দেশের বাজারে ‘লাইভ ব্রয়লার’ জবাই করে মাংস খাওয়ার যে প্রচলন, তা উন্নত দেশে বিরল। আশার কথা, উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ব্রয়লার মুরগির হিমায়িত বিভিন্ন কাটআপ যেমন ব্রেস্ট, লেগ, ড্রামস্টিক, উইংস এবং পুরো ড্রেসড মুরগি সুপারশপ ও বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এখন পাওয়া যাচ্ছে। এসব পণ্যের পাশাপাশি পোলট্রি কারকাস আধুনিক প্রসেসিং প্রক্রিয়ায় ‘রেডি-টু-কুক’ এবং ‘রেডি-টু-ইট’ বিভিন্ন ফ্রোজেন প্রডাক্টস উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে। যার মধ্যে সসেজ, নাগেট, মিটবল ও বার্গার-প্যাটিস জনপ্রিয়।
কর্মব্যস্ত মানুষ তাদের খাবার তৈরির ঝামেলা কমাতে দিন দিন ফ্রোজেন আইটেমের দিকে ঝুঁকছে। তরুণ ও মধ্যবয়সীদের কাছে ফাস্টফুডের চাহিদা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে বিধায় অদূর ভবিষ্যতে দেশে ব্রয়লার মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের ভালো সম্ভাবনা আছে। মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর কাজ। মুরগির প্রক্রিয়াজাতকরণ প্লান্টে ঠান্ডা পানি (প্রায় ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস) দিয়ে পোলট্রি কারকাস ঠান্ডা করা হয়। ফলে কারকাসের জীবাণুর পরিমাণ হ্রাস পায়। আবার কম তাপমাত্রায় কমপক্ষে ৪ ঘণ্টা এইজিং সময় পার করার পর মুরগির হাড় থেকে মাংস আলাদা বা বিভিন্ন অংশের কাটআপ করা হয়। ফলে রিগর মর্টিসের (প্রাণীর মৃত্যুর কারণে পেশি সংকোচন) সময় চলে যায় এবং এই মাংস রান্না করলে নরম ও রসালো হয়।
বাংলাদেশ পোলট্রি উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলেও নিরাপদ মাংস সরবরাহ চেইনে অনেক পিছিয়ে। এটি করতে হলে দরকার পোলট্রি উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে মান নিয়ন্ত্রণ ও ইন্সপেকশন পদ্ধতির যুগোপযোগী গাইডলাইন। নিরাপদ পোলট্রি উৎপাদনের জন্য খামারি, ডিলার এবং এজেন্টদের ট্রেনিং ও মোটিভেশনাল অ্যাপ্রোচ জরুরি। পোলট্রি প্রসেসিং শিল্পের জন্য দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টিতে শিক্ষা, নতুন নতুন পণ্য তৈরির জন্য গবেষণা ও ইন্ডাস্ট্রি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন এখন সময়ের দাবি। প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উৎপাদনের বিভিন্ন উপকরণ যেমন– ফসফেট, নাইট্রেট, নাইট্রাইট, কিউর অ্যাডজাঙ্কট, নন-মিট প্রোটিন, পলিস্যাকারাইড, এনজাইম-সিজনিংস ইত্যাদি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় বিধায় ডলারের উচ্চমূল্য, ব্যবসায়ীদের এলসি সমস্যা এবং জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিজনিত কারণে ছোট ছোট কারখানা শুল্কমুক্ত কোটায় আমদানি করতে পারছে না। ফলে প্রায় সব উপকরণের দাম বেড়ে যাচ্ছে এবং সংগ্রহ করতে সমস্যা হচ্ছে। অন্যদিকে প্যাকেজিং বা মোড়ক পণ্য এবং বিভিন্ন উপকরণ আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিলে এ শিল্পের রপ্তানি দ্বিগুণ করা সম্ভব। বাংলাদেশ সরকারের বিএসটিআই, সায়েন্স ল্যাবরেটরি এবং নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা মাঝেমধ্যে কারখানা পরিদর্শনে এসে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি পেলে উদ্যোক্তাদের জরিমানা করেন। এ ক্ষেত্রে তারা ত্রুটি চিহ্নিত করার পর তা সংশোধনে উদ্যোক্তাদের যদি সময় বেঁধে দেন এবং সেই সময় পর আবার কারখানা পরিদর্শন করে যাচাই করেন, তাহলে এসব কারখানা এগিয়ে যাবে। পাশাপাশি বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তুলতে হবে।
পোশাক রপ্তানি খাতের মতো এ শিল্পকে প্রায়োরিটি দিতে হবে। অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র কারখানাগুলো টিকিয়ে রাখার জন্য যা করা যেতে পারে– সরাসরি প্রণোদনা না দিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা, রপ্তানি বাণিজ্য ধরার জন্য সহযোগিতা করা, রপ্তানি আয় বাড়াতে নানামুখী মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া, নির্দিষ্ট কিছু ফুড আইটেম যেমন– সসেজ, নাগেট বা মিটবলের মধ্যে না থেকে প্রডাক্ট ডাইভার্সিফায়েড করা, কোন দেশে কোন ধরনের খাদ্যপণ্যের চাহিদা কী তা জানা, দেশের নিজস্ব দূতাবাস ও মিশনগুলোকে এ কাজে এগিয়ে আসতে হবে।
আমরা এ শিল্পে প্রতিনিয়ত শিখছি। সঠিক প্রযুক্তি নির্বাচন, প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা, উন্নত ব্যবস্থাপনা, দীর্ঘমেয়াদি নীতি ও পরিকল্পনা প্রণনয়ই কেবল এ শিল্পের সহায়ক হতে পারে।
ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
বিচারিক পদ সৃষ্টিতে কমিটি গঠনের বিধান রেখে জুডিশিয়াল সার্ভিস গঠন বিধিমালার প্রজ্ঞাপন জারি
জুডিশিয়াল সার্ভিসে পদ সৃষ্টিতে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতির সভাপতিত্বে পদ সৃজন কমিটি গঠিত হবে, এমন বিধান রেখে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস গঠন বিধিমালা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন ও বিচার বিভাগ থেকে সোমবার রাতে ‘বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস গঠন বিধিমালা, ২০২৫’ শিরোনামে এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
বিধিমালার ৫ বিধিতে সার্ভিসের পদ সৃজন বিষয়ে বলা হয়েছে। ৫(১) উপবিধি অনুসারে, বিচারিক পদ সৃজনের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের কর্মে জ্যেষ্ঠ বিচারপতির সভাপতিত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন, হাইকোর্ট বিভাগের দুজন বিচারপতি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ এবং আইন ও বিচার বিভাগের সচিব/সিনিয়র সচিবদের সমন্বয়ে বিচারিক পদ সৃজন কমিটি গঠিত হবে। ওই পদ সৃজনের ক্ষেত্রে কমিটির সুপারিশ চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
৫(২) উপবিধিতে বলা হয়েছে, সার্ভিসের পদ সৃজনের ক্ষেত্রে বিচারিক পদ সৃজনের ক্ষেত্রে বিচারিক পদ সৃজন কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে আইন ও বিচার বিভাগ রাষ্ট্রপতির কাছে সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করবে এবং অনুমোদিত সারসংক্ষেপ অনুযায়ী চূড়ান্ত আদেশ জারি করবে।
এর আগে ২০০৭ সালের ১৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (সার্ভিস গঠন, সার্ভিস পদে নিয়োগ এবং সাময়িক বরখাস্তকরণ, বরখাস্তকরণ ও অপসারণ) বিধিমালা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়।
‘বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস গঠন বিধিমালা, ২০২৫’ শিরোনামে সোমবার রাতে জারি করা প্রজ্ঞাপনের ৩ বিধিতে সার্ভিস গঠন বিষয়ে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (সার্ভিস গঠন, সার্ভিস পদে নিয়োগ এবং সাময়িক বরখাস্তকরণ, বরখাস্তকরণ ও অপসারণ) বিধিমালা, ২০০৭–এর অধীন গঠিত বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস এই বিধিমালার অধীন গঠিত হয়েছে বলে বিবেচিত হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিচারিক পদ সৃজনের ক্ষেত্রে কমিটি গঠন বিধিমালাটির অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি দিক। অধস্তন আদালতের বিচারিক পদ সৃজনের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক যে জটিলতা ছিল, তা এই বিধিমালার মাধ্যমে দূর হবে বলে মনে করি। জুডিশিয়াল সার্ভিস গঠন বিধিমালা ২০২৫ বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক উৎকর্ষে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।’