রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই ভাই-বোনকে চাকরি দেওয়ার কথা দিয়ে ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন পবা উপজেলার মাসকাটাদীঘি এলাকার জিয়ারুল ইসলাম। আজ মঙ্গলবার দুপুরে নগরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে মনিরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি জিয়ারুলের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছেন।

ভুক্তভোগী মনিরুল ইসলামের বাড়ি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সারদা এলাকায়। সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম বলেন, তিনি রাজশাহী কলেজ থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। তাঁর বোন কাফেলা খাতুন একই কলেজের ইংরেজি বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। পড়াশোনার পর থেকে তাঁরা বেকার।

জিয়ারুলের বোনের বাড়ি তাঁদের গ্রামে। মাঝেমধ্যে জিয়ারুল তাঁর বোনের বাড়িতে আসতেন। তখন পরিচয় হলে জিয়ারুল তাঁকে জানান, তিনি টাকা দিলে তাঁদের (দুই ভাই-বোন) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকশন অফিসার পদে চাকরি নিয়ে দেবেন। এই প্রলোভন দেখিয়ে ২০২২ সালের ১৫ জানুয়ারি ৪৫ লাখ টাকা নেন জিয়ারুল। কিন্তু তিনি দীর্ঘ তিন বছরেও তাঁদের চাকরি দেননি।

লিখিত বক্তব্যে মনিরুল ইসলাম বলেন, টাকা নেওয়ার বিপরীতে জিয়ারুল তাঁকে দুটি চেক দিয়েছিলেন। এর মধ্যে জিয়ারুলের নাফি নিহান ফার্মেসির নামে পূবালী ব্যাংকের একটি চেকে ২৫ লাখ এবং আরেকটি চেকে ২০ লাখ টাকা লিখে দেন তিনি। চাকরি দিতে না পারলে এই চেকের মাধ্যমে মনিরুল ও কাফেলার টাকা তুলে নেওয়ার কথা ছিল। চাকরি না হওয়ায় তাঁরা চেক দুটি ভাঙাতে গিয়ে দেখেন, ওই ব্যাংক হিসাবে কোনো টাকা নেই। এখন নানা চেষ্টার পরেও টাকা আদায় করতে পারছেন না।

জিয়ারুলকে ফোন করলে বেশির ভাগ সময় তিনি ধরেন না। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি ওই দলের প্রভাবে চাকরি নিয়ে দেবেন জানিয়েছিলেন। এখন বলছেন, তাঁর কাছ থেকে কেউ টাকা আদায় করতে পারবেন না।

সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, ২০ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর আদালত চত্বরে হঠাৎ জিয়ারুলের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। তখন জিয়ারুল পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় মনিরুল ও তাঁর সঙ্গে থাকা আত্মীয়রা তাঁকে ধরে ফেলেন এবং আদালত চত্বর থেকে বাইরে নিয়ে গিয়ে টাকা চান। পরে টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি থানায় গিয়ে উল্টো অপহরণের মামলা করে হয়রানি করছেন।

মুঠোফোনে জানতে চাইলে জিয়ারুল ইসলাম দাবি করেন, তিনি চাকরি দেওয়া চক্রে জড়িয়েছিলেন, এটা ঠিক। এই চক্রের মূল হোতা নাহিদ নামের এক ব্যক্তি। এই নাহিদকে তিনি চাকরিপ্রার্থী জোগাড় করে দিতেন। চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে বাড়তি যে টাকা আদায় হবে, সেটি তাঁর লাভ হবে, এ রকম চুক্তি ছিল। কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী তিনি জোগাড় করে দেন। চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার সময় নাহিদ কৌশলে তাঁদের তাঁর (জিয়ারুলের) চেক স্বাক্ষর করা ও স্ট্যাম্প দিয়েছেন। এতে তিনি ‘ফেঁসে’ গেছেন। বাস্তবে তিনি লাভবান হননি।

জিয়ারুল ইসলাম দাবি করেন, তবে তাঁর মোট সাতটি চেক নাহিদের কাছে দেওয়া আছে। আরও মামলা হলেও তিনি অবাক হবেন না। তবে যাঁরা সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তাঁরা নাহিদেরই লোক বলে তিনি দাবি করেন। জিয়ারুল বলেন, তাঁরা টাকা আদায় করতে আদালত চত্বর থেকে তাঁকে তুলে নিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে তিনি নাহিদসহ চারজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন।

নগরের রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে টাকাপয়সা নিয়ে বিরোধ আছে। এটা নিয়ে আদালতে মামলাও চলমান। জিয়ারুল থানায় মামলা করেছেন যে তাঁকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। মামলাটি তদন্তাধীন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ কর প র র থ কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

খাদি কাপড়ের জিআই স্বীকৃতিতে আনন্দে ভাসছেন কুমিল্লাবাসী

কুমিল্লার ঐতিহ্যের স্মারক খাদি কাপড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় আনন্দিত জেলার মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন, অবশেষে পেয়েছেন সেই সুখবর। গতকাল বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে স্বীকৃতির এই সনদ দেওয়া হয়।

কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় এলাকার রামঘাটলা থেকে শুরু করে রাজগঞ্জ পর্যন্ত অন্তত ৩০০ খাদি পোশাকের দোকান। কান্দিরপাড়ের খাদি বসুন্ধরা দোকানের স্বত্বাধিকারী জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, শৈল্পিক ছোঁয়ায় কুমিল্লার খাদি এখন দেশ-বিদেশে বেশ সমাদৃত। ঐতিহ্যের খাদিতে এখন লেগেছে আধুনিকতা ও নান্দনিকতার ছোঁয়া। শত বছরের বেশি পুরোনো খাদির আরও অনেক আগেই জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়া উচিত ছিল। অবশেষে স্বীকৃতি মিলেছে, এতেই আনন্দিত সবাই।

একই এলাকার খাদি জ্যোৎস্না স্টোরের মালিক তপন পাল বলেন, ‘কুমিল্লার প্রতিটি মানুষ খাদির এমন স্বীকৃতিতে আনন্দিত। শত বছর পার হলেও এখনো দেশ-বিদেশে খাদি কাপড়ের ব্যাপক চাহিদা।’

কুমিল্লার ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধীর ডাকে সমগ্র ভারতবর্ষে অসহযোগ আন্দোলনের সময় কুমিল্লায় খাদিশিল্প প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ওই সময় বিদেশি পণ্য বর্জন করার জন্য আওয়াজ ওঠে। সর্বত্র এক আওয়াজ ‘মোটা কাপড়-মোটা ভাত’। সে সময় ভারতবর্ষের মানুষ দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে খাদি পোশাক ব্যবহার শুরু করেছিলেন। খাদের (গর্তে) চরকায় বসে এ কাপড় তৈরি করা হয় বলে এর নামকরণ হয় ‘খাদি’। শুরুতে মহাত্মা গান্ধী নিজেও কুমিল্লায় এসে খাদের চরকায় বসে খাদি কাপড় তৈরিতে উৎসাহ দেন।

এই গবেষক আরও বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ভারত পৃষ্ঠপোষকতা প্রত্যাহার করে নিলে কুমিল্লার খাদিশিল্প সংকটে পড়ে। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হাল ধরেন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) প্রতিষ্ঠাতা আখতার হামিদ খান।

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার বলেন, জেলা প্রশাসনের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় গত বছর কুমিল্লার রসমালাই জিআই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কুমিল্লার খাদি ও বিজয়পুরের মৃৎশিল্পের জিআই স্বীকৃতির জন্য তখন থেকেই কাজ শুরু হয়। কুমিল্লার ‘ব্র্যান্ড’ হিসেবে পরিচিত তিনটি পণ্যের মধ্যে দুটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। যে একটি বাকি আছে, সেটিও দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বীকৃতি পাবে বলে তিনি আশাবাদী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ