সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ২৭টি ব্যাংক হিসাবের ১৪০ কোটি টাকা অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছে আদালত। দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) এ আদেশ দেন।

আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় আনিসুল হককে আদালত গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দিয়েছেন গত ২০ জানুয়ারি। গত ১ জানুয়ারি আনিসুল হকের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন দুদকের উপ পরিচালক মো.

জাহাঙ্গীর আলম। মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২০ মার্চ দিন ধার্য রয়েছে।

মামলায় আনিসুল হকের বিরুদ্ধে অসাধু উপায়ে আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ১৪৬ কোটি ১৯ লাখ ৭০ হাজার ৯৬ টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নিজ নামে ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে ২৯টি ব্যাংক হিসাবে ৩৪৯ কোটি ১৫ লাখ ২১ হাজার ৫৮২ টাকা জমা ও ৩১৬ কোটি ৪৮ লাখ ৮১ হাজার ৬০৮ টাকা উত্তোলনসহ মোট ৬৬৫ কোটি ৬৪ লাখ ৩ হাজার ১৯০ টাকা সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন।

এই অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারাসহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ (২) ও ৪(৩) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

আবেদনে বলা হয়েছে, আনিসুলের অবৈধ পথে অর্জিত অস্থাবর সম্পদ জায়গায় হস্থান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করারও চেষ্টা করছেন বলে দুদক জেনেছে।

দুদকের ভাষ্য, অনুসন্ধান কাজ শেষ হওয়ার আগেই বসম্পদ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে পরবর্তীতে টাকা উদ্ধার করা কঠিন হয়ে যাবে।

সেজন্য আনিসুলের নামে থাকা ২৭টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা জরুরি বলে আবেদনে জানিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা দুদক।

সরকার পতনের পর ১৩ আগস্ট সদরঘাট থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে আনিসুল হককে গ্রেপ্তার করার তথ্য জানিয়েছিল ঢাকার পুলিশ।

বর্তমানে তিনি কারাগারে আটক আছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হত্যার ঘটনায় করা মামলায় সালমানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সে সব মামলায় তাকে দফায় দফায় রিমান্ডেও নেওয়া হয়।

ঢাকা/মামুন/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ