৫০ বার ধ্বংস করার মতো পারমাণবিক অস্ত্র আমাদের আছে: ট্রাম্প
  • দুই সপ্তাহের মধ্যে তেহরানে সুপেয় পানি ফুরিয়ে যেতে পারে
  • চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
  • জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন
  • বাজারে আগাম সবজি আসতে দেরি, দাম চড়া
  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
  • টমাহক কত দূরে আঘাত হানতে পারে, রাডারে কেন ধরা পড়ে না
  • সামুদ্রিক মাছে ভরপুর আড়ত, দাম কেমন
  • যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশে আতঙ্ক-উত্তেজনা, ট্রাম্প আসলে কী চান
  • ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিতে পেন্টাগনের সায়, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প