রমজান মাসে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা উচিত। কারণ, এ সময় আপনার শরীর দীর্ঘসময় ধরে ক্ষুধার্ত থাকে। তাই রমজান মাসে আপনি কী খেতে পারেন আর কী খেতে পারেন না– তার দিকে নজর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
আসুন জেনে নেওয়া যাক রোজায় কীভাবে সুস্থ থাকা যায়।
প্রথমত, রমজান মাসে বাংলাদেশে প্রচলিত খাবারগুলো বেশির ভাগ তেলে ভাজা ও গুরুপাক হয়। যেমন– পিঁয়াজু, বড়া, বেগুনি, ডিমের বড়া ইত্যাদি। এ ছাড়া অনেক জায়গায় ইফতারে বিরিয়ানির মতো খাবারের প্রচলন রয়েছে। এগুলো নিয়মিত অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। ফলে শরীর ডিহাইড্রেট হওয়ার পাশাপাশি মুখ শুকিয়ে যাবে, তৃষ্ণা অনুভূতি হবে এবং মাথাব্যথার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ইফতার থেকে শুরু করে সেহরি পর্যন্ত পর্যাপ্ত পানি ও পানিযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে ভুলবেন না। এছাড়া ইফতারের শুরুতে সহজ ও নরম খাবার গ্রহণ করুন। এতে সারাদিন রোজা রাখার পর পরিপাকতন্ত্রে কোনো গোলযোগ সৃষ্টি করবে না।
দ্বিতীয়ত, সারাদিন রোজা রাখার পর অনেকেই খাবার পেয়ে সব খাবার একসঙ্গে খেতে শুরু করেন, যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। খুব তাড়াতাড়ি খাবার হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ধীরে ধীরে পরিমিত পরিমাণে খাবার গ্রহণ করুন।
তৃতীয়ত, রমজানে আমরা খাবার সময় পাই দিনরাতে তিনবার। অল্প সময়ে অধিক খাবার গ্রহণ করলে, খাবার হজম করতে যেমন কষ্টকর হয়, তেমনি এটি স্বাস্থ্যের ওপর বিশাল প্রভাব পড়বে। এটি হরমোনের ভারসাম্য, ওজন বৃদ্ধি ও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
চতুর্থত, অনেকেরই বিভিন্ন রোগ থাকে। রমজানে রোজা রাখার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে রোজা রাখবেন এবং খাবার নিয়ে সচেতন থাকবেন। বিশেষ করে ডায়াবেটিক রোগী, উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা, অন্তঃসত্ত্বা নারী, আর্থ্রাইটিসজনিত সমস্যা, আইবিএস ইত্যাদি। ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবেন এবং মেডিসিন এবং ইনসুলিন ডোজ ঠিক রেখে রোজা রাখবেন।
উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগীরা অতিরিক্ত ভাজাপোড়া, লবণাক্ত খাবার, সসজাতীয় খাবার গ্রহণ করবেন না। সুষম সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ করুন। খাবারের তালিকায় মাছ, ডাল, শাকসবজি, ফল, বাদামকে গুরুত্ব দিন। এ ছাড়া খাবারের সালাদকে গুরুত্ব দিন।
অন্তঃসত্ত্বা নারী
রমজানে অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা চিকিৎসকের পরামর্শে রোজা রাখুন।
কিডনি রোগী
কিডনিতে আক্রান্ত ব্যক্তি ডাল ও ডালের তৈরি খাবারগুলো এড়িয়ে চলুন। বিশেষ করে রোজায় বেসন দিয়ে বড়া, হালিম, ডালের বড়া ইত্যাদি। লবণাক্ত খাবার, শাকসবজি, ফল ও পানির ব্যাপারে সতর্ক হোন।
বয়স্ক রোগী
পরিবারে অনেক বয়স্ক ব্যক্তি আছেন। তাদের খাদ্যতালিকায় নরম, পাতলা, সহজপাচ্য খাবার যেমন স্যুপ, হালিম, দুধ দিয়ে সুজি, সেমাই খাবার দিন। ভাজাপোড়া খাবার পরিমিত খাবেন। আইবিএস ব্যক্তিরাও এ ধরনের খাবার খেতে পারেন। দুধজাতীয় খাবারে সমস্যা হলে দুধের পরিবর্তে পানি দিয়ে সুজি, সেমাই খেতে পারেন কিংবা ল্যাকটোজমুক্ত দুধ হাতের কাছে থাকলে তা দিয়ে খেতে পারেন। প্রতিদিন একটি ডিম সেদ্ধ, কলা, পাকা পেঁপে, খেজুর দিয়ে ইফতার করবেন।
সতর্কতা
১.
২. অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার গ্রহণ করবেন না।
৩. অতিরিক্ত চা বা কফি পান করবেন না। বিশেষ করে সেহরিতে। এটি প্রস্রাবের উৎপাদন বৃদ্ধি করে; যার ফলে খনিজ পদার্থের ক্ষয় হবে।
৪. মাসজুড়ে সুষম বৈচিত্র্যময় খাবার গ্রহণ করুন। ফলমূল, শাকসবজি গ্রহণ করুন। লাল মাংস, মাছ, মুরগি, ডাল পরিমিত গ্রহণ করুন। চর্বিহীন দুধ বা টকদই গ্রহণ করুন। জটিল কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার যেমন গোটা শস্য, বাদামি স্টার্চযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন। বাদাম, কিশমিশ, খেজুরের মতো শুকনো খাবার গ্রহণ করুন পরিমাণমতো।
৫. কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমান। তারাবির পর একটু বিশ্রাম নিন। এতে শরীরের ক্লান্তি দূর হবে।
৬. যারা নিয়মিত নামাজ, তারাবির নামাজ আদায় করেন, তাদের ব্যায়ামের প্রয়োজন নেই। যারা তারাবির নামাজ পড়তে পারেন না কিংবা শারীরিক সমস্যা তারা ইফতার, সেহরিতে খাবারের পর একটু হাঁটুন। v
লেখক: পুষ্টিবিদ, রাইয়ান হেলথ কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, দিনাজপুর
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: রমজ ন র পর ম পর ম ণ করব ন রমজ ন ইফত র সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।