সাজেকে পুড়ে ছাই ৯৪ রিসোর্ট রেস্তোরাঁ দোকান
Published: 24th, February 2025 GMT
ভয়াবহ আগুনে ছাই হয়ে গেছে রাঙামাটির সাজেক পর্যটন কেন্দ্র। সোমবার দুপুরের এই আগুনে সেখানকার অন্তত ৯৪টি রিসোর্ট, দোকান, রেস্তোরাঁ ও বসতঘর পুড়েছে। আগুনের তীব্রতা এতটাই প্রবল ছিল, প্রায় পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় তা নিয়ন্ত্রণে আসে। দুর্গম এলাকা হওয়ায় ফায়ার সার্ভিস সাজেকে পৌঁছতে অনেক সময় লেগে যায়। কীভাবে আগুনের সূত্রপাত, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, রান্নাঘরের গ্যাস সিলিন্ডার, শর্টসার্কিট কিংবা সিগারেট থেকে আগুন লাগতে পারে।
আগুনের ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা তাৎক্ষণিক জানা যায়নি। এ ঘটনায় সাজেকে অবস্থান করা পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে সাজেকে থাকা পর্যটকদের নিরাপদে খাগড়াছড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাঘাইছড়ির সাজেক ইউনিয়নের এই পর্যটন কেন্দ্রের ইকো ভ্যালি রিসোর্ট থেকেই প্রথমে আগুনের লেলিহান শিখা দেখা যায়। পরে আগুন বাকি রিসোর্ট, দোকান ও বসতঘরে একে একে ছড়িয়ে পড়ে। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন আগুন নেভানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। বাঘাইছড়িতে ফায়ার সার্ভিস না থাকায় খবর পেয়ে খাগড়াছড়ি সদর, পানছড়ি, দীঘিনালাসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে ১১টি ইউনিট রওনা দিলেও সাজেকে পৌঁছতে প্রায় আড়াই ঘণ্টা সময় লেগে যায়। পরে বিকেল ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
সাজেক হিলভিউ রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী ইন্দ্রজিৎ চাকমা জানান, আগুন ধরার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় লোকজন নেভানোর চেষ্টা করে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয়। দীঘিনালা থেকে ফায়ার সার্ভিস আসতে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে।
সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুবর্ণ দেব বর্মণ জানান, আগুনে ৩২টি রিসোর্ট, ৩৫টি বসতঘর, ২০টি দোকানঘর ও ৭টি রেস্তোরাঁ পুড়েছে। এসব রিসোর্ট, বসতঘর, দোকান ও রেস্তোরাঁর কোনো মালপত্র রক্ষা করা যায়নি।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, সিগেরেট থেকে আগুনের সূত্রপাত। জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ইমতিয়াশ ইয়াসিন এক প্রেস বার্তায় জানিয়েছেন, শর্টসার্কিটের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। এতে পর্যটন কেন্দ্রের একপাশে পুড়ে যায়।
খাগড়াছড়ি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক মোহাম্মদ জাকের হোসেন জানান, বিকেল ৫টার দিকে নিয়ন্ত্রণে এলেও আগুন যাতে অন্যত্র ছড়াতে না পারে, সে জন্য আশপাশে পানি ছিটানো হয়েছে। সাজেক পর্যটন কেন্দ্র পাহাড়ের ওপর হওয়ায় পানি নিয়ে সংকটে পড়তে হয়েছে। কীভাবে আগুনের সূত্রপাত– এখনই বলা যাচ্ছে না।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার বলেন, ধারণা করছি, শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, সাজেকে সাময়িক সময়ের জন্য পর্যটক প্রবেশ বন্ধ রাখার অনুরোধ করা হয়েছে। প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ
রাজধানী ঢাকা থেকে ছুটিতে পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন হাবিবুল আউয়াল। ভালো হোটেলে রুম না পাওয়ায় শহরের কলাতলী এলাকায় মধ্যমমানের একটি আবাসিক হোটেলে উঠেছেন। তাঁর কাছে এক রাতের জন্য হোটেলটির দুটি রুমের ভাড়া নেওয়া হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। যদিও অন্য সময়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকায় এই মানের হোটেলে রুম ভাড়া পাওয়া যায়। ঈদ মৌসুমে চাহিদা বাড়ায় অন্য সময়ের তুলনায় ১২ গুণের বেশি ভাড়া নেওয়া হয়েছে তাঁর কাছ থেকে।
কোরবানির ঈদ ও পরবর্তী ছুটির সময়ে অতিরিক্ত পর্যটক আসায় কক্সবাজার শহর ও এর আশপাশের পাঁচ শতাধিক আবাসিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টের প্রায় প্রতিটিতেই অন্য সময়ের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। শুধু আবাসিক হোটেল নয়, রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে পর্যটনসংশ্লিষ্ট সব সেবা খাতেই অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, প্রতিটি ছুটির মৌসুমে কক্সবাজারে পর্যটকদের সংখ্যা একটু বাড়লেই তাদের কাছ থেকে ‘গলাকাটা’ টাকা নেওয়া হয়।
ঈদুল আজহার লম্বা ছুটি শেষ হচ্ছে আজ। গতকাল শুক্রবার কক্সবাজার সৈকতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় ছিল পর্যটকের ভিড়। সাগরতীর পরিণত হয়েছিল উৎসবের বেলাভূমিতে। শুক্রবার সকাল থেকে তীব্র গরম থাকলেও পর্যটকে পূর্ণ ছিল কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট, লাবণী, কলাতলী, হিমছড়ি, ইনানী, পাতুয়ারটেক থেকে মেরিন ড্রাইভ পর্যন্ত পুরো এলাকা।
রাজধানীর মতিঝিল থেকে ঘুরতে আসা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এখন সমুদ্রে গোসল করছি। বিকেলে মেরিন ড্রাইভে ঘুরব, এরপর শনিবার রাতে ঢাকায় ফিরে যাব।’ নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা আসিফ আহমেদ বলেন, ‘অনেক মানুষ, তবুও পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দ করছি, ছবি তুলছি, বিচ বাইক ও ঘোড়ায় চড়েছি।’
কক্সবাজার শহরের পাঁচতারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ নুর সোমেল সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার পর্যন্ত তাদের হোটেলের ৭০-৮৫ শতাংশ রুম বুকিং রয়েছে। যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক হোটেল ব্যবসায়ী জানান, ১৩ জুন পর্যন্ত অধিকাংশ আবাসিক হোটেল সম্পূর্ণ বুকিং হয়ে গেছে। তবে প্রশাসন, কর ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের ফাঁকি দিতে তারা বিষয়টি স্বীকার করতে চান না।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের এএসপি নিত্যানন্দ দাস বলেন, এবার কোরবানির ঈদের পর গত সাত দিনে আট লাখের বেশি মানুষ কক্সবাজার ভ্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, অতীতের মতো এবারও শহর ও সমুদ্রসৈকতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সৈকতের প্রতিটি গোলঘরে সার্বক্ষণিক পুলিশের অবস্থান এবং মোবাইল টিমসহ কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পর্যটন স্পটগুলোতে সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা।
আবাসিক হোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে এএসপি জানান, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গত কয়েকদিন এমন পাঁচটি অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহিদুল আলম বলেন, পর্যটকদের হয়রানি রোধে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত মাইকিং করা হচ্ছে।